সূচি
হুয়াল গণি ৫৫৮
২য় সংস্করণ ৫৫৯
বচন ৫৬০
কল্কী অবতার ৫৬৪
দৃষ্টান্ত ৫৬৫
দৃষ্টান্ত ৫৬৭
তৃতীয় সংস্করণ ৫৬৯
দ্বিতীয় কথা ৫৭০
পেশগুই ভবিষ্যৎ বাণী ৫৭১
পেশগুই (ভবিষ্যৎ বাণী) ৫৭২
নবী সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণী। হাদীছ। ৫৭৭
কেয়ামতের নিশান ৫৭৭
নবী সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণী ৫৭৮
মহরমের খোদবা ৫৭৯
ভাব ৫৮৪
যাতনা ৫৮৪
ভাব ৫৮৪
কালের প্রতি ৫৮৫
ভাব ৫৮৬
উপদেশ ৫৮৬
সাবধানতা ৫৮৭
করুণা ৫৮৭
ভাব ৫৮৮
ভাব ৫৮৯
গুরু ভক্তি ৫৮৯
বিলাপ ৫৯০
ইস্তাহার ৫৯১
দূরূহ শব্দের অর্থ ৫৯৭
হুয়াল গণি
চন্দন গৌরব মণি, আম্বুর সরন।
শিকরে সম্বল সার, অন্নের বেঞ্জন ॥
আসু ফল পর বল, পরশ রতন।
চৌক্ষের অঞ্জন জ্যোতি বন্ধুর চরণ ॥
তরঙ্গ তরুণ জলে, হুঁ হুঁ রব গায়।
আকাশ পাতাল জুড়ে মেঘ বৃষ্টি যায় ॥
অধিকার যার রসে, তাঁর রসে রস।
ডালিম্ব, কাঁঠাল, বেল, আম্র, আনারস ॥
মিষ্ট মুখে জিহ্বা চোষে অম্ল মুখে জল।
বন্ধু পিতঃ সিদ্ধা গুরু সীমানা সরল ॥
এক রসে দুই পন্থা নহে কদাচন।
সরল সীমানা নিত্য যাহার আসন ॥
শকুনীর দৃষ্ট জন্তু মোরদা অনিবার।
দো সীমাতে শকুনীর ঘটে না আহার ॥
গঙ্গাজলে স্নানেতে, হবে পরিষ্কার।
মনের আহ্লাদে ডুব দাও বারে বার ॥
সখিগণ মনোরসে যমুনার তীরে।
আঁচল উড়ায়ে গতি কলসী কঙ্কে ধীরে ॥
শারদা গমন গতি জল যমুনায়।
বিলাস তরঙ্গ তনু ডুবি ডুবি নায় ॥
কোমর কমল ক্ষীণ পাছা উত্তোলন।
বারে বারে ডুব নদে ভরিয়া বদন ॥
আনন্দ সময় এই আনন্দ সময়।
আনন্দে বন্ধুর দেশে দাও পরিচয় ॥
আনন্দ হয়েছে যার আনন্দ এবার।
এ আনন্দ বিনা নন্দ নহে হইবার ॥
বাজাও আনন্দ ডঙ্কা মধু পুরে যাও।
বাজিলে নীরব ডঙ্কা করিবে না রাও ॥
বাজিলে নীরব ডঙ্কা বিলাসীবে ঘুম।
সে ঘুম নীরব রবে সংসার নিজ্জুম ॥
২য় সংস্করণ
হিন্দুস্থানে দ্বীন যবে হইল পতিত।
দ্বীনদার ছিল যারা হল সশঙ্কিত ॥
অলী-আল্লা ছিল যারা হিন্দ বাঙ্গালায়।
রহিল দ্বীনের নাম তাঁদের কৃপায় ॥
হিন্দুদের পূজা পাজা কার্য্য ব্যবহারে।
মোছলেমের দ্বীনদারী রহিতে না পারে ॥
কেবল পূজার ধুম মুরত আচার।
মোছলেম ও হিন্দুর মধ্যে হল ব্যবহার ॥
ফারাক না ছিল তায় হিন্দু মোছলমান।
কৃষ্ণলীলা রাধিকার সদা সাধ্য গান ॥
নরবলি মোছলেমেরে দিত সর্ব্বদায়।
ভেজিলেন অলী নেক মদদ খোদায় ॥
প্রথম বাঙ্গালা দেশে বাজিদ বোস্তাম।
কলন্দর মাদার পীর তাঁর পরিণাম ॥
মুরিদ মানিক তাঁর আর বাওন পীর।
শত শত অলীগণ হৈলা দস্তগীর ॥
মোরশেদের বিদ্যা নূরী করিয়া আসন।
জেকেরের রোলে ডঙ্কা বাজায় আপন ॥
বাজিয়া উঠিল যবে দ্বীনের বাজার।
অন্ধকারে চন্দ্র যেন হল নমুদার ॥
বড় বড় রাজা আর বড় জমিদার।
অবশেষে ধন্য-মান্য করিল তাঁহার ॥
দেখিয়া দ্বীনের খুবি অন্য অন্য দ্বীন।
কেয়ামতে আগে তাঁর হয়ে গেল হীন ॥
মহাম্মদী নূর যদি হইল রৌশন।
নূর পরে নূর রস সকল আসন ॥
সূর্য্য জ্যোতে তারাগণ দেখা নাহি যায়।
নতশিরে অলী আগে নূর ধর্ম পায় ॥
শত শত গুণমানী ধরে সেই দ্বীন।
জগন্নাথে কবিরের রৈয়া গেছে চিন ॥
মাওলানা কবির নামে জগন্নাথ ধামে।
খাইল তাহার পাক হিন্দু পরিণামে ॥
ভক্তি কথা লয়ে তারা ভক্তি করে খায় ॥
মুণি জন বিনা ভক্তি কে করে কথায় ॥
ভক্তি গুণে ভক্তি-রস এভব রঞ্জন।
ভক্তি-গুণে মুক্তি-পথ মুণি মহাজন ॥
আজো সেই ভক্তি সেবা রহিয়াছে তাঁর।
নহে যার নাই তার ধর্ম অধিকার।
মধুর ভিতর মধু কে নাশিতে পারে।
সত্য গুণী সত্য মুখে বলহে আদরে ॥
গুণে গুণী গাজী পীর বদরের গুণ।
গাঙ্গের তরঙ্গ নদে অনন্ত ভুবন ॥
বচন
আমরা আছি পোলাপান, গাজী আছে নেগাবান।
শ্রী গঙ্গা পাঁচ পীর বদর বদর ॥
গাং তীরে পাড়ি কালে হিন্দুর সন্তান।
সকলে গাহিতে থাকে পঞ্চ পীর গান ॥
মেহের কালী মেলা ক্ষেত্রে আদরে মেহের।
তার পরে করে যাহা করা করনের ॥
মেহের গেরামে সাহা রাস্তিন অলীর।
মুহাম্মদী গুরু ধাম আসনে কালীর ॥
দেখিয়া তাঁহার গুণ হিন্দুর সন্তান।
অনেকে করিয়া থাকে তাঁর গুণগান ॥
এই রূপে যথা যাহা আছে গুরুধাম ॥
হিন্দুর সন্তান করে তাহার প্রণাম ॥
বাকীয়তে মৃত্যু কালে বৈতরণী পার।
মুহাম্মদী নাম লিয়া হয়েছে উদ্ধার ॥
তবে ওহে বল এবে হিন্দুর সন্তান।
জগন্নাথ তব নহে আছে বিদ্যমান ॥
মনোপুরে জগন্নাথ নাহি আছে যার।
জগন্নাথে গেলে নহে জগন্নাথ তার ॥
এস এবে জগন্নাথে সবে মিলে যাই।
যেই দেশে তোমা বই আর কেহ নাই ॥
আমি হে তোমার হব, তুমি হে আমার।
এস এস শ্রীক্ষেত্রে, হই ভব পার ॥
এক মনে দুই নাই, ধর্ম উপার্জ্জনে।
ছাড়িলে নারদ চাল, পড়ে তাহা মনে ॥
সাধু হও সাধু চাও, সাধু অনুক্ষণ।
পরকালে সাধে মত্ত, সাধুর আসন ॥
যে কালে তোমার দেশে ছিল মোসলমান।
মোসলেমের দ্বীন নামে, ছিল গাজী গান ॥
গাজীর গাহেন আর মাদারের বাঁশ।
দ্বীন নাম বলে এই আছিল প্রকাশ ॥
মোসলেমের মধ্যে এই রৈয়াছিল চিন।
ইহা বৈ লোপ হয়ে গেল সব দ্বীন ॥
তাতেই রৈয়াছে দ্বীন, নূর মোস্তফার।
সে দ্বীনের শান সেবা এবে দ্বীনদার ॥
আসহে এছাই বন্ধু, করহে আদর।
তোমার আমার ঘর একই সদর ॥
একেলা তোমার নহে, ইছা পয়গাম্বর ॥
ডেকেছি তাঁহারে আমি করিয়া আদর ॥
বক্ষস্থলে তাঁরে ধরে রেখেছি ভরিয়া।
জ্বলিছে তাঁহার নূর, গুরুধামে গিয়া॥
তবে কেন আমাদেরে ভাবিতেছ ভীন।
বন্ধু যার নাই তার কভু নহে দ্বীন॥
বন্ধুর পিরীতি মনে, নাহি আছে যার।
কেমনে সে হবে ভবে, বল দ্বীনদার॥
ইছা নামে নমস্কার আমার সদায়।
মুছা নাম সম্বোদিয়া রাখিনু মাথায়॥
যার গুণ অভিলাসী আমি চিরকাল।
তাঁর হয়ে তুমি ভাব আমাকে জঞ্জাল॥
ভাল হতে চাও যদি ভাল জান সবে।
ভাল ছিল কৃষ্ণদেব, ভাল মহাদেবে।
কালাক নামেতে নবী মহাদেবে কয়।
ছওদল হিন্দ নবী নামে নামে কৃষ্ণ পরিচয়॥
ছওদলের অর্থ কাল কৃষ্ণ অবতার।
খবরেতে হিন্দুস্থান, ইসারা তাহার॥
সেখ আকবর লিখিলেন, ফচুছ কেতাবে।
প্রতিমার নেক ছবি, নেক ছিল সবে॥
প্রতিমার ছবি সেবে, হবে গুনাগার।
আগুন আতশী কাঁচ, দরকার আয়নার॥
যে জন নেকের নেক, নেক সমুদয়।
তার মন নেক ভিন্ন, বদে মত্ত নয়॥
মন্দে যদি সন্দে হয়, মন্দ বলিবার।
সন্দে স্থলে মন্দ সেই, নহে হইবার॥
নিজে যদি মন্দ হয় পারে বলিবারে।
নিজে যদি নেক হয়, নহে কহিবারে॥
অন্যে যদি নেক হয়, বলা যায় তাঁরে।
দেখিলে পরের গুনা, ছাপাইবে আড়ে॥
পরবদে মত্ত যেই, সেই বদকার।
হবে না এমন বদ, কখন উদ্ধার॥
এমন বদের কথা, শুনা মহাপাপ।
বদ নহে যেই দেলে, সেই দেল ছাপ॥
আদেশেন নবীবর আছহাবের তরে।
পাইলাম এক রত্ন খোদার দরবারে॥
পৃথিবীতে হেন রত্ন নাহি আছে আর।
দিব কারে নাহি জানি, ভাগ্যে আছে কার॥
বল দেখি সেই রত্ন তোমাদের দিলে।
কোন নেক করিবেক, তাহার বদলে॥
সত্যপীর সিদ্দিক কন আমল নেকের।
করি আর করাইব লোকের খাতের॥
কহেন ফারুক পীর যেহাদ আদি কাম।
দুনিয়ার আরায়েস করিব হারাম॥
পীর গনি কন মাল করিব প্রদান।
ভাল কামে ভাল নাম রাখিব নিশান॥
শের নূরী নিবেদিলা পশ্চাতে সবার।
বদ পুশী কার্য্য চাই আল্লার বান্দার॥
একাম করিব আমি যাবৎ জীবন।
নবী জিউ আলী শাহে বলেন তখন॥
লও রত্ন ধর হাতে র্খেকা খেলাফত।
হইল তোমার পরে, খতম মারফত॥
তোমা পরে বেলায়েত হইল খতম।
পৌঁছিবে তোমার ভাগ্যে, তামাম আলম॥
গদ্দি-নিশী হবে তুমি নূর ইমানের।
রহিবে তোমার নূর মুল্লুকে জাহের॥
লুদ্দনি চমক বুক তোমার ছফিনা।
গঞ্জে-রাজা ছিনা তব এছরার গনিনা॥
আদেশ প্রভুর হেন আছিল আমায়।
হেন বাক্য যেই বলে, র্খেকা দিবে তায়॥
এবে হের আয়ব-পুশী রত্ন কিবা নয়।
আয়ব-পুশী মহাপুণ্য পুণ্য সমুদয়॥
হেন পুণ্য মহাপুণ্য, আছে না সংসারে।
আশু পুণ্য পরপুণ্য নহে তার ধারে॥
সর্বশাস্ত্রে এই ধর্ম অহঙ্কারহীন।
হিংসা নাই যেই ধর্মে তারে বলি দ্বীন॥
মহেসেনী নিবেদিলা মহাদেব তরে।
আদেশিবে মহারাজ, ধর্ম বলে কারে॥
মহাদেব সম্বোদিয়া, পার্বতীরে কয়।
হেন কথা শুনে মম মনে সুখ হয়॥
হেন কেহ জিজ্ঞাসে না ধর্ম ব্যবহার।
জিজ্ঞাসিছে ধর্ম দ্বীনে ধর্মের আচার॥
ধর্মধামে ধর্মা ধর্ম, ধর্ম সমুদয়।
সে ঘরেতে ধর্ম নৈলে, তার ধর্ম নয়॥
যে ঘর প্রভুর যাত, ঐ ধর্মপুর।
লয় হওয়া প্রভুসনে, সে ধর্ম মধুর॥
লয় হওয়া প্রভুসনে, ফানা কামালাত।
এই ধর্ম এই দ্বীন এই আখেরাত॥
কর ইহা পূজা পাজা অন্য নহে কার।
অন্তর মানস সনে সকল খোদার॥
অর্চ্চনা মানস নহে দেবদেবী কায়।
তোষামদ কহে তারে আচার পূজায়॥
যেন রাজা শনি হন প্রথম দিনের।
রাজ্য ধর পাপ গ্রহ, শনি ঠাকুরের॥
তাই এই তোষামদ, করা হয় তাঁর।
খোদা বৈ মানসিক নহে হবে কার॥
