Thursday, September 25, 2025

ইন্তেকালের পর মাওলানা হাফেজ্জী হুজুরকে স্বশরীরে দর্শন দান

 

বুযুর্গানে দ্বীন ফেকাহ্ শাস্ত্রাবদ,ইসলামি খেলাফত আন্দোলন এর জনক হযরত মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ্ হাফেজ্জী হুজুরের নাম শোনে নাই বাংলাদেশে এমন লোক হয়তো কমই আছে। তিনি নোয়াখালী জেলার রায়পুর থানাধীন লামছড়ি গ্রামের দুই বাংলার প্রথিতযশা মাওলানা হযরত কাজী আব্দুল্লাহ্ সাহেবের পুত্র এবং আত্মীয়তার সূত্রে সুরেশ্বরী বাবার ভায়রাপুত্র। মাওলানা কাজী আব্দুল্লাহ্ সাহেব আত্মীয়তার সূত্রে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার ভায়রা হইতেন। হযরত মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ্ হাফেজী হুজুর ভারতের দেওবন্ধ মাদ্রাসায় লেখা পড়া করিতেন। সেইখান হইতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করিয়া পৈতৃক আবাসে ফিরিতে ছিলেন। তদানীন্তন সময়ে গোয়াণন্দ ঘাট হইতে ষ্টিমারে চড়িয়া বৃহত্তর কুমিল্লা এবং নোয়াখালী’র মানুষ যাতায়াত করিত। যাহা হউক, ষ্টিমারে চড়িয়া মাওলানা সাহেব দেখলেন যে তাহার খালুজান হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ষ্টিমারে বসিয়া রহিয়াছেন। কাছে যাইয়া সালাম এবং মুসাহাবা করিতেই হযরত সুরেশ্বরী (রাঃ) তাহাকে অত্যন্ত স্নেহে কাছে বসাইলেন। জাগতিক বিষয়াদী সম্পর্কে খোজ খবর লইয়া অসম বয়সী দুইজন মানুষ দীর্ঘ সাড়েচার ঘন্টা ত্বরিকত এবং মারেফতের বিভিন্ন বিষয়ে লইয়া জ্ঞান গর্ভ আলোচনা করিলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে ধাবমান বিশাল আকৃতির ঢেউগুলির দিকে ঈশারা করিয়া বলিলেন, “বলতো বাবা, এই টেউগুলি কি বলিয়া এমন উন্মাতাল হইয়া গর্জন করিতেছে?” মাওলানা সাহেব কিছুক্ষণ পরে অত্যন্ত বিনীত ভাবে বলিলেন খালুজান, আপনি সকল সময়ে হেয়ালীপনা ও মারফতী কথা বলেন। কালির আঁচড়ে লিখা কিতাব মুখস্ত করিয়া উচ্চ ডিগ্রী ও মূল্যবান সার্টিফিকেট অর্জন করিয়াছি কিন্তু এমন কথাতো কোন কিতাবে পাই নাই যে, ঢেউগুলি কি বলিতেছে। আপনার প্রশ্নের উত্তর যদি কোন কিতাবে লিখা হইততাহলে নিশ্চয়ই বলিতে পারিতাম। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) মাওলানা সাহেবের বিনম্র কথা শুনিয়া অত্যন্ত খুশি হইলেন এবং বলিলেন; শুনিয়া রাখ, উহারা “ইয়া জাব্বারু-ইয়া জাব্বারু” ধ্বনি করিয়া সম্মুখে ধাবমান হইতেছে। এইরূপ মারেফত ও বেলায়েতের আলোচনা করিতে করিতে ষ্টিমার সুরেশ্বর ঘাটে আসিলে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) মাওলানা সাহেবকে দোয়া করিয়া বিদায় লইলেন, মাওলানা মোহাম্মাদ উল্লাহ্ সাহেবও যথারীতি বাড়ি পৌঁছাইলেন।

