হযরত খাজা খেজের (আঃ) সহিত সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) এর গভীর রুহানিয়াত সম্পর্ক ছিল। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) এর ইহলৌকিক জীবনের কিছু ঘটনা রহিয়াছে যাহাতে ইহার প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুরূপ একটি ঘটনা এবং একটি ভবিষৎবাণী এইখানে উল্লেখ করা হইল।
পদ্মা নদীর দক্ষিণ পাড়ে সুরেশ্বর গ্রামে মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফ অবস্থিত। এই নদীর পাড়েই ছিল সুরেশ্বরী ক্বিবলার নিবাস। এইখানে একটি ছোট্ট কুড়ে ঘরে ছিল তাহার পবিত্র আস্তানা শরীফ। সাধারণতঃ গভীর রাতে, কখনও কখনও দিনের বেলায়ও এই ঘরে তিনি অবস্থান করিতেন। তিনি যখন এই ঘরে প্রবেশ করিতেন, তখন দরজা বন্ধ করিয়া রাখিতেন। উৎসুক ভক্তদের কাছে মনে হইত ঐ ঘরে অবস্থান করিবার সময় তিনি যেন কাহারও সহিত গভীর আলোচনায় মগ্ন রহিয়াছেন।
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার প্রিয় ভক্ত মুরিদ মুন্সি আব্দুল আজিজ তখন দরবারে হাজির ছিলেন। উল্লেখ্য যে, এই সময়ে মহান দরবারের দিকে পদ্মার ভাঙ্গন চলিতেছিল। দরবারের দিকে পদ্মার ফাটল দেখিলে ভক্তদের বুকে কুঠারাঘাত বোধ হইত। পদ্মার ভাঙ্গনে তাহাদের অন্তর সঙ্কিত হইয়া পড়িত; ভাবিত যদি দরবার শরীফ পদ্মায় বিলীন হইয়া যায়, তাহা হইলে তাহারা মনের সান্ত¦নার জন্য কোথায় যাইবে। এই জন্য উক্ত মুন্সি সাহেব পদ্মার পাড় হইয়া দরবারে প্রবেশের সময় প্রতিবারই কদমের সাহায্যে পদ্মা ও দরবারের দুরত্ব নির্ধারনের চেষ্টা করিতেন। ইহা বলা চলে যে, উক্ত কাজ তাঁহার অভ্যাসে পরিণত হইয়াছিল। তাহার সম-সাময়িক সকলেই তাহা জানিতেন। সে যাহাই হউক, হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা ঐ ঘর হইতে বাহির হইয়া দরবারে বসিলে মুন্সি সাহেব বলিলেন বাবা, আমিতো দরবারে আসিলেই পদ্মার দুরুত্ব জরিপ করি। দিন দিন দুরত্¦ কমিয়া আসিতেছে। আমার তো মন মানেনা, নানা শংকায়, উৎকন্ঠায় এবং চিন্তায় মন ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছে। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি দোকানদারের বাড়ি হইতে জরিপ করো?