যে পূজা মানস নাই সেই পূজা নয়।
তামাসা অলীক আর রাজসিক চয়॥
খেলাভাবে পূজা আর, বৃথা ধুম-ধাম।
রাজ লক্ষী অন্য পূজা নহে ধর্ম কাম॥
মানসিক ধর্ম বল, যেই ধর্ম নয়।
অন্য নামে পূজা পাজা, বৃথা পরিচয়॥
ধর্মজ্ঞান নাহি যার, নহে সে মানস।
মানস রসের নৈলে, নহে সেই রস॥
মহেসিনী শুনে যবে, এ ধর্ম সংবাদ।
নতশিরে শ্রদ্ধারূপে কৈলা ধন্যবাদ॥
জাল শাস্ত্রে লেখা আছে আর গুরুতর।
ধর্মপন্থা মহাদেব, আদেশ সুন্দর॥
মোহাম্মদ আদেশ এই আদেশ খোদার।
মানস একিন হয় ইমান বান্দার॥
যে একিনে প্রভু সনে মন-তন ফানা।
লয় আর ফানা সেই স্বার্থ মূল জানা॥
ইহাই হাদিছ আর ইহাই কোরান।
ইহাই ধর্মের পন্থা, এই মূল গেয়ান॥
এই জ্ঞানে মহাদেব, মোহাম্মদে ভিন।
নহে কিন্তু মূল দেশ, স্বার্থ মূল দ্বীন॥
মূল যার মূল পদ মূলে মূলাধার।
যার ধর্মে সেই ধর্মী হইবে উদ্ধার॥
ঋগ বেদে তাই তাঁর বর্ণিত নিশান।
ধর্ম দেব মান্যবরে কৈলাস সমান॥
যে নামের গুণে সবে হইবে উদ্ধার।
আসিবেন শেষ দেব, পরে সবাকার॥
তাঁর নামে ‘ম’ হরফ, প্রথম অক্ষর।
‘হ’ হরফ মধ্যমেতে ‘দ’ তৎপর॥
গো-মাংস তাঁর ধর্মে, করিবে ভক্ষণ।
না ধরিলে তাঁর পানা হবে না মোচন॥
“কল্কী অবতার”
কল্কী পুরাণেতে লেখে কল্কী অবতার।
আসিবেন উদ্ধারিতে, এ ভব সংসার॥
রাজ্য আদালত আর, রীতি ধর্ম কাম।
লোভ হবে রবে শুধু ধর্ম মাত্র নাম॥
হীনে দিনে দিনে হীনে, ভাল মন্দ যত।
শান্ত হবে মন্দ জন, ভাল জন হত॥
কান্দপরে পৈতা শুধু নামে ব্রাহ্মণ।
চিম্টা হাতে ভস্ম অঙ্গে চোর মহাজন॥
দেশ জুড়ে হবে যবে, অন্যায় অত্যাচার।
আসিবেন উদ্ধারিতে কল্কী অবতার॥
জনম লইবা সেই ব্রাহ্মণের ঘরে।
কলিকালে সত্য যুগ বিস্তারিত তরে॥
সম্বল দ্বীপেতে জন্ম হইবে তাঁহার।
বিষ্ণু ইস সুমতী নাম তাঁর বাপ মার॥
ইস অর্থে খোদা আর বিষ্ণু বান্দাচয়।
আব্দুল্লার এই মানী আরবেতে কয়॥
সুমতীর অর্থে মানী আমানতদার।
আরবেতে এই অর্থ শব্দ ব্যবহার॥
আব্দুল্লাহ্ পিতার নাম, আমেনা মাতার।
এই নাম পিতা-মাতা কল্কী অবতার॥
ব্রাহ্মণ অর্থে গুরু পীর খান্দানের।
সৈয়দ কুলেতে জন্ম ব্যক্ত আরবের॥
সত্য যুগ পৃথিবীতে হবে বিস্তারিত।
একাচারী হবে লোক পূর্ব রীতিনীতি॥
ছুঁই ছুছি রহিবে না হিন্দু মুসলমান।
খাদ্য রস একসাথে সকল সমান॥
দৃষ্টান্ত
নবীজির সভা শিরে, এসে কোনজন।
তিরস্কার করে পুনঃ সকলে আপন॥
মুনাফিক লোক এই দেখি সমুদয়।
নবীবর কোন সত্য কহিলে নিশ্চয়॥
আর এক বলে গিয়া দরে পয়গাম্বর।
ভাল-মন্দ বৈঠকের মধ্যে নারী-নর॥
নূর-নবী প্রত্যুত্তরে কহেন নিশ্চয়।
তুমি যাহা করিয়াছ সত্য পরিচয়॥
তারপরে দরবারে এসে একজন।
বলে দেখি সবাপর নেকি বান্দাগণ॥
নবীবর প্রত্যুত্তরে বলে তার ঠাঁই।
তুমি যাহা বলিয়াছ যথার্থই তাই॥
নবীবরে নিবেদিলা আছহাব তামাম।
শুনি নাই কভু হেন আজব কালাম॥
কেউ বলে মুনাফেক কেউ বলে নেক।
কেউ বলে ভাল-মন্দ, সভার অর্দ্ধেক॥
প্রত্যুত্তরে বুঝা যায় সত্য বলে তারা।
তিনজন সত্য বল বলিছে কি তারা॥
নবীবর কন এই সত্যই সম্বল।
দেখিয়াছ যাই তাই আপন আমল॥
যাহার নেকের চক্ষু দেখে সেই নেক।
নেফাক যাহার দেলে দেখে মুনাফেক॥
নেক বদ যার ঠাঁই যত পরিমাণ।
রৌশন তাহার মনে তেমন গেয়ান॥
গেয়ান দর্পণ মূলে যেই ছায়া পড়ে।
দেলের দর্পণে তাহা দেখিবে নজরে॥
ভাল যেই তার ঠাঁই কেহু মন্দ নয়।
সম্বন্ধ নেকের সনে নেকের বিষয়॥
পানি মধ্যে চিনি দিলে সব পানি চিনি।
পোয়া চিনি মধু মিষ্ট, সের সের পানি॥
জল তলে তল শিরে সব জলময়।
যদ্যপি সকল তনু উপরেতে রয়॥
মমিনের ইমানেতে ডুবে যদি শির ।
জল মগ্নে খুলে যায় তরঙ্গ নেকির॥
তরঙ্গ নেকির সনে যার অধিকার।
দেখিবে নেকির ঢেউ সকল সংসার॥
পুত্রের আদর ধন মানস মাতার।
গুনা কৈলা তবু পুত্র নহে গুনাগার॥
দয়া নদে মাতারস মিষ্ট সমুদয়।
গুণ যার গান তার মাতার তনয়॥
পাপ দেখে গান যার নেক মিষ্ট গান।
দয়া রস মধু গুণে, মাতা গুণবান॥
মাতা রস তনে যার করেছে আসন।
করিম রহিম গুণ যার সিংহাসন॥
ডাহিনে রহম ঘর খোলা গেছে তাঁর।
চক্ষু কর্ণ নাসা স্বরে হিত অনিবার॥
বামে বদ সে দ্বার রহিত হবে যার।
নেক রস তার দেশ নিত্য অধিকার॥
দক্ষিণে জীয়ন আর উত্তরে মরণ।
নেক বান্দা নিজ ঘরে করিবে স্মরণ॥
উত্তর অঞ্চল ঘর সেই বদ জন।
কাল রূপ দর্পণেতে কাল ত্রিভুবন॥
দেল কালা কালা মুখ কালা সমুদয়।
সে দর্পণ কাল রূপে কেহু ভাল নয়॥
নেক মনে নেক নূর যার অধিকার॥
সে দর্পণে নেক হেরে এ ভব সংসার॥
ফলিছে নেকের ফল কণ্টক বদনে।
বিষাদে আস্বাদ নেক রাখিয়া যতনে॥
দৃষ্টান্ত
শাহেন শাহে অলী আলী খাজে মৈনদ্দিন।
আজমিরে গুরুধামে চমকিছে দ্বীন॥
হিন্দুস্থানে নর নারী হিন্দু মুসলমান।
জেয়ারতে মন মগ্ন সকল প্রধান ॥
আকাশ প্রদীপ ন্যায় শোভা পদ্ম কর।
করিছে দিনের বেলা সূর্য্যরে পশর ॥
সে আলো হেরিলে লোভ হয় লভিবার।
পদ্মকুলে অলি যেন গতি বার বার ॥
উরসে রসের দিন হলে নমুদার।
প্রজা রূপে পদ্ম লোভে কুসুম মাঝার ॥
দলে দলে যাত্রীগণ নর নারী বর।
গুরুধামে মেলা ক্ষেত্রে করেন পশর ॥
মাওলানা মৌলবীগণ হাফেজান কারী।
সন্ন্যাসী ফকির পীর শহর বাজারি ॥
জেকের আজকার আর গান বাজাসুর।
শতেক সহস্র মিলে বহু দূরা দূর ॥
কিন্তু ঐ হিন্দুস্থানে আছেন দস্তুর।
আম খাছ নারীগণ যান ভুরা ভুর ॥
মাওলানা মৌলবী আর হাফেজ কোরান।
বিবীগণ তাঁহাদের যান সেই স্থান ॥
কিন্তু এক মাওলানায় নিজ পত্নী তরে।
মানা করে একেবারে যাইতে মাজারে ॥
শুনিছে না সেই বিবী মানা পুরুষের।
মাওলানা বলেন তবে বিবীর খাতের ॥
যাও যদি রোখা এক হাত নিয়া যাও।
গদ্দিনিশী বসা যিনি তাঁহারে পৌঁছাও ॥
একথা বলিয়া রোখা দিল তাঁর তরে।
পৌঁছালেন পত্র নিয়া অলীর সদরে ॥
পত্র পড়ে সে মস্তান হাসে মিষ্ট হাস।
বিবী বলে কেন হাস করহ প্রকাশ ॥
বলে নয় সেই কথা হবে না প্রকাশ।
রোখা এক দেই আমি দিও মিঞা পাশ ॥
পরে যবে রোখা লিয়া আসিলেন ঘরে।
পৌঁছাইলেন সেই রোখা আপন শহরে ॥
পত্র পড়ে সেই মিঞা মিষ্ট মিষ্ট হাসে।
জিজ্ঞাসিলে কেন হাস মিঞার সম্পাসে ॥
মস্তান হাসিল যেন কেন হাস তুমি।
কহ বন্ধু সেই কথা বুঝি নাহি আমি ॥
মিঞা বলে সেই বাক্যে তব কিবা কাম।
বিবী বলে তাহা নৈলে হবে বে আরাম ॥
মিঞা বলে এই কথা লিখিনু মস্তানে।
বহু নারী যাইতেছে তোমার সদনে ॥
মানা করে দিবে যেন নাহি যায় তারা।
আছিল রোখার মধ্যে এমনি মাজারা ॥
লিখিলেন রোখা সেই মম বরাবরে।
আপন বিবীকে নাহি পার রাখিবারে ॥
অন্য অন্য নারীগণ হাজার হাজার।
কেমনে শুনিবে মানা বলহে আমার ॥
তাই আমি হাসিলাম তাই হাসে সেই।
হাসিলেন বিবীমিয়া কথা মধ্যে এই ॥
হুড় জঙ্গ ধর্ম বাদ হালাল হারাম।
বলে অন্যে নাহি হেরে আপনার কাম ॥
নিজ রিপু, নফছয়ার নাহি শুনে বাত।
অন্যের পুণ্যের জন্যে সাধনে দাওয়াত॥
এক নারী বশ যার না রহে সরায়।
অন্যের দাওয়াত লজ্জা পুণ্যের আশায়॥
পুণ্য কামে শূন্য যেই রিপু ধর্ম তার।
রিপু মদে মত্ত সেই রিপুর সংসার॥
একে অন্যে কহি যারে আকাক্সক্ষা যাহার।
হবে না ধর্মের দেশ তার অধিকার॥
যে জন ধর্মের দেশ করিছে আসন।
ধর্ম মদে সদা তাঁর মত্ত মন তন॥
তৃতীয় সংস্করণ
হযরত মেহেদির এই সময় নিশ্চয়।
জাহের হওন তান হালে পরিচয়॥
হাদিছ কোরানে যত আগামী খবর।
দরবেশ অলীর বাক্য সেই বরাবর॥
কত সনে কত দিনে আলামত তার।
কোন্ রূপে কোন্ দেশে আগমন আর॥
কে হবে সঙ্গের সঙ্গি, খলিফা ইয়ার।
ফকির হবেন তাঁর সঙ্গে মদদ্গার॥
বেলায়েত যেই দ্বীনে নবী মোস্তফায়।
করিলেন করিবেন তাঁর পায় পায়॥
লোপ হয়ে যেই দিন গেছে একেবারে।
ইহকালে আসিবেন উদ্ধারিতে তারে॥
দ্বীন নামে রহিয়াছে যেই মাত্র দ্বীন।
উদ্ধারিবা জানাইবা আনওয়ার একিন॥
সে নূরে উজ্জ্বল হবে এ ভব সংসার।
এ সংসারে অন্ধকার রহিবে না আর॥
নূর দ্বীনে অন্ধকার রহিতে না পারে।
অন্ধকারে অন্ধকার নূর দিবে কারে॥
ধর্মজ্ঞান সার নূর ভাগ্য নহে যার।
উদ্ধারিতে সাধ্য নহে কোন গুনাগার॥
অন্ধকার গৃহ আদি যথা অন্ধকার।
সার নূর বিনা তাহা হবে না উদ্ধার॥
সেই নূর সেই দিন, সেই ধর্ম সার।
যেই নামে মুহাম্মদ সে নাম খোদার॥
যে বিদ্যে পরম পন্থা হয়ে যাবে ভুল।
কখনো এমন বিদ্যা, নহে ধর্ম মূল॥
তাই এ সংসার জুড়ে যত বিদ্যাবান।
অধঃপাত বিনা কার নহে পরিত্রাণ॥
তাই তাহা উদ্ধারিতে আসিবেন অলী।
শত শত বিদ্যাবান আন্ধার সকলি॥
নহে কেন হইবেন এবে আগমন।
প্রজ্বলিত দ্বীন যদি রহিত রৌশন॥
এলেম কপট এই দ্বীন হতে দূর।
প্রকাশ্য এলেমে নাহি ভিতরতে নূর॥
নূর পেতে শিখে যারা দূর পড়ে যায়।
