হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) অলি-আল্লাহ্গণের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে বেলায়েত অর্জনে আধ্যাত্মিক সাধনা ও ইবাদতের অংশ মনে করিতেন। এই জন্য তিনি যেইখানে যাইতেন, কোন অলির মাজারের সন্ধান পাইলে উহা জিয়ারত না করিয়া ছাড়িতেন না। তবে, তাঁহার মাজার জিয়ারত স্বাভাবিক নিয়মে সম্পন্ন হইত না। সাধারন ভাবে দোয়া-দরূদ পাঠ করিলেও কোন না কোন অলৌকিক ঘটনার মধ্যদিয়া তাঁহার জিয়ারত সম্পন্ন হইত। অবিভক্ত বাংলায় হযরত আমানত শাহ্র নাম অতি সম্মানের সাথে স্মরনীয় এবং চট্টগ্রামে তাঁহার মাজার অবস্থিত। হযরত আমানত শাহ্র মাজারে একটি বরই গাছ ছিল। একদিন মাজার শরীফের সৌন্দর্য্য বিধানের জন্য গাছটি কাটার চেষ্টা করিতে যাইয়া জনৈক খাদেম রক্তবমি করিতে করিতে মারা যায়। এই কারণে উহার পাতা ছিড়িতেও কেহ সাহস পাইত না। গাছটির কাছে ঘেসিতেও অনেকে ভয় পাইত। কিংবদন্তি আছে, যে কোন নিয়ত করিয়া গাছটির সহিত সুতা বাধিলে তাহার নিয়ত পূরণ হইত। হঠাৎ একদিন ঝড়ে গাছটি উপড়াইয়া পড়ে। ফলে, মাজার শরীফে যাতায়াত ও জিয়ারতকারীদের বিশেষ অসুবিধা হয়। কিন্তু উহা কাটিয়া সরাইতে কেহই সাহস করিলেন না।
এমতাবস্থায়, গাছটির ব্যাপারে কি ব্যবস্থা করা যায়। সেই পরামর্শের জন্য হযরত আমানত শাহ্র বংশধর শাহ্জাদা হযরত শের আলী মাইজ ভান্ডার শরীফের মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত মাওলানা শাহ্ আহাম্মদ উল্লাহ্ সাহেবের স্মরনাপন্ন হন। শাহ্ সাহেব, হযরত শাহ্জাদাকে গাছ কাটার হুকুম দিয়া বিদায় দিলেন। পথে হযরত শাহ্জাদার রক্তবমি শুরু হয়। সুতরাং তিনি গাছটি কাটিতে সাহস পাইলেন না এবং সকলকে জানাইয়া দিলেন যে, যে এ গাছ কাটিবে সে অবশ্যই রক্তবমি করিতে করিতে মারা যাইবে। অতত্রব, গাছটি আর কাটা হইল না। গাছটির কারণে জিয়ারত কারীদের অসুবিধা যথা পূর্ব রহিয়া গেল।
ইহার কিছু দিন পর হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) চট্টগ্রাম সফরে আসেন এবং আপন আদব অনুযায়ী জিয়ারতের উদ্দেশ্যে হযরত আমানত শাহ্র মাজারে হাজির হন। গাছটির কারণে অন্যান্যদের মত তাঁহারও মাজারে প্রবেশে বিঘ্ন ঘটে। ইহাতে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা বিরক্তবোধ করেন এবং খাদেমকে ডাকিয়া গাছটি এইভাবে ফেলিয়া রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। খাদেম সম্পূর্ণ ঘটনা তাঁহাকে খুলিয়া বলেন। তিনি কতক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া খাদেমদেরকে অজু করিয়া আসিতে বলিলেন। খাদেমগণ অজু করিয়া আসিল। ইতিমধ্যে কুড়াল আনা হইল। হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা কুড়াল হাতে লইয়া প্রথমে গাছে, তিনটি ঘা দিলেন। অতঃপর কুড়ালটি খাদেমদের হাতে দিয়া গাছটি কাটিবার জন্য হুকুম দিলেন। খাদেমগণ গাছটিকে কয়েক টুক্রা করিয়া অতি যত্ন আদবের সহিত মাজার শরীফে সংরক্ষণ করেন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা জিয়ারত করিয়া যথারীতি ফিরিয়া আসিলেন।
শোনা যায়, সুরেশ্বরী বাবার সফরসঙ্গী বলিয়াছেন যে, সেইবার হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার আমানত শাহ্ মাজার জিয়ারত এবং যাওয়া-আসার ধরন দেখিয়া মনে হয় যে, দয়াল বাবা সুরেশ্বরী হযরত আমানত শাহ্রে রূহানী অনুরোধে বা অনুমোদনক্রমেই মূলতঃ বরই গাছটি কাটিয়া তাঁহার মাজারের অসুবিধা অপসারণ ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির কাজটি সমাধা করিবার জন্যই সেইখানে গমন করিয়াছিলেন। আরো শুনা যায় যে, হযরত বাবা আমানত শাহ্ দয়াল বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলাকে তাঁহার কোন এক সংকট মুহুর্তে আধ্যাত্মিকভাবে উপকার করিয়াছিলেন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাঁহার মাজার পরিষ্কারের দায়িত্ব পালন করিয়া তাঁহার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিলেন। এইসব কাহিনী মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফের বর্ষীয়ান ভক্ত-মুরব্বিগণের নিকট এখনও শুনা যায়। আসলে অলি প্রাণ অবিনস্বর, সদা সক্রিয়। রূহানী জগতে অলিগণ একই সংঘের সদস্য। তাঁহাদের মধ্যে যোগাযোগ অবিরত। আলোচিত ঘটনা উহার বাস্তব উদাহরণ।
No comments:
Post a Comment