বাড়িটি কোন এক দোকানদারের নিকট হইতে হযরত সুরেশ্বরী (রাঃ) খরিদ করিয়াছিলেন। এই জন্য বাড়িটি দোকানদারের বাড়ি নামেই পরিচিত। মুন্সি সাহেব উত্তর দিয়াছিলেন জ্বি বাবা। হযরত সুরেশ্বরী বাবা বলিলেন- “সুরেশ্বর একখন্ড পবিত্র মাটি, তাহাছাড়া যাহাকে বিশ্বাস করিয়াছি তাহাকে অবিশ্বাস করিতে পারিনা।” তোমরা নিশ্চিত থাকিতে পার যে, ইনশাইল্লাহ্ দরবারের মূল সীমানার মধ্যে পদ্মা প্রবেশ করিবেনা। তবে, দোকানদারের বাড়িতো দরবারের মূল সীমানার বাহিরে। বলা বাহুল্য যে, দোকানদারের বাড়িটি ঠিকই পদ্মার গর্ভে চলিয়া গিয়াছে। অপরদিকে দরবারের মূল সীমানার কাছাকাছি আসিয়া পদ্মা ফিরিয়া গিয়াছে কয়েকবার। উল্লেখ্য, বর্তমান সময়ে উক্ত দরবার ঘেষিয়া পদ্মার চর পত্তনের যে লক্ষন দেখা যাইতেছে তাহাতে হযরত সুরেশ্বরী বাবাকে প্রদত্ত হযরত খাজা খেজের (আঃ) এর আশ্বাস এবং সেই প্রেক্ষিতে হযরত সুরেশ্বরী বাবার উক্ত ভবিষ্যতবাণী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালিত হইতেছে।
এই প্রসঙ্গে আরো একটি
ঘটনা বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য। একদা গভীর রাত্রে হযরত সুরেশ্বরী বাবা তাহার
ছোট স্ত্রীকে ঘুম হইতে জাগাইয়া বলিলেন শিন্নি রান্না করিতে হইবে, তুমি
অন্যান্য সামগ্রী প্রস্তুত কর, আমি গাভীর দুধ দোহাইয়া আনিতেছি। যাহা
হুকুম, তাহাই কাজ। ছোট মা শিন্নি রান্নার সব সামগ্রী প্রস্তুত করিলেন।
দয়াল বাবা নিজের হাতে গাভীর দুধ দোহাইয়া আনিলেন। যথারীতি শিন্নি রান্না
হইল। তাহা একটি বড় ডিশে সাজাইয়া সুন্দর পবিত্র কাপড় দ্বারা ঢাকিয়া আনা
ফুল গোলাপ পানি, আগর বাতি জালাইয়া মহব্বত ও আদব সহকারে মাথায় লইয়া হযরত
সুরেশ্বরী নদীর দিকে রওয়ানা হইলেন। ছোট মাকে বলিলেন তুমি অপেক্ষা করো, আমি
আসিতেছি। মা ক্বিবলার মনে দোলা লাগিল, এত রাত্রিতে শিন্নি মাথায় করিয়া
দয়াল কোথায় যাইতেছেন। মা ক্বিবলার মনে কিছুটা শংকা, কিছুটা উৎসুক্য দেখা
দিল। তিনি খাদেমকে ডাকিলেন এবং তাহাকে অনুসরণ করিতে হুকুম করিলেন। যথারীতি
বাবা সুরেশ্বরীকে অনুসরণ করা হইল। দেখা গেল দয়াল শিন্নির ডিশ মাথায়
পদ্মার হাটু পানিতে নামিয়া কিছুক্ষন স্থীর হইয়া থাকিয়া কোমর পানিতে
গিয়া চুপচাপ হইয়া রহিলেন। কিছুক্ষন পর দেখা গেলো, তিনি গলা পানিতে
দন্ডায়মান। অতপর আর তাহাকে দেখা গেলো না। অনুসারী মা ক্বিবলাকে আসিয়া সব
ঘটনা বর্ণনা করিলেন। মা ক্বিবলা দয়ালের অলৌকিক আচরণ এবং অস্বাভাবিক ঘটনা
আরো দেখিয়াছিলেন। তাহার পরও ভয়, শংকা ও উৎসুক্য দোলায়িত মনে নদীর দিকে
এক দৃষ্টিতে তাকাইয়া রহিলেন। কখন দয়াল আসিবেন। অবশেষে অপেক্ষার শেষ হইল।
সুব্হেসাদেকের কিছু পূর্বে দেখা গেল দয়াল সুরেশ্বরী বাবা নদীর দিক হইতে
ধরী পদক্ষেপে উঠিয়া আসিলেন। স্মীত হাস্যে ছোট মাকে বলিলেন “আর কোন ভয়
নাই, আমি আমার বন্ধুকে সন্তুষ্ট করিয়া আসিয়াছি। সুরেশ্বর দরবার শরীফ এক
টুকরা পবিত্র মাটি, ইনশাআল্লাহ্ কাল কেয়ামত পযন্ত এই পবিত্র মাটি অক্ষয়
থাকিবে।”
No comments:
Post a Comment