কপট এলেমে নূর পাইবে কোথায়॥
প্রেম রসে যাও এবে, মমিন সকল।
পূর্ণ রস এস্ক বিনা পাইবে না ফল॥
এস্কের এলেম নৈলে নহে তার দ্বীন।
এস্কেনূর যার দেলে সে জন মমিন॥
সে এলেম নাহি যার নহে দ্বীনদার।
কপট এলেম তাই হাদিছ মাঝার॥
বিষম কপট বিদ্যা মূল নূর দ্বীনে।
হইবে না দ্বীনদার এস্ক রস বিনে॥
তাই তান ইহকালে হবে আগমন।
পৃথিবীর শেষ এই হইবে পতন॥
পতন হইতে আর বহু দেরী নাই।
শেষ মূল আলামত সবে বলে যাই॥
নয় হাজার সন হেন পুরুষ আদম।
ইহ ভবে আগমন কিছু বেশ কম॥
ষাইট গজ লম্বা যার অজুদ শরীর।
এক গজ রহিছে না লোক পৃথিবীর॥
ষাইট গজে একগজ রহিতে না পারে।
পিপীলিকা মত হবে কত দিন পরে॥
পিপীলিকা মত যদি হইবে মানুষ।
কেমনে ব্রহ্মান্ড রবে কর দেখি হুঁশ॥
হয়ত মানুষ হবে পতন নিশ্চয়।
নয়ত পৃথিবী হবে ফানা সমুদয়॥
দ্বিতীয় কথা
হিন্দুস্থানে মানুষের হবে কদ মাপ।
ঐ দেশে আদমের বাস্তব্য প্রতাপ॥
হওন মরণ হবে যেই দেশে যার।
সেই দেশ জুড়ে হবে নমুনা তাহার।
আদমের কাল হতে মোস্তফার কাল।
বেশ কম কিছু হবে সাত হাজার সাল॥
ষাইট গজে তিন হাত রহিল শরীর।
তাই ছিল ষাট গজে হাদিছ নবীর॥
হযরত আদমের শরীর এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির মাপ ও পরিমাণ নিম্নে দেওয়া যাইতেছে ঃ
শরীর ………………………… ১২০ হাত
হস্ত …………………………… ৩৪ হাত
আঙ্গুলি ……………………….. ৫.৫ হাত
পত্রপত্রি ………………………. ১৭ হাত
চলন ও ভ্রমণ
কদম প্রতি …………………………. ৫১ হাত
মাইল প্রতি …………………………. ৬৭ কদম
দিন প্রতি …………………………… ১৬৮০ মাইল
মাস প্রতি ………………………….. ৬০৪৮০০ মাইল
এমন কোন নৌকা কিম্বা জাহাজ বোধহয় কোথাও নাই যে, যাহাতে তিনি সামাই হইতে পারেন।
পেশগুই (ভবিষ্যৎ বাণী)
স্বর্গীয়
হযরত এমাম মহিয়াদ্দিন আরবী সাহেবের নিজকৃত ফতুয়াতে মক্কিয়া নামক কেতাবে
অজারল মেহদী বলিয়া যে কতেকগুলি কথা বর্ণিত হইয়াছে, তাহার কিঞ্চিত বিবরণ
লিখা যাইতেছে। তিনি স্পষ্টাক্ষরে লিখিয়া গিয়াছেন যে, ওছমানিয়া রাজ্যের
দ্বিতীয় আবদুল হামিদ খাঁন ৩২ বৎসর কাল রাজত্ব করিয়া মাজুল হইবেন এবং ঐ
মাজুল হওয়ার অষ্টম বৎসর সময়ের মধ্যে আরও দুইজন সুলতান ক্রমাগত ঐ সিংহাসনে
আরোহণ করিতেই হযরত এমাম মেহদী কলকী অবতার প্রকাশ হইবেন। সেমতে সুলতান আবদুল
হামিদ খান ঠিক ৩২ বৎসর কাল স্থিতি থাকিয়া তিনি সিংহাসনচ্যুত হইলেন। অর্থাৎ
ইংরেজী ১৮৭৭ সালে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ১৯০৯ সালে মাজুল হন।
পুনরায়
লিখিয়াছেন যে, হিজরী ৩৫ সনেই হযরত এমাম মেহদী সাহেব প্রকাশ হইবেন। আবার ঐ
সেখ আরবী সাহেব ইহাও প্রকাশ করিয়াছেন যে, যখন সুলতান মুহাম্মদ রশিদ
তক্তনিশী হইল তাহার কিছু কালের মধ্যেই অর্থাৎ হিজরী ১৯ সনে তাঁহার
রাজত্বকালে ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ হইয়া ঐ যুদ্ধেই পরাজয় হইবেন এবং ৩০ সনে
কিঞ্চিত জয়লাভ করিবেন কিন্তু আবার ৩১ সাল হইতে পৃথিবী জুড়িয়া লড়াই উপস্থিত
হইবে। এমন কি সমুদয় ইউরোপীয়ানদের একতা একেবারেই লোপ পাইয়া যাইবে। কিন্তু ঐ
১৯ সনের বুলগিরিয়ান গীং শত সহস্র মুসলমানদিগকে অযথা হতাহত করিবে, বরং (আম
কাতল সমুদয় সহকারে) একত্রে হতাহত করিবে, বরং ফলেও তাহাই হইয়াছে। এই হিসাবে
সেখ (মং) সাহেবের পেশগুই অর্থাৎ (ভবিষ্যৎ বাণী) বর্ত্তমান সন হইতে ৫৮১ বৎসর
হইয়াছে অর্থাৎ ৫৮১ বৎসর পূর্বেই বলিয়া গিয়াছেন। এইরূপ হযরত শাহ্ নেয়ামত
উল্লা সাহেবও লিখিয়াছেন এবং শাহ্ নিজামুদ্দিন আউলিয়া সাহেব (মং) এরূপই
নির্দ্ধারিত করিয়া গিয়াছেন। কেহ কেহ ১৩৩৫ হিজরী ও ১৩৪০ পর্যন্তই এমাম
সাহেবের প্রকাশের শেষ পক্ষ নির্দ্ধার্য্য রহিয়াছে এবং ৪০ বৎসর অতিরিক্ত যে
আর কেহ লিখিয়াছেন, এইরূপ দেখা যাইতেছে না। আবার জার্মানের কয় সাহেবের বড়
মন্ত্রীর একজন প্রধান শীর্ষ ট্যালেষ্টট সাহেবের পেশগুই (ভবিষ্যৎ বাণীতে)
লিপিবদ্ধ করিয়াছেন যে, আমি দিব্য চক্ষে দেখিতেছি যে ইংরেজী ১৯১২ সনে লড়াইর
একটি মালা ফুটিয়া উঠিতেছে। পৃথিবীর কাল নদীতে একটি সুন্দরী ভাসমান, তাহার
পশ্চাতে সমুদয় সংসার ধাবমান হইয়াছে, ইব্রানী ভাষায় তাহাকে গোগ মাগোগ কহে।
আমি দিব্য চক্ষে দেখিতেছি যে, উনি ইউরোপের দক্ষিণ পূর্ব কোণে আপন
রাজকার্য্য করিতেছেন। আবার আমি ইহাও দেখিতেছি যে দশ বৎসর কাল সময়ের মধ্যেই
সমুদয় পৃথিবী তাঁহার শাসনে আসিবে। এবং তাঁহার ধর্ম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম
পৃথিবীতে বর্তমানে থাকিবে না। আমেরিকা’বাসী পন্ডিতগণ পুনরায় তৌরাত নামক
গ্রন্থ হইতে উদ্ধার করিয়া হযরত এমাম সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণী প্রচার করিয়াছেন
যে, তৌরাতে ৬/২৭ আয়াতের শেষ ভাগে লিখিত আছে যে, ১৯১৫ খৃষ্টাব্দে ইউরোপের
রাজ-রাজাদের মধ্যে একতা একেবারেই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইবে এবং পশ্চিম
দেশবাসীগণ, পূর্বদেশবাসীগণকে হীন চক্ষে দৃষ্টিপাত করিত, সেই অহঙ্কার
একেবারেই ভূমিসাৎ হইতে হইবে।
পেশগুই (ভবিষ্যৎ বাণী)
পূর্ব দেশীয়
৩২ কোটি নর-নারী এবং চীন ও জাপান একত্রিত হইয়া ঐ ইউরোপকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন
করিয়া দিবে। এবং হর মাগিদনের দিকে ধাবিত হইবে সেই সময় বিধর্মির এক ধর্ম
ভিন্ন আর অন্য কোন ধর্ম পৃথিবীতে বর্তমান থাকিবে না। এবং দশ বৎসরের মধ্যে
সমুদয় রাজ্য ঐ বিধর্মির হস্তগত হইবে। আবার ফার স্থানের জরতস্ত নামক আতস
পূজক পন্ডিতের বিধান মতে এই রূপই নির্দ্ধারিত হইয়াছে। ফল কথা সমুদয় ভাগ্য
খোদাতালার হস্তে নেস্ত রহিয়াছে। কিন্তু তবুও বলিতে হইবে যে, কার্য্যরে ফল
তাহার ক্রিয়া ক্ষেত্রেই ফলিতে থাকে, কালের ফল কালেই ফলে। সময়
আসিলে
বুঝিবার একটি উৎভাবনা হইয়া উঠে। কিন্তু কালের পরিমাণ যাহারা না জানেন
কিম্বা কালের গৌরবে গৌরবান্বিত নহেন তাহাদের শুষ্ক চর্মের ন্যায় শরীর
সমাজের কোন পক্ষপাতি নহে। আবার ইঞ্জিল নামক কেতাবে ইহাও বর্ণিত রহিয়াছে যে,
যেই ধর্মের গৌরব, অর্থাৎ সার পদার্থ অটলভাবে দন্ডায়মান থাকিবে, সেই ধর্মই
চিরস্থায়ী ধর্ম বটে। তাহার গৌরব পৃথিবীতে সোনাতন ধর্ম বা নূরী ধর্ম গুণে
বিরাজমান থাকিবে। সুতরাং ঐ ধর্মাবলম্বীদের হস্তে বাইতুল মোকাদ্দেসের শাসন ও
রক্ষণ নিয়ত স্থির রহিবে। আবার ঐ গ্রন্থে ইহাও বর্ণিত আছে যে, ঐ অটল ধর্মের
শেষ পক্ষে তাঁহার মর্যাদা রক্ষা করিবার জন্য এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করিবেন।
সেই ব্যক্তিই ঐ অটল ধর্ম বলে অন্যান্য ধর্মগুলিকে বিলুপ্ত করিয়া নিজ ধর্ম
বল প্রকাশ করিতে সক্ষম হইবেন। তাহার বিকশিত হইবার লক্ষণ এই যে, আদম
শুমারিতে ঐ ধর্মাবলম্বীদের হার গণনায় বিলক্ষণভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে।
সুতরাং বর্ত্তমান সময়ে দেখা যাইতেছে যে, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের হার প্রায়
দুয়ানা হারে বৃদ্ধি পাইয়াছে। আবার বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সমুদয় জাতির মধ্যেই
এক আনা কি দেড় আনা হারে লোক সংখ্যা কমিয়া গিয়াছে। ইহারই বা কারণ কি? অথচ
হিন্দুজাতি সকল জাতি অপেক্ষা একেবারেই হ্রাস হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অর্থাৎ
তাহাদের হার গণনার দুয়ানা দুয়ানা হারে কমিয়া গিয়াছে। তবে কি ঐ জাতির গৌরব
সত্বরই লোপ প্রাপ্ত হইবে? ফল কথা ইঞ্জিলের ভবিষ্যৎ বাণীর ফল উপস্থিতির বোধ
হয় বর্তমান কালই যথার্থ। আবার হিন্দু ধর্মানুসারেও স্পষ্টরূপে প্রমাণ পাওয়া
যাইতেছে। যথা কল্কী পুরাণ এবং অন্যান্য শাস্ত্রে লিখিত আছে যে, পৃথিবীতে
কল্কী অবতারের বিরাজমান কিংবা আগমনকাল উপস্থিত হইতেই অন্য কোন ধর্ম বিশিষ্ট
বা জাতির প্রথার সার্থকতা কিম্বা মর্যাদা স্থির থাকিতে পারিবে না। কারণ
সোনাতন ধর্মের অস্তিত্বেই পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম বিলোপ প্রাপ্তি হইবে। যেহেতু
অন্যান্য ধর্মগুলি ঐ ধর্মের অস্তিত্বেই লোপ হইয়া সোনাতন বা নূরী ধর্মে
নিরোপিত হইবে তখন যাবতীয় ধার্মিকগণ ঐ সত্য ধর্মের সাথে বিজড়িত হইয়া
একচিত্তে ও সরল অন্তঃকরণে একাচার ও এক ধর্ম অবলম্বন করিবেন। যেহেতু ঐ
ধার্মিকগণ পরকাল অনুরাগে মাতিয়া উঠিবে। সুতরাং ঘোর কাল নিদ্রার বন্ধন