বাড়িতে পৌঁছাইয়া তিনি দেখিলেন যে তাঁহার সমস্ত আত্মিয়-স্বজন তাঁহার আগমনের খবর পাইয়া তাঁহাদের বাড়িতে আসিয়া সমবেত হইয়াছে। সালাম, দোয়াবাদ বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে মাওলানা সাহেবকে মুরুব্বি আত্মিয়গণ জিজ্ঞাসা করিলেন পতিমধ্যে কোন অসুবিধা হয় নাই তো? মাওলানা মুহাম্মদুল্লা উত্তরে বলিলেন আল্লাহ্র অশেষ রহমতে পতিমধ্যে কোন অসুবিধা হয় নাই। মাওলানা সাহেব আরও বলিলেন গোয়ালন্দ হইতে সুরেশ্বর পর্যন্ত খুব শান্তিতে আসিয়াছি। কারন সুরেশ্বরের জানশরীফ খালুজানের সঙ্গে ষ্টিমার দেখা হইয়া যায় এবং ধর্মীয় আলোচনা করিতে করিতে সময় কাটিয়া যায়। খালুজানের সঙ্গে ইল্মে মারেফত সম্পর্কে অনেক সারগর্ভ আলোচনা করতঃ খালুজান আমাকে বিশেষভাবে দোয়া করিয়াছেন। মাওলানা সাহেবের কথা শুনিয়া তাহার পিতা-মাতা  ও উপস্থিত আত্মিয়স্বজন স্তম্ভিত হইয়া গেলেন এবং বলিলেন তুমি কি বলিতেছো? ইহা অসম্ভব ইহা কিছুতেই হইতে পারে না। কারন আজ হইতে এক বৎসর পূর্বে তোমার খালুজান মাওলানা জানশরীফ (রাঃ) ইন্তেকাল করিয়াছেন। মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর ইহা শুনিয়া চিৎকার দিয়া আবেগাপ্লুত কান্না জড়িত কন্ঠে বলিলেন, এতদিন কোরআন হাদিসে পড়িয়াছি আল্লাহ্র অলীগণ মরেন না আজ আমি নিজ চোখে একজন মহান জিন্দা ভলীর দর্শন লাভ করিলাম, আমি নিজেই ইহার বাস্তব স্বাক্ষী। মাওলানা সাহেব অত্যন্ত অনূতপ্ত হৃদয়ে আপসোস করিয়া বলিলেন, হায় খালুজান! সারা জীবন আপনাকে ভন্ড ও বিদয়াতী জানিতাম, আপনাকে অকজ্ঞা ও অবমূল্যায়ন করিতাম, আপনাকে জীবদ্দশায় চিনিতে পারি নাই। এই বলিয়া তিনি মস্তকে নিরবে বসিয়া রহিলেন এবং মনের অজান্তে নয়ন যুগল হইতে অশ্রু গড়াইয়া পড়িতে লাগিল। সমস্ত বাড়িতে তখন পিনপতন নিস্তব্দতা বিরাজ করিতে লাগিল। পরবর্তীতে সুরেশ্বরী বাবার রওজা মোবারক জিয়ারত করতঃ ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শণ করিয়া গিয়াছেন। 

হাফেজী হুজুরের জনৈক ভক্ত বলেন, “ একদিন আমার মুর্শিদ ক্বিলা হাফেজ্জী হুজুরের সামনে বসিয়া মাওলানা জানশরীফ সম্পর্কে সমালোচনা করিতেছিলাম হঠাৎ আমরা মুর্শিদ ক্বিবলা আমাকে প্রচন্ড ধমক দিয়া বলিলেন, সাবধান! তুমি কাহার সম্পর্কে কি বলিতেছ? তুমি কি মাওলানা জানশরীফ সুরেশ্বরীকে চেন? তিনি এত বড় অলী ছিলেন যে তাঁহার নাম শুনিলে বাঘে পর্যন্ত ভয় পায়।

No comments:

Post a Comment

কালামে সুরেশ্বরী

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ছিলেন অত্যন্ত বুৎপত্তিময় কবি ও লেখক। তাঁহার রচিত বাংলা ও উর্দু কিতাবগুলি মারেফত রাজ্যের এক বিশাল ভান্ডার। গ্...