রসিগুলিকে একেবারেই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করতঃ চির জাগরিত হইয়া অক্লান্তির
কুশাসনে আরোহণ করিবেন। আবার কেহু কেহু এ সোনাতন ধর্মকে ম্লেচ্ছ ধর্ম নামে
উপাহিত করিয়াছে। মোস্লেম শব্দ হইতে ম্লেচ্ছ শব্দ “মোস্তাক” বাহির করা
হইয়াছে। নতুবা ম্লেচ্ছ অন্য কোন শব্দকে বলিতে হইবে। কেহু কেহু ম্লেচ্ছ
অর্থে পাহাড়ী ও খন্ডলী জাতি বলিয়া বিবেচনা করিয়াছেন, কিন্তু এই কথার
সার্থকতা কত দূর সত্য তাহা আমরা বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না কারণ ঐতিহাসিক
প্রণালীতে দেখা যাইতেছে যে, হিন্দু ধর্ম পাহাড়ী বা খন্ডলী লোক দ্বারাই
ক্রমান্বয়ে পরিপূর্ণ হইয়াছে। অতএব ঐ হিন্দু ধর্মের মর্যাদা স্থির থাকিতে
পারে নাই। তবে যে ধর্মকে সোনাতন ধর্ম অথবা পরকাল সঞ্চয় বলিতে হইবে তাহাকে
ঘৃণিত চক্ষে দৃষ্টিপাত করিলে কিম্বা তাহার অস্তিত্ব রক্ষা না করিয়া
গর্ত্তের সর্পের ন্যায় ঘোর নিদ্রায় মাতিয়া রহিলে আর কি প্রকারে নূরী ধর্মের
সার্থকতা বজায় থাকিবে। হ্যাঁ অবশ্যই যদি কোন অসভ্য জাতি হইতে নূরী ধর্মের
আদিত্বতা সৃষ্টি হইত কিম্বা অমূলজনক কোন কার্য্যে পরিণত হইত তাহা হইলে আজ ঐ
পুরাতন ধর্মের নাম নূরী ধর্ম বা সোনাতন ধর্ম বলিতে হইত না। কারণ সভ্যশক্তি
না থাকিলে কাহারও সভ্যতা গুণ বিশিষ্ট তাহা হইতে আকর্ষিত হইতে পারে না।
দেখুন যে ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কিম্বা তাঁহার সোনাতন ধর্মকে অবহেলা
বা নিন্দা করিতে অকুণ্ঠিত নহে তাহাদিগকে আজ দেখা যাইতেছে যে, ঐ ধর্মের
কুহুকে পড়িয়া ঐ ধর্মাবতারের কোমল চরণ সেবা করিতে বৈরাগী হইয়াছেন। হে সভ্য
তোমার সভ্যতা কস্মিনকালেও বঞ্চিত হইবে না, তোমার ঐ ধর্ম সোনাতন ধর্ম। উহাই
পরকাল উদ্ধারের একমাত্র উপায়। কোরান বা অথর্ব্ব বেদানুসারে হযরত এমাম মেহদী
সাহেব ঐ ধর্মপ্রথা শেষ করিবেন। ইহা কোরান ও নবী সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণীতে
প্রকাশ হইয়াছে। হে মানবগণ আসুন, আজ আমরা এই তীর্থে যাত্রা করিয়া এক মেলায়
বা এক মন্দিরে মহানন্দে পরম সুখে গান করি এবং এক মনে এক প্রাণে মিশিয়া যাই।
‘জগতে আর কিছুই না থাকুক’ একমাত্র বন্ধুত্বই থাকুক। হে বান্ধব। তোমার
বান্ধবিতা ভিন্ন জগতে আর কি আছে? হে বান্ধব আস। বান্ধবিতাই পরকালের মহাধন।
বান্ধবিতা ভিন্ন নিস্তারের আর অন্য কোন উপায় নাই তাই তুমি আমার বান্ধব হও
আমি তোমাকে বন্ধু বলিয়া ডাকি। হে প্রিয়ে আস। আমরা মহানন্দে আপন আপন
গৃহকার্য্য করি! ঘরের কলহ মহাদোষ। হে বান্ধব। বন্ধুর অনুগ্রহ সুধা ভক্ষণ
কর। হে সখা। দেখত। সত্যই কি বন্ধু বৃক্ষে অমর ফল ফলিতেছে কি না। হাঁ
প্রিয়ে। অবশ্যই প্রিয়ে কল্যাণে ঐ কল্প তরুর শাখায় অমর ফল ফলিয়াছে। “রে
দোস্ত” মান থাকিলে দুস্তি কৈ। দোস্তের মান নাই, অপমান নাই, ঘৃণা নাই,
অসত্যতা নাই, আছে মাত্র সরলতা। আবার এক হইতেই একতা স্থির হইয়াছে। একের
শাখাই ২। ৩। ৪। ইত্যাদি অগণা ফল বলিয়া পরিচয় দিতেছে। উহার গোড়া এক, জোড়ায়
দুই। জোড়া স্থলে গোড়, বিস্মরণ হইও না। রজ গুণ প্রথম গুণ নহে। অর্থাৎ রজ,
সত্য, ত্বম, এই তিন গুণ বৃক্ষের শাখার ফল মাত্র। যেহেতু রজগুণের স্বার্থের
স্বার্থি ব্যক্তি ধর্মদেব জন্ম করিয়া পরিণত করিতে অপারগ, তাই সত্য গুণ
স্বার্র্থের রক্ষক বা পালন কর্ত্তা যে বিষ্ণু তাই তাহা দ্বারাই রক্ষা হইয়া
থাকে। আবার যদি এই দুই গুণ বিশিষ্ট স্থূল পদার্থ গুলি ধ্বংস করিতে ত্বম
গুণের প্রয়োজন হয়, তবে আবার রজ গুণ পদার্থের প্রথম গুণে ধর্মই যদি ঈশ্বর হন
তবে বিষ্ণু কিম্বা মহাদেব আবার তাহারাই বা কেহ ঈশ্বর সর্বগুণে গুণী এবং
তিনি অদ্বিতীয় পদার্থ। সর্ব গুণ ব্যতীত পৃথক পৃথক গুণে বা ২। ৩। ৪। ৫ কিংবা
খন্ড ও সীমাবদ্ধ গুণী ঈশ্বর হইতে পারে না। এই বিশ্বাসের ঐ ধর্মাবলম্বীদের
পরকালীন রাস্তাগুলি রুদ্ধ হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এইরূপে মোসলেম ধার্মিকগণেরও
কতেকগুলি ভ্রান্তিপথ অবলম্বনে পরকালের পথ ক্রমান্বয়ে বন্ধ হইয়া গিয়াছে।
তাঁহার নিজ পুণ্য ব্যতীত অন্য কাহাকেও পুণ্যবান বলিয়া মনে করে না। সুতরাং
নামাজ রোজার মূল পদার্থে একেবারেই অজ্ঞান। সেই জন্য ইসলাম ধর্মের স্বার্থ
কিম্বা মূল পদার্থে যাহারা বিজ্ঞ তাঁহাদের কৃপায় ঐ ধর্ম বর্তমানেও সর্ব
শ্রেষ্ঠ এবং তাঁহারাই সোনাতন ধার্মিক বা আউলিয়া দরবেশ অর্থাৎ সাধু ও
ন্যায্য পথগামী বটেন। অতএব, ঐ ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করিবার জন্যেই এমাম
মেহদী সাহেব এই জগতে আগমন করিবেন। হিন্দু গৃহে জন্ম হইলেই রাম নাম উচ্চারণ
করিতে হয়। মুসলমানের বীর্যে জন্ম হইলেই আল্লাহ্র নাম জপ করিতে হয়। তবে কে
জানে, কে কি হারে কোন গৌরবে ধর্ম রক্ষা হয়। আমি মহা সমুদ্রে পতিত হইয়াছি।
এবং এই সমুদ্র পার হইতে না পারিলে তটে দাঁড়াইলে আমিই বা কে, আমরাই বা কে?
খোদা তুমি রক্ষাকর্তা, তুমি আমাদিগকে এই মহাসাগর হইতে উদ্ধার কর। আমিন। ফল
কথা, খোদা এক বস্তু এবং সর্ব চূড়ান্ত এক অটল পদার্থ অর্থাৎ তিনি এইরূপে এক
অদ্বিতীয় পদার্থ যে তাহার যোগ্য অন্য কোন জিনিষ আছে এরূপ কথা কখনও স্থির
হইতে পারিবে না। সুতরাং প্রথম পদার্থ বা প্রথম অঙ্কই ঐশ্বরিক পদার্থের
প্রথম গুণ। যেমন এক অঙ্কের অর্থাৎ প্রথম অঙ্কের পূর্বে আর অন্য কোন অঙ্ক
নির্দ্ধারিত হইতে পারে না আবার ঐ অঙ্কের পর যে অঙ্ক অবশিষ্ট থাকিবে অর্থাৎ
অঙ্ক করিতে যে অঙ্ক অবশিষ্ট থাকে তাহাও এক সংখ্যক অঙ্কই থাকিবে। যথা
ক্রান্তি, কাগ গং। তবে এক ব্যতীত আর অন্য কোন অঙ্ক নাই বলিলেই হইবে। আবার
যখন এক গণিতে হয়, তখন ঐ অঙ্কই পদার্থ বলিয়া প্রকাশ হয়। পুনরায় যখন
অবশিষ্টার্থে অমিল অঙ্ক থাকে তাহাকেও প্রকাশ এবং নিরাকার পদার্থ বলিতে হয়। ঐ
অঙ্কই নিরাকার সার পদার্থ (মণি) বলিতে হইবে। এই জন্যই পবিত্র কোরানে কথিত
আছে, “ওয়াল্লাহু বেকুল্লে সাইয়েন মুহিত” অর্থাৎ, ঈশ্বর সকল পদার্থে বিরাজিত
আছেন। আবার (ঐ পরম খোদা) সকল জিনিষের প্রথম পদার্থ বটেন। তাই কোরানে প্রথম
বলিয়া বর্ণিত আছে। “হুয়াল আওয়াল” অর্থাৎ, খোদাই সকল জিনিষের প্রথম পদার্থ।
“হুয়াল আখের” অর্থাৎ, তিনিই সকল বস্তুর শেষ পদার্থ। “হুয়াজ্জাহের” অর্থাৎ,
প্রকাশ্য ও ব্যক্ত অর্থাৎ তিনিই সর্বময় প্রকাশ্য। এই স্থলে অন্ধের সঙ্গে
কোন তুলনা নাই। “হুয়াল বাতেন”। অর্থাৎ, তিনি অপ্রকাশক মূল ও স্থূল পদার্থ
বটেন, অর্থাৎ আকার কিম্বা নিরাকার বলিতে হইলে ঈশ্বর ভিন্ন অন্য কেহ অটলভাবে
বর্তমান বা মৌজুদ থাকিতে পারে না। কিন্তু যে ব্যক্তি পরমেশ্বরকে গুণহীন
বলিয়া মনে করিয়া থাকেন তাহারা আদৌ খোদার ব্যাখ্যা করিতে শিখেন নাই। বরং
উহারা ধর্মকে ডাল-খিচুড়ি রূপে পাকাইয়া যথার্থ পথ হইতে ভ্রান্তিজনক জ্ঞানে
পরমেশ্বরকে অপদার্থ বলিয়া নিরোপিত করিয়াছেন। আবার যাহারা এই অমূলক রহস্যের
শ্রাদ্ধে কাতার দিয়া চলিয়াছেন, তাহারা আর কখনও জাগরিত হইতে শিখেন নাই। হে
বন্ধু। গুরুপদ ভক্তি কর, ধর্মজ্ঞান লাভ করিতে পারিবে। গুরুর মহিমা জানিতে
পারিলে ধর্মের ফল প্রাপ্তি হইতে পারা যায়। তাই ইসলাম ধর্মের ফল গুরুর হস্তে
অর্পণ করা গিয়াছে। ইহাই কোরান তত্ত্বজনক দ্বীন মুহাম্মদী নূরী বা সোনাতন
ধর্ম নামে অভিহিত হইয়াছে। ইহা ব্যতীত কাহারও পর মুক্তির আর কোন পথ দেখা
যাইতেছে না। তাই হিন্দু ধর্মের মূল শাস্ত্রও ইহারই পক্ষপাতি, যথা ঋৃগ-বেদ।
আবার ইহুদী ধর্মের মূল শাস্ত্র তৌরাত কেতাব ও খৃষ্টান ধর্মের মূল শাস্ত্র
ইঞ্জিল নামক গ্রন্থ দ্বীন মুহাম্মদীরই পক্ষপাতি। অর্থাৎ উল্লিখিত শাস্ত্রে
স্পষ্টরূপে বর্ণিত আছে যে সকল ধর্মের শেষ পক্ষে যে অবতার আসিবেন তাঁহার নাম
আহাম্মদ ও মোহাম্মদ। তাই তিনি তোমাদেরও ধর্মদেব, উহার ধর্মশাস্ত্র কোরান।
অথর্ব্ববেদ তাঁহার পক্ষপাতি না হইলে কাহারও কোন ধর্ম যোগ্য কিম্বা ফলবান
হইতে পারে না কিন্তু যদি আমরা চিন্তা করিয়া দেখি, তবে তাহা নিশ্চয়ই বুঝিতে
পারিব যে, অথর্ব্ববেদই মূল ধর্মের একমাত্র সঞ্চয় বলিতে হইবে। কেননা যখন
উল্লিখিত বেদ ধর্ম মূল শাস্ত্রে পরিগণিত, আবার সকল শাস্ত্রই তাঁহার অনুকুলে
দাড়াইয়া তাঁহার দোহাই দিতেছে। এখন যদি আমরা তাহা কর্ণপাত না করিয়া, কেবল
অযথা সিদ্ধান্তে নীরব থাকি তাহা হইলে আমাদের আর পরকালের কোন উপায় আছে?
কিন্তু এই বর্তমানে বিষয়গুলি উল্লেখ করা যে কোন গ্রন্থের কত অধ্যায়ে লেখা
আছে, তাহা জায়গা বিশেষ উল্লেখ করা যাইবে।
নবী সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণী। হাদীছ।
ছেহা ছেত্তা নামক ছয়টি কেতাবে
এই রূপেই বর্ণিত আছে।
হাদীছেতে কেয়ামত, আলামত যত।
লিখিলে সেসব কথা, হতে হয় হত ॥
ভূমিকম্পে মাটি ডেবে যাইবে যখন।
স্থানে স্থানে বহু দেশ হইবে পতন ॥
হইয়াছে যথা এবে, আগোচর নাই।
হিন্দ কি আমেরিকা দেশ, ইউরোপে তাই ॥
কত দেশ ডুবে ছিল, কত গেল তল।
উচা নীচা হল কত, কত হইল জল ॥
কত লোক মারা গেল কত পশুজাত।
দেশ দিগে হয় গেছে, লোকের সাক্ষাত।
ছুটিবে গরম হাওয়া, মরিবে পরান।
আমেরিকাতে এবে তাহা হ’ছে বিদ্যমান ॥
শত শত গাঁয় গাঁয় গরম হাওয়ায়।
পুড়ে গেল ঘর বাড়ী, অনেক জায়গায় ॥
কত লোক দেশ ছেড়ে পলাইল যারা।
সেই স্থানে জ্বৈলে পুড়ে, মরিলেক তারা ॥
তের ছদি এগার কি হবে বার সন।
বঙ্গদেশ উত্তরেতে গরমে মরণ ॥
এক লাল মেঘ সনে গরম তুফান।
বহু পরানীর তায়, উড়িল পরান ॥
মনুষ্য কি জীব জন্তু, জলে মরে মীন ॥
জল তত্ত্ব যে বাতাসে, হল সেই দিন ॥
কেয়ামতের নিশান
হাদীছ
রমজানের
একমাস মধ্যেই শুক্রবার দিন চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য্য গ্রহণ হইবে বলিয়া “দারে
কতুনী” নামক গ্রন্থে যে বর্ণিত আছে তাহাও প্রকাশ হইয়া গেল। যথা বাঙ্গালা
সন ১৩০০ সনের ৯ই চৈত্র ১৩ই রমজান দিবা গত রাত্রে চন্দ্র গ্রহণ হইয়াছে। আবার
ঐ সনের ২৪শে চৈত্র ২৮শে রমজান শুক্রবার দিন সূর্য্য গ্রহণ হইয়া গিয়াছে।
বাকি ছফিনা পুস্তকে দেখুন।
নবী সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণী
পূর্ব দিগের এক অগ্নি, পশ্চিমের টান।
কেয়ামতের এই দেখ, প্রথম নিশান॥
এক অগ্নি নেকালিয়া, লোক টেনে নিবে।
পূর্ব হতে খিচে লিয়া, পশ্চিমে যাইবে॥
কেহু কেহু বলিয়াছেন সেই অগ্নি রেল।
সত্য বটে এই বাক্য, বুঝন মস্কেল॥
যে অগ্নি পশর হবে, উটের গলায়॥
সেই উট লোক দিকে টেনে নিয়া যায়॥
ইহাতেই বুঝা যায় সেই উট রেল।
ইসারা হাদিছ এই বুঝন মস্কেল॥
কেয়ামত আসিবে না বচন যৌবুন।
যে যাবত আরবেতে জ্বলিবে আগুন॥
বছ্রা হতে আরবেতে প্রচলিত রেল।
উট সনে এই অগ্নি হইবে তাবেল॥
আরবেতে এই অগ্নি তাবিল বুঝায়।
বছ্রা দামেস্ক মধ্যে রেল শুরু পায়॥
এলেম উঠিয়া যাবে, আগে কেয়ামত।
মুল্লুক গরম হবে, জোরে জেহালত॥
যে বিদ্যার মধ্যে হবে, জাহেলী প্রকাশ।
সে বিদ্যা নামের বিদ্যা করে সর্বনাশ॥
জাহের মৌখিক বিদ্যা, শিখন শিখান।
পৃথিবী জুড়িয়া যবে হইবে বাখান॥
মেহদী আউলিয়া নূর হবেন জহুর।
এই সে কপাট বিদ্যা নূর হতে দূর॥
যে বিদ্যা অধর্ম পথ সতত নিপুন।
পৃথিবীতে তার গুণ রবে পুনাপুন॥
তার বলে বলীয়ান পৃথিবীর বল।
ধর্ম নামে পরিণামে কার্য্য ফলাফল॥
সেই ফলে ইহকালে মাতিয়াছে যারা।
এমামের নূর আগে হইবে আন্ধেরা॥
যদি ধর্ম তার মর্মে রহিবে নিশ্চয়।
পাইবেন সার তার, ফলে পরিচয়॥
সূফী বিদ্যা বলে অলী মেহদী জোরওয়ার।
সেই বল প্রকাশিবে পৃথিবী মাঝার॥
সংসার গোলজার হবে নূর অধিকার।
বিলোপ হয়েছে যাহা দ্বীন মুস্তফার॥
বেলায়াত শানে নূর হইবে জহুর।
পৃথিবী রৌশন হবে নূর-আলানূর॥
বেলায়াত শানে শান মউদ এমাম।
মেহদী বলিয়া নাম যার পরিণাম॥
তাঁর পরে ইছা নবী হবেন প্রকাশ।
বেলায়াত খতমের হইতে আকাশ॥
হামিদ নামে অলী হবে তাঁর নাম।
কেয়ামত কত দিন রহিবে তামাম॥
নবী
সাহেবের ভবিষ্যৎ বাণীতে ইহাও বর্ণিত আছে যে, এমাম মেহদী সাহেবের আগমনের
কিছুকাল পূর্বে দুইটি অযথা লোক এমাম বলিয়া দাবি করিবেন কিন্তু বর্তমান কালে
তাহাও প্রকাশ পাইল ঃ যেমন কাদইয়ানী সাহেব আর একজন আফ্রিকা বাসী সৈয়দ
আহাম্মদ নামক কিন্তু উনি সৈয়দ সেনোছি নহেন।
মহরমের খোদবা
প্রেম বিরহ মেঘ, ঘনাকাশে যার।
পবন তরঙ্গ তার ভাঁটার জোয়ার॥
জোয়ারের জলে বাঁধ কেবা দিতে পারে।
ধরাতে না ধরে জল বিলাস আষাঢ়ে॥
বিরহ আসনে যার মেঘের সঞ্চার।
আকাশ-পাতাল জুড়ে তার অধিকার॥
যেহেতু যাহার সনে করেন বিলাস।
তাহার আদর দেশ তার অভিলাষ॥
যে কালের যেই গুণ আদর তাহার।
আকেঙ্কা ভুবনে তার হয় অধিকার॥
আম কালে আম রস, জাম কালে জাম।
নারিকেল তাল, বেল, কাঁঠাল, বাদাম॥
যে বীজের সেই খুবী রবে চিরদিন।
যে দিন যাহার জন্ম সেই তাঁর দিন॥
যে দিন যাহার শেষ হবে ভব লীলা।
সে দিন তাহার গুণ, রবে ভব খেলা॥
হওন মরণ দুই গুণের বিষয়।
ইহকাল পরকাল গুণ সমুদয়॥
সেই গুণ এই ভবে রহিয়াছে যার।
স্মরণ রহিলে হয় তাঁর অধিকার॥
যে ঘর স্মরণ যার মধু রসময়।
কেমনে না পাবে স্বাদ আসিলে সময়॥
এসেছে সময় স্বাদ, দেলবর নবীর।
আস আস অলীগণ আসেক আলীর॥
যেদিন আলীর তনু, মোস্তফার নাতী।
আন্ধার করিয়া গেল পৃথিবীর বাতি॥
সে দিন স্মরিবে যেই স্মরণ যাঁহার।
এই সে কঠিন কাল নবী মোস্তফার॥
এই যে বিষম কাল, ফাতেমা খাতুন।
এই সে তোমার দ্বীন হইল যুবন॥
এই সে তোমার কাল কাঁদিবে সদায়।
এই সে তোমার নূর ফুরাইয়া যায়॥
এই যে তোমার যায়, কোলের কুমার।
না হেরিবা ওগো মাগো না হেরিবা আর॥
হেরে লও ওগো মাতা আখের ভান্ডার।
দেখিবে না ওগো মাতা এ ভবেতে আর ॥
মুখে হাসি, হাসি মুখী ফুরাইয়া যায়।
কাঁদিছে বিষাদ শোকে, নবী মোস্তফায়॥
আসিল বিষম দুঃখ, দুঃখ চিরকাল।
হইল নবীর বংশ সুখের কাঙ্গাল॥
ধনের কাঙ্গাল নহে আওলাদ নবীর।
কাঙ্গাল কাঙ্গালে হয় ফাতেমা বিবীর॥
ফাতেমা কাঙ্গাল তাই ছিদ্দিক কাঙ্গাল।
ওছমান কাঙ্গাল বন্ধু হারায় জামাল॥
রে ওমর আদরের ফুরাইল ধন।
আর না দেখিবি সাধে কোমল চরণ॥
জীবিতে স্মরণ কর জীবিতে মরণ।
আদরে সাধের রৌক সাধের স্মরণ॥
আদর যাহার সাধ বন্ধুর আদর।
সমান আদর তাঁর রবে বরাবর॥
শয়ন গমন যাঁর রবে না স্মরণ।
এ সংসারে কভু নহে সেই বন্ধু জন॥
আরম্ভিতে কাল সাল বৎসর প্রথম।
কি ক্ষণে আসিল কাল মাহে মহরম॥
কেন কাল মহরম, করিলি বিষাদ।
কি লাগিয়া হরে নিলি মনের আহ্লাদ॥
ওহে কাল ইহ ভবে, যত দিন রব।
মহরম কাল তুই, তোরে আমি কব॥
তাই তোরে কহিছেন কেন্দে মোস্তফায়।
মহরম কাল নাম রহিবে সদায়॥
কেয়ামত তক্ রবে, এ কাঁন্দন রোল।
হইবে না মোস্তফার, হাদিছ ওদুল॥
এ ভাবে ভাবুক যারা ভাবের কাঙ্গাল।
কাঁদিছে বন্ধুর ভাবে লুটাইছে মাল॥
না দিছে বিছানে গাও না থামিছে বুক।
হা হা কার রব রাও না করিছে সুখ॥
বরকতের দুই তনু ভব ছেড়ে যায়।
দেখ এসে তামসিক আখেরী বিদায়॥
গোলে তন হাসান সাহা ভব ছেড়ে যায়।
দেখ এসে তামসিক ভবের বিদায়॥
হলাহল বিষে গোল তনু ছেড়ে যায়।
দেখ এসে তামসিক ভবের বিদায়॥
নূরতন হোসেন আলী বরকতের ধন।
ভাই শোকে কারবালাতে হয়রে মরণ॥
এজিদ জল্লাদ তারে দাগা দিয়া মারে।
খানা পিনা বিনা নূর কারবালাতে মরে॥
না দিল খাইতে দানা তিরাসের জল।
জল্লাদ এজিদ হিয়া কেমন গরল॥
ঘরের বেগমগণ কারবালাতে যায়।
কোলের বালকগণ জল খেতে চায়॥
না দিল খাইতে জল, জল্লাদ এজিদ।
আহা কি গরল হিয়া, চরিত্র পলিদ॥
কোলের বালকগণ কোলে কান্দে মায়।
জল তিরাসে বুক-মুখ শুখাইয়া যায়॥
জল বিনা মীন গতি হইল মরণ।
হেনরূপ জল-পানে, কান্দে শিশুগণ॥
কোথা পানি দাও পানি, আমারে খেলাও।
যথা হতে পার মাগো আমাকে পেলাও॥
বাঁচিবে না তব বাছা, না পাইলে পানি।
কি লাগিয়া নাহি দাও, আমি নাহি জানি॥
কলেজা পুড়িয়া যায় জল বিনা হায়।
কোথা আছে মাতা, জল দাও না আমায়॥
মাতা কাঁদে আহা ধন, কোথা পাব পানি।
কে তোরে পিলাবে পানি, আহা পুত্র মনি॥
দুধের বালক দুধ নাহি পায় স্তনে।
শুখাইয়া গেল দুধ, খানা-পিনা বিনে॥
দুধ না পাইয়া শিশু, জল না খাইয়া।
প্রাণে মরিলা বাছা মুখ শুখাইয়া॥
শিশুগণ মরে হায়, প্রাণ জ্বৈলা যায়।
বিবীগণ কান্দে হায়, ছাতি ফেটে যায়॥
যেবা যথা শোক তনু, ঘরের বেগম।
না পাইয়া দানা পানি, নাকে বহে দম॥
বাহিরে মর্দ্দনা সব জলে মারা যায়।
জল-দেরে জল-দেরে ডাকে সর্বদায়॥
প্রাণ গেল, জল বিনে, এনে দেও জল।
জল বিনা শুখাইয়া মরিল সকল॥
জল ডাক ডাকে সদা জলের কারণ।
জল-দেরে জল-দেরে ওহে বন্ধুগণ॥
কোথায় লুকালি বন্ধু, পরানের জল।
জল-দেরে জল-দেরে মরিল সকল॥
ঘামে সোর ভোর তনু শরীরের জল।
জল বিনা জ্বৈলে গেল, বদন কোমল॥
এক বিন্দু জল যদি এবে বন্ধু পাই।
কাফেরের হস্তে বন্ধু, প্রাণ বাঁচাই॥
কলেজা থামিতে নারি, জল বিনা হায়।
আর দুঃখ ঘরে শিশু, জলে মারা যায়॥
হারে! কি অধর্য্য গতি, চরিত্র এজিদ।
শিশুগণ সনে তব কি হইল জিদ॥
খাইতে না দিল খানা, পেয়াসের পানি।
কেমন পাষাণ তুই, আমি নাহি জানি॥
সোনার পুতুল শিশু, দুঃখ কলেজায়।
মা মা বলিয়া শিশু ডাকিছেন মায়॥
বাপের মোহন চুড়া, ক্ষুধা তনু তাপে।
বা-বা বলিয়া শিশু, ডাকিছেন বাপে॥
সাধের দেলবর নাতি, ধুপ কারবালায়।
না-না, বলিয়া শিশু ডাকিছে নানায়॥
বাহুবল এ সংসারে, ভাই বিনা নাই।
ভাই ভাই, বলিয়া ভাই, ডাকিছেন ভাই॥
সম্বল সারথি, ভবে, অন্য কেহু নাই।
আস আস ভাই ধন, পরানের ভাই॥
হলাহল বিষে তুমি, দিয়াছ পরান।
আমাকে রাখিয়া গেলা, কার বিদ্যমান॥
বাহুবল সঙ্গ সাথি, কে হবে আমার।
সমুদ্দুরে রক্ষা গতি, কে করে কেনার॥
রে সাধের মাতা পিতা, কোথা গেলি হায়।
রক্ষা কর রক্ষা কর প্রাণ জ্বৈলে যায়॥
অনাথ করিয়া মাতা পলাইয়া যাও।
বিষম কঠিনে মাগো, আমারে ত্বরাও॥
ফাতেমা আমার মাতা আমি মৈরে যাই।
জগত জননী মাতা র’লি কোন ঠাঁই॥
মাতা-রস নদীতটে সবে জল খায়।
তব পুত ওগো মাতা জলে মারা যায়॥
দয়া রসে তরি ডিঙ্গে, এনে দাও জল।
খাইলে প্রাণ বাঁচে নাহিলে শীতল॥
দেখ এসে মা-জননী, তোমারে দেখাই।
শিশুগণ গলাগলি, মরে এক ঠাঁই॥
না খাইয়া দানা পানি, না খাইয়া জল।
মরিল মরিল প্রাণ, মরিল সকল॥
কোথা রলি মা-জননী পরান দোসর।
ভাই নাই সে অবধি, আমি একাশ্বর॥
আখেরী সরবত মাগো, পেলাইয়া যাও।
কঠিন কারবালা মাঝে, তরঙ্গ দেখাও॥
ভাব
পাখীগণ চরাঞ্চলে, ঝাকে ঝাকে যায়রে।
জলে-স্থলে যার যথা, সুখে আদার খায়রে॥
ডালে বৈসে মধু গান, খালে মাছ খায়রে।
জল তিরাসে ঘন ঘন জল পানে যায়রে॥
ঝাকে ঝাকে পাখীগণ, সুখে আদার খায়রে।
পবনে ধরিয়া তাও, শূন্যে পাখি ধায়রে॥
কেহ উড়ে কেহ পড়ে, কেহ আদার খায়রে।
কি শোভায় সাজিছে পাখী, আকাশ মেঘ নয়রে॥
ঝাপড়ি ঝুপড়ি বৃক্ষের ডালে, বৈসে ঘুম যায়রে।
আহা, সুখের পাখিরে, তুই উত্তরালি যায়রে॥
মুড়িয়া হেমন্ত ঋতু, দক্ষিণেতে যায়রে।
দিক দিগাম্বর এলে উত্তরালি যায়রে।
বসন্ত দক্ষিণ বায়ু দেশে চলে যায়রে।
দেশের মন পড়ছে এবে, দেশে চলে যাওরে॥
সময়কালে এসে পাখি, চরে আদার খাওরে॥
এসেছিলে চলে গেলে, কেহু কার নয়রে॥
দিন চারি খেলা বেলা, কেবা কার হায়রে।
যাতনা
হারে পাখী, দিয়া ফাঁকি, কোথা চলে যায়।
দেখা দিয়া কি লাগিয়া পালালি কোথায়॥
হারে সোনা, কে-রে টোনা করিল তোমায়।
হারে বন্ধু, ভব সিন্ধু, ত্যাগিলে আমায়॥
হারে বাছা, কেন সাচা রহিলা বিরলে।
হারে দুঃখ, দেখি মুখ, কহ কতুহলে॥
হারে সাধ, অপরাধ, কি হল আমার।
হারে ধন, পোড়ে মন, দেখি একবার॥
হারে মনু, দিও তনু, খঞ্জন রঞ্জনে।
হারে মনি, কুহু ধ্বনি রসের গঞ্জনে॥
হারে সত্য, তুমি তত্ত্ব, তোমারি আশায়।
হারে প্রাণ, দিও দান, দিন বয়ে যায়॥
ঠোঁটে ঠোঁটে কৈয় কথা, মুখে দিও হাস।
হারে কান্ত, দ্বীন শান্ত, তুমি চির আশ॥
ভাব
জাগিয়া জাগিয়া আমায় দিও ডাক।
হাসিয়া হাসিয়া আমায় দিও বাক॥
ধরিয়া ধরিয়া আমায় দিও বোধ।
গলিয়া গলিয়া আমায় দিও শোধ॥
গলায় গলায় আমায় দিও বুক।
বচনে বচনে আমায় দিও মুখ॥
বাছিয়া বাছিয়া আমায় দিও ফল।
তিরাসে তিরাসে আমায় দিও জল॥
পলকে পলকে আমায় দিও তন।
হৃদয়ে হৃদয়ে আমায় দিও মন॥
মরিও আমার সনে জীবিত মরণ।
মরণে আমার তরে রাখিও স্মরণ॥
কালের প্রতি
জোয়ার ফিরিল উজান ধাইল, ত্বরায় আসিল জল।
কুসুম লতায়, পাতায় পাতায় ধরিল শাখায় ফল॥
সরল গগণে, নবীন রতনে, কাঞ্চন বরনে ফুল।
মোহতিউল্লাস, সুতেজ শুবাগ, মোহন আকাশ কুল॥
উদিত গগণে, বিলাশ ভাবনে, বসন্ত পবনে রস।
বিরসে সঞ্চারে, কামের কুমারে, যৌবন বিহারে রস॥
সাধের যৌবনে বিরহ তরুণে আকাশ ভুবনে চান।
যামিনী কমলে কামিনী সরলে তিমিরে উথলে বান॥
আকাশ মন্দিরে, সুকাল সমিরে, চন্দ্র ধীরে ধীরে যায়।
সুখের মিলনে সুখরস দিনে পূর্ণিমা পুরনে পায়॥
ধরায় শুকাল, ফিরিল অকাল, সাধের বিকাইল রস।
রসিক নাগরে, সুখের সাগরে, ডুবিয়া জোয়ারে বস॥
জগত জুড়িয়া, মোহন পুড়িয়া, সোনায় মুড়িয়া লাল।
বিলাস বদনে, খঞ্জন রঞ্জনে, তবল মোহনে তাল॥
ভাব
কামিনী কমল, পাইল সরল রায়।
বাজায় ঘুঙ্গুর, ঝুমুর-ঝুমুর যায়॥
বিলাস পতঙ্গে, বিরহ তরঙ্গে ঝাপ।
মধুর মন্তল বিচ্ছেদ অনল তাপ॥
প্রভাত যামিনী, কুকিলার ধ্বনি গায়।
নাগরী নাগর, রসের সাগর পায়॥
বিরহ উদাস মন, অভিলাষ যার।
গমন রমন, সাধের মিলন তার॥
গমন বিলাস, সাধের উল্লাস মন।
সাগর গভীরে, ডুবা ধীরে ধীরে ধন॥
উপদেশ
হারে বোকা, ধোকায় পড়ে র’লি এ সংসারে।
অসার সংসার মাঝে, সঙ্গি বল কারে॥
সঙ্গি হয়ে সঙ্গি যেই, হইতে না চায়।
এ সংসারে কেবা তোর, সঙ্গি বল কায়॥
পর হতে পর যেই, সঙ্গি হৈয়ে যায়।
এ সংসারে সঙ্গি সাথি, পাইলে কোথায়॥
সঙ্গি সাথি বল যারে, সেত সঙ্গি নয়।
খেলা বেলা দিন কত, কোলের তনয়॥
কোলে রাখি কোলে থাকি, অনিত্য সংসার।
নাহি কোল দিবে কোল, কোল পাব কার॥
নিত্য কোল দিবে যিনি, তাঁর কোলে যাই।
অনিত্য কোলের সাধ, আর আশা নাই॥
ওহে কোল তুমি কোল, রাখ মন কোলে।
কোলে দিয়া রাখ নিত্য, নিত্য আত্ম বলে॥
আমার কোলের কোল, রাখ তুমি কোলে।
কোল দিয়া রাখ ভান্ড, ব্রহ্মান্ডের কোলে॥
যে ভান্ডে ব্রহ্মান্ডে সাধ, দিছ তুমি কোল।
কোলে বন্ধু রাখ মম, দিও দাসে কোল॥
সাবধানতা
সাবধান পরিত্রাণ, যাঁহার হৃদয়।
সাবধান কৌতূহল, যার মনে লয়॥
সাবধান যাঁর মন, পাপের আসন।
সাবধান মনোহর তাঁর সিংহাসন॥
সাবধান শান্তি যার, শান্তি মন মান।
শান্ত শীল শান্ত মন শান্ত গুণ গান॥
সাবধান রসে মগ্ন, যাঁহার অন্তর।
সাবধান বিরাজিত, মন মনোহর॥
আদি সার সাবধান যাহার অন্তরে।
রস গুণে গান তাঁর সাধের ভান্ডারে॥
যথার্থ সাধের গুণ, যার সাবধান।
ইহ ভবে কেবা আছে, তাঁহার সমান॥
উত্তম মোহন গুরু, গৌরব যাঁহার।
কামের কদম্ব তরু, সাবধান তাঁর॥
প্রেম সাধের ডিঙ্গে, পবন বাদাম।
বিরহ তরঙ্গ নদে চলিতে আরাম॥
এস এবে সাবধানে সব মিলে যাই।
মধু রবে সাধ পুরে রস গান গাই॥
করুণা
বল যার বল তাঁর নিজ বলা বল।
নাহি যার নাহি তাঁর আশু নিত্য বল॥
যে জন সংসার বল তাঁর বলে বল।
এ ইহ বল পর বল তাঁহারি সকল॥
যে দিল তোমায় বল, তাঁর বলে বল।
অনিত্য নিত্যের সার যার নিত্য বল॥
যে জন নিত্যের বলে অধিকার বল।
এ সংসার যার তার তাঁহারি সকল॥
তুমি তাঁর সে তোমার, তোমারি সকল।
তুমি যার নাহি তাঁর নহে সত্য বল॥
আশু বল পর বল তোমারি সকল।
সুগমনে সুভূবনে তব নিত্যবল॥
হারে তুমি নিত্য তুমি তোমারি সকল।
ধন-জন মান-কান, ইহা চির বল॥
বলে বলিয়ান যেই বলের আঁধার।
যার বলে বল ধন, ভুবন সংসার॥
ভাব
কুকিলে কুকিলে কথা খঞ্জনে খঞ্জনে।
বুল বুলে বুল বুলে রস মধুর গঞ্জনে॥
হীরামন রস বাণী হীরামন সনে।
চন্দন রসের বাণী পাইলে চন্দনে॥
তুতি বাণী তুতি সনে ময়ূরে ময়ূর।
কাগাতুর রস গান গানে কাগাতুর॥
মদ সুর মধু গান পাইলে মদন।
বোতলে বোতলে গান গগনে গগন॥
গরমে গরমে গান পেয়ে গরম পোস।
সরলে সরলে বাণী, হাঁসে হাস তোষ॥
তুরঙ্গে তুরঙ্গে মন কুরঙ্গ কুরঙ্গে।
মাতঙ্গে মাতঙ্গে রস, পতঙ্গে পতঙ্গে॥
রসিক রসিক সঙ্গে অলী অলী সঙ্গে।
কুসুম বিলাস তনু, যার মতে রঙ্গে॥
যার বন্ধু তার গান যাবে তার সঙ্গে।
সঙ্গের আরতি যার তার রঙ্গে॥
এস রঙ্গ গুরু রঙ্গ কমল মন্দিরে।
সৌরভে কুসুমে গান গাব ধীরে ধীরে॥
কেবা কার গান জানে, যার গান নাই।
গাইছে গোকুল গান, পাগল কানাই॥
যে জন রসের কান্তে রাখিছে অন্তরে।
কুকিলা বসন্ত রব গায় অনিবারে॥
কমল গলায় মালা, গাথিয়া গলায়।
ভোমর অলির দলে গুণ গুণ গায়॥
এস এস অলিগণ গাই মধু গান।
তোমার আমার তনু, একই পরান॥
তুমি কর ফুলে বাস আমি ফুল ধারে।
সহায় সুগন্ধ তনু পাইব তোমারে॥
ভাব
অলিরে গাইও মুধু গান। ২
আমি মধু মূলে থাকি, মধু গান মনে রাখি,
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
কমল কাননে যেও, ডালে ডালে মধু দেও
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
নিয়ত পুষ্পের মাছি, যত দিন প্রাণে বাঁচি
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
অলি পাখি দলে দলে ঝাপ দিও মধু জলে
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
বিরহ কুঞ্জের বনে মাতিয়া বকুল সনে
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
ঝুমু ঝুমু হাত পায়, অলিগণ গান গায়
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
বিদ্ধিয়া হাতের তোড়া, নিশী পুষ্পে জোড়া ২
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
বিরহ মাতিলে কুলে আর না আসিব ফলে।
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
বিরহির তনু জ্বলে, শীতল যমুনা জলে
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
সময় থাকিতে যাও, পুষ্প রস মধু খাও
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
শরীফি অলির দলে, খেও মধু কৌতুহলে
অলিরে গাইও মধু গান॥ ২
গুরু ভক্তি
কে তোরে দিল গো সাধ, বদন সুন্দর।
কে তোরে দিল গো মনো, মন মনোহর॥
কে তোরে দিল গো প্রিয়, অনুরাগ বল।
কে তোরে দিল গো চিত্ত নয়ন সরল॥
কে তোরে দিল গো মন বচন মধুর।
লব লব হোট দোটি সোনার নেপুর॥
হাসিলে ভুলাতে পার, ত্রিভব মন্ডল।
কাঁদিলে ভুলাতে পার দিয়া চক্ষু জল ॥
কে তোরে দিল গো সেই ময়ূর পঞ্জর।
নাক ভুরূ কেবা দিল, কামান খঞ্জর॥
সে কামান তীরে প্রিয় করিছ শিকার।
খঞ্জর মারিয়া খুন খাও কলেজার॥
কে গো দিল প্রেম রশি, শিরে লম্বা কেশ।
জলুপ, গুঙ্গড়ি, খোপা পাগল কর দেশ॥
কে দিল বান্ধব তোর হৃদয় কমল।
হেরিলে মনির মন, করে টল মল॥
কে দিল গৌরব তোর মুলাম চরন।
কেবা তোরে শিখাইল, খঞ্জন রঞ্জন॥
নাচিলে ভুলাতে পার, সয়াল সংসার।
কেবা তোরে শিখাইল ইন্দ্র ব্যবহার॥
কেবা দিল লোল দেশে চন্দ্র পূর্ণিমার।
পশর করিল জ্যোতি ভব অন্ধকার॥
কেবা দিল চক্ষু তারা ইন্দ্রিকা সম্পাস।
রৌশন করিয়া দেশ, হেরিতে বিলাস॥
কেবা তোরে দেশ হতে বহির্গত করে।
কেবা তোরে লিলাম্বিতে, আনিল সংসারে॥
কেবা তোরে শিখাইল, প্রেম আলিঙ্গন।
কেমনে হইলি তুই রসের ভাজন॥
রস দিয়া মোহমগ্ন করিলি সংসার।
কেবা তোরে শিখাইল প্রিয় ব্যবহার॥
দেখাইয়া দেগো সখি হেরিব তাহায়।
লুকায়ে মন্দির দেহে রাখিলি কোথায়॥
বিলাপ
জ্বলে জ্বলে চক্ষু জ্বলে প্রাণ জ্বলে যায়।
চক্ষু জ্বলে স্রোত নদে, তনু ভেসে যায়॥
ডুবিল গভীর নদে, এ তনু সুন্দর।
ঝাম্পু ঝুম্প দিচ্ছে ডুব, কেন্দে মনুবর॥
কাঁদিছে পরমাত্মা, তনু তল যায়।
ডুবিল ডুবিল তরী, দিন বয়ে যায়॥
পাড়ি দিয়া তনুতরী, বেয়ে যাও দার।
অকুল সাগরে ডিঙ্গা, পাইতে কেনার॥
কেনারে রহিছ যারা কর ধন্যবাদ।
মহাজনে অবিলম্বে, দিও বিসংবাদ॥
দেখ এসে সাধুবর, ডিঙ্গা মারা যায়।
সরল সম্বলে তাঁরে, আনো কেনারায়॥
ইস্তাহার
কাদিয়ানী
সাহেব বলিয়াছেন, “মানব মাত্রেই কেহ মৃত্যুর পর জীবিত হয় নাই।” অথবা কেয়ামত
(মহা প্রলয়) পর্যন্ত বা ততোধিক কাল কেহ জীবদ্দশায় থাকিবেক না। তাহার এই
উক্তি সম্পূর্ণ ভুল। কেননা কোরান ও হাদিছে তদ্বিষয়ে স্পষ্টরূপে প্রমাণিত
আছে। পবিত্র কোরানে লিখিত আছে যে ইছা (আঃ) মৃতকে জীবন দান করিয়াছেন। হাদিছে
আসিয়াছে যে, হযরত জরজিছ (আঃ) কে কাফেরগণ শত সহস্র বার বধ করিয়াছিল। কিন্তু
সদা প্রভু তাঁহাকে পুনঃ পুনঃ জীবিত করিয়াছেন। এতদ্ভিন্ন আউলিয়া
আম্বিয়াগণের কেরামত দ্বারা শত সহস্র মৃত পুনর্জীবন প্রাপ্ত হইয়াছে।
‘তারিখে
তবরি’ ও অন্যান্য গ্রন্থে লিখিত আছে যে বাদশাহ নৌশেরওয়া মৃত্যুর চল্লিশ
বৎসর পর, আমাদের নবী সাহেবের দর্শনাকাক্সক্ষায় অশেষ পুণ্য বলে পুনর্জ্জীবন
প্রাপ্ত হইয়া, জীবিতাবস্থায় কবর হইতে ইহ ভবে আগমন করতঃ আট বৎসর কাল জীবিত
থাকিয়া আবার মৃত্যুমুখে পতিত হন।
এইরূপে আমাদের নবী সাহেবের মাজেজায়ও কত
মৃত জীবনপ্রাপ্ত হইয়াছে। এমন কি হযরত বড় পীর দস্তগীর সাহেবও নিজ
আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে অনেক মৃতকে জীবন দান করিয়াছেন এবং কত লোক তাঁহার
কেরামতে প্রাণত্যাগও করিয়াছে। পুনর্জ্জীবনের কথা কি কেবল হিন্দুরাই বলেন,
হায়রে পোড়া অদৃষ্ট, এত ভ্রান্ত মতি হওয়া মেহদী দাবির মূলে কুঠারাঘাত নহে
কি? যদি বল, মারিতে পারা যায়, কিন্তু বাঁচাইতে পারা যায় না, তবে দেখা
যাইতেছে যে মারিতে পারিবার পক্ষত হাতে আছে। আর মারণ বাঁচান যখন খোদার কাজ,
তখন একজনকে অন্যে কিরূপে বধ করে এবং তাহার দায়ে নিজের প্রাণ দিতে হয়?
ভ্রাতঃ যদি এক বস্তু খাইয়া মরিতে পারে, তবে অন্য এক বস্তু খাইয়া কি বাঁচিতে
পারা যায় না? তবে হযরত খেজের (আঃ) আবে-হায়াৎ খাইয়া কি ভুল করিয়াছিলেন? আর
তিনি কি মরিয়া গিয়াছেন? আবার আছহাবে-কাহাফ্ যে কয়েকজন লোক একই নিদ্রায়
কেয়ামত পর্যন্ত থাকিবেন, তাহা কি কোরান বা হাদিছে আসে নাই? এতদ প্রমাণ
তফছিরে রুহুল বয়ান, তফছিরে কবির ও তফছিরের হোছেনী প্রভৃতি পুস্তকে দেখুন।
যে ব্যক্তি তছররোফে বেলায়েত অর্থাৎ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে খোদা প্রাপ্তি,
পীড়া আরোগ্য করা, ধর্মদ্বেষী বা বিধর্মীকে ধর্ম পথে আনয়ন, পাপীর হৃদয় হইতে
তমোরাশি বহিষ্কৃত করা ও তৎস্থানে ধর্ম জ্যোতিঃ প্রকাশিত করা প্রভৃতিকে
অসম্ভব কার্য বলিয়া নিজ পুস্তক লিখিয়াছেন তদ্রƒপ ব্যক্তির মেহদীত্ব দাবি যে
কতদূর সত্য তাহা কে বলিতে পারে? আমি তাহার কয়েক খানি আরবী পুস্তকে হিন্দি
তর্জ্জমা সহ দেখিয়াছি তাহাতে তিনি আপনাকে মেহদী মৌউদ বলিয়া সপ্রমাণ
করিয়াছেন। আর তাহাতে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সমূহকে তিনি মেসমেরিজ্ম বলিয়া
উল্লেখ করতঃ উহাতে ঘৃণা প্রকাশ পূর্বক বলিয়াছেন যে “আমি যদি উহা ভাল
বাসিতাম তবে উহাতে প্রচুর উন্নতি লাভ করিতে পারিতাম।” আবার তিনি ইহাও
লিখিয়াছেন যে ঐ সমস্ত বৃথা পথে না যাইয়া কেবল মাত্র দোয়ার উপর নির্ভর করাই
কর্ত্তব্য। ইহাতে বেশ বুঝা যাইতেছে যে, তিনি দোয়ার প্রকারভেদও জানেন না।
যেহেতু নবী সাহেব (সাঃ) দম শুমারি ত্বরিকার কথা বলিয়াছেন। তৎপ্রমাণ মেস্কাত
ও ছেহা ছেত্তায় পাওয়া যায়। দিবা রাত্রিতে মনুষ্যের যত শ্বাস প্রশ্বাস বহে,
তাহার সংখ্যা মোফাচ্ছেরিন লোকেরা (২০০০) দুই হাজার সংখ্যায় ধার্য করিয়াছেন
কিন্তু মোটের উপর বলিতে গেলে উহার মর্ম যে অনেক প্রকার বুঝায় তাহাতে
সন্দেহ নাই। এতদসত্ত্বেও তিনি কেবল মাত্র হস্তোত্তলনকেই দোয়া নামে অভিহিত
করিয়াছেন। আবার “আমি ইছা মছিহ্ বা ইমাম মেহদী” এরূপ আত্মপরিচয় দেওয়া, মেহদী
মৌউদের সত্যতা কোন পুস্তকে আসিয়াছে? অধিকন্তু ছেহা ছেত্তায় হযরত মেহদীর
চিহ্ন সম্বন্ধে লিখিত আছে যে সমুদয় লোকেরা তাঁহাকে ইমাম বলিয়া মান্য করিতে
থাকিবেন। কিন্তু তথাপি তিনি আত্ম সংগোপন করিয়া আপনাকে ইমাম বলিয়া পরিচয়
দিবেন না। পরন্তু লোকেরা তদীয় লক্ষণাদি দৃষ্টে তাঁহাকে চিনিয়া লইবে। নবী
সাহেব (সাঃ) হাদিছে বলিয়াছেন, ঐ ব্যক্তি আরব দেশে, আমার বংশধর ও আমারই
নামধারী হইবে, এবং তদীয় পিতা মাতার নামও আমার পিতা মাতার নামের সহিত একই
হইবে। ছেহা ছেত্তা হাদিছে আরও লিখিত আছে যে, ঐ ইমামে আখেরি জামানের প্রকাশ
পাইবার কিছু কাল পূর্বে দুই জন মিথ্যাবাদী লোক আপনাদিগকে ইমাম বলিয়া প্রকাশ
করিবে। ঐ স্থলে ঘটনাও তাহাই সত্য বলিয়া বোধ হইতেছে। দন্তহারা বাঘের ডাকই
সার। নতুবা হীরা কখন রাস্তায় রাস্তায় ঢোল দিয়া নিজের পরিচয় দেয় না। সে নিজ
গুণেই সর্বত্র আদরণীয় হইয়া থাকে, এবং সে বহু মূল্য বলিয়া সকলেই জানে।
তদ্রুপ গুণী ব্যক্তিরা কখনই নিজ গুণের গর্বে স্ফীত হন না। হাদীস উপযুক্ত
স্থলে উপযুক্ত কথা বলিয়াই তাহার সত্যতা দেখাইতেছে। সূর্য্য তো ছোবে কাজেমের
পরই উদয় হইয়া থাকে। কাদিয়ানী সাহেব মরিয়ম নাম্নী কুমারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ
করিয়াছেন নাকি? নতুবা তিনি ইছামছি হইলেন কি প্রকারে। তাহারওত প্রমাণ চাই।
নবী সাহেব (সাঃ) বলিয়াছেন যে, প্রকৃত ইমাম যিনি হইবেন, তিনি আরব দেশজাত,
তাঁহার নাম আহাম্মদ তাঁহার পিতার নাম আব্দুল্লাহ্ ও মাতার নাম আমেনা। তবে
কাদিয়ানী সাহেবেরও তাহাই নাকি। যদিও নবী সাহেব (সাঃ) ঐ নির্দিষ্ট ইমাম
ভিন্ন অন্য কাহাকেও মেহদী নাম দিয়াছেন, তাহাতে কোন ক্ষতির কারণ নাই। কেননা,
মেহদী শব্দের অর্থ উপদেষ্টা এবং উহা কর্তৃকারক। এই নিমিত্তে তিনি
বাক্যস্থলে ঐ শব্দই ব্যবহার করিয়াছেন। এবং উহাই বলা সঙ্গত। তবে তাই বলিয়াই
কি তাহারা মরিয়ম বা আমেনার পুত্র ছিলেন। আবার জাল মেহদী সাহেব কোরানকেও
আক্রমণ করিতে ছাড়েন নাই। তিনি কোরানকে কল্পনাপ্রসূত বলিয়াছেন। এইরূপ উক্তিই
কি তাহার জাল প্রমাণে যথেষ্ট নহে? যদি আধ্যাত্মিক বিদ্যায় তাহার কিছুমাত্র
জ্ঞান থাকিত তবেও তিনি হযরত জিবরিল (আঃ) কিরূপে নাজেল হন তাহার তত্ত্ব
সম্পূর্ণ বর্ণনা করিতে পারিতেন। ফেরেস্তার আগমন কত প্রকার ও কি রূপ লোকের
নিকট কি ভাবে আসিয়া থাকেন তাহাও তিনি বুঝিতে পারিতেন। জীব মাত্রেরই ভিন্ন
ভিন্ন ক্ষমতা। উহাদের একের ক্ষমতায় অন্যের অধিকার নাই। সুতরাং যে ব্যক্তি
নবী বা অলী নহে সে নবী অলী লোকের আধ্যাত্মিক বিদ্যার তর্ক করিবে কি রূপে।
কাদিয়ানী সাহেব কূট তর্কের দ্বারা মীমাংসা না করিয়া কেন একবাক্যে কোরানের
নজুল সম্বন্ধে তর্ক শেষ করিয়া দিলেন; ইহা কিরূপ জ্ঞানের ও বিবেচনার কার্য
তাহা বুঝা যাইতেছে না।
এতদসত্ত্বেও তিনি আবার বিজ্ঞাপনে ঘোষণা করিয়াছেন
যে তাহার গ্রন্থের অসাধারণ ক্ষমতা। যিনি এই গবেষণাপূর্ণ গ্রন্থের সারতত্ত্ব
উদ্ধারে সমর্থ হইবেন, তিনি ভুমন্ডলে একজন অদ্বিতীয় ব্যক্তি সন্দেহ নাই। আর
যিনি ঐ পুস্তক হইতে এক বর্ণ ভ্রম সপ্রমাণ করিতে পারিবেন, তিনি নগদ দশ
হাজার টাকা পুরস্কার পাইবেন। তবে এক্ষণে মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি, কাদিয়ানী
সাহেব, আপনার পুস্তকের ভুরি ভুরি ভ্রম গ্রহণ করিয়া অঙ্গীকৃত টাকা আদায়
করুন। বৃথা অঙ্গীকার করিয়া টাকার দায়ী হওয়া কোন দলিলে আসিয়াছে? যদি কোন
স্থানে ভ্রম প্রমাণ বাহির হইয়া পড়ে, তবে কি ঐ অঙ্গীকৃত টাকার দায়ী হইয়া
দোযখে যাইতে হইবে না? ভুল ও খাতার সহিতই যখন মনুষ্যের সৃষ্টি, তখন ঐরূপ
অঙ্গীকার করা কি পরহেজগারী; বরং ইহা সম্পূর্ণ নীতি বিরুদ্ধ কার্য্য সন্দেহ
নাই। সুতরাং এতগুলি কুপ্রবৃত্তির ফল যে অবশ্যই ফলিয়া উঠিবে তাহাতে সন্দেহ
কি, ফলতঃ হাদিসে ইমাম মেহদী সাহেবের আগমনের ভবিষ্যৎ বলিতে যে দুই জন
মিথ্যাবাদী মেহদীর কথা উল্লেখিত আছে, তাহারা আর কে? “ইসা মসির আগমন” নামক
বাঙ্গালা পুস্তকের ৮ম পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে “কাদিয়ানী সাহেবের উপর ইমান না
আনিলে নরকে যাইতে হইবে।” এরূপ গগণভেদী বাক্য লেখক কোথা হইতে বাহির করিলেন?
আর উহা যে সত্য তাহার প্রমাণ কি? লেখক আবার ইহা লিখিয়াছেন যে “কাদিয়ানী
সাহেবের জীবদ্দশায়ই তাহারই মতাবলম্বী প্রায় চারি লক্ষের উপর উঠিয়া ছিল, এবং
বর্তমানে তাদের সংখ্যা ছয় লক্ষের উপর।” ছয় সাত লক্ষ লোকের নেতা হইলেই যদি
ধর্ম প্রবর্ত্তক হন, আর তাহার ধর্মে আস্থা স্থাপন না করিলেই যদি পরিত্রাণ
পাওয়া না যায়, তবে যেই ধর্মে কোটি কোটি লোক শান্তি লাভ করিতেছে, তিনি সে
ধর্মকে তুচ্ছ করিতেছেন কেন? হিন্দু ধর্মের ভারতবর্ষে অন্যান্য বার কোটি লোক
আছে। বৌদ্ধ ধর্মে ২৪ কোটির উপর এবং ব্রাহ্ম, শীখ, জৈন ও অন্যান্য
ধর্মাবলম্বীর সংখ্যাও ৬/৭ কোটির কম নহে। তবে উক্ত লেখক সাহেব উহা কোন ধর্ম
গ্রহণ করিয়াছেন? লিখক আরও লিখিয়াছেন যে মেহদী এবং ইছা একই ব্যক্তি। ঐ
ব্যক্তিই কাদিয়ানী সাহেব। এতদুত্তরে বলা যাইতে পারে যে, “মোসলেম” নামক
পুস্তকে এবনে মরিয়ম অর্থাৎ মরিয়ম নাম্নী কুমারী গর্ভজাত পুত্রের আগমন বিষয়ে
স্পষ্ট হাদিস আসিয়াছে। তবে কাদিয়ানী সাহেব কি মরিয়মের পুত্র? আবার ছহি ছয়
কেতাব ছেহা ছেত্তায় লিখিত আছে, হযরত আব্দুল্লা এবনে মাছ্উদ (জঃ) রওয়ায়েত
করিয়াছেন, নবী সাহেব (সাঃ) বলিয়াছেন, যে পর্যন্ত আরব দেশ আমার বংশ জাত,
আমার নামীয় এক ব্যক্তির অধীন না হইবে সে পর্যন্ত পৃথিবী বিলুপ্ত হইবে না।
এইরূপ অন্য এক হাদিছে সহি সনদের সহিত লিখিত আছে, পৃথিবীতে এক ধর্ম প্রচলিত
হইবে। উহা খোদা তালার কৃপায় এমন এক ব্যক্তির দ্বারা পৃথিবীময় প্রচারিত
হইবে, যিনি আমার বংশে জন্মগ্রহণ করিবেন। তাঁহার পিতা ও মাতার নাম আমার পিতা
ও মাতার নামের সহিত এক হইবে। তখন ন্যায় ও শান্তিতে পৃথিবী পূর্ণ হইবে এবং
অন্যায় অত্যাচার দূরীভূত হইবে। বড়ই দুঃখের বিষয় যেই ব্যক্তি তখলিক (সৃষ্টি)
বিষয় কিছু মাত্র জ্ঞান লাভ করে নাই, সেই ব্যক্তি কি প্রকারে জন্মোত্তর
রহস্য ভেদ করিতে উদ্যত হইয়াছে এবং মূল স্রষ্টার শিরোচ্ছেদ করিতে চেষ্টা
করিতেছে দেখুন? পবিত্র কোরান মজিদে লিখিত আছে, হযরত ছোলেমান (আঃ) জন্মান্তর
রহস্য অবগত হইবার নিমিত্ত খোদা তালার নিকট প্রার্থনা করায় সদা প্রভু আদেশ
করিয়াছিলেন, “তুমি কতকগুলি কবুতর জবেহ করিয়া, উহাদের অস্থি মাংস পৃথক করতঃ
ইতস্ততঃ নিক্ষেপ কর।” হযরত ছোলেমান (আঃ) ঈশ্বরাদেশ পালন করিলেন পর
পক্ষিগণের নিক্ষিপ্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ শূন্য ভরে আসিয়া নিজ নিজ শিরসহ
দেহ গঠন করিল। এবং উহারা পুনর্বার জীবন প্রাপ্ত হইয়া স্ব স্ব স্থানে গিয়া
বসিল। তখন সদা প্রভু খোদাতালা হযরত ছোলেমান (আঃ) কে বলিলেন তুমি জন্মান্তর
রহস্য জানিতে যে উৎকণ্ঠিত হইয়াছিলে, এখন উহা তোমার সম্মুখে উদঘাটিত হইয়াছে
কিনা? তখন তিনি নত জানু হইয়া কৃতাঞ্জলী পুটে ভক্তি গদ্গদ স্বরে বলিয়া
উঠিলেন প্রভু? তুমিই প্রাণহীনকে প্রাণ দিতে এবং প্রাণীর প্রাণ হরণ করিতে
সক্ষম। ত্রিজগত তোমার মহিমার সীমা দিতে পারে না। হযরত ছোলেমান (আঃ) নবী
বলিয়া ঐ রহস্য বুঝিতে পারিয়াছিলেন। কিন্তু যেই ব্যক্তি নবী বা অলী নহে এবং
তাঁহাদের ভাব বুঝিতে অক্ষম, সেই ব্যক্তি কি করিয়া জানিতে পারিল যে, হযরত
ইছা (আঃ) আর ইহ ভবে সশরীরে আগমন করিতে পারিবেন না? তাহার মৃত্যু হইয়াছে
বটে, তথাপি তিনি মৃত্যুর অধীনতা পাশ ছেদন করিয়া আসিতে সক্ষম। নচেৎ যিনি
মৃত্যুর পর পুনরাগমনে অক্ষম তিনি সুপারিশ বা প্রার্থনা করিয়া পাপীর উদ্ধার
করিবেন কিরূপে? ফলতঃ মৃতের আত্মা সর্বত্র বিরাজমান বা যে কোন স্থানে
উপস্থিত হইতে পারে। এই জ্ঞান কেবল আউলিয়াগণেরই হৃদয়ঙ্গম হইয়া থাকে। উহাকে
‘কাশ্ফ’ ‘এল্হাম’ প্রভৃতি বলা হয়। যে ব্যক্তি ঐ ভাবের, লেশ মাত্র স্পর্শ
করিতে সমর্থ হয় নাই, ঈদৃশ নিরল হৃদয় ব্যক্তি কেবল মাত্র রিপুর তাড়নায় বৃথা
ছট্ফট্ করিয়া কি করিবে? আত্মা কখনও সাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় না কারণ উহা
লতিফ। সূক্ষ্মতম পদার্থ বিধায় জড় চক্ষুর গোচরীভূত হইতে পারে না। ইহা
সর্ব্ববাদী সম্মত বাক্য কিন্তু আত্মা যখন মোছবেতা হইতে প্রকাশ পায় তখন উহা
দিব্য চক্ষুর দ্বারা দৃষ্ট হইয়া থাকে। কথিত আছে একদা খাজা মইনুদ্দিন চিস্তী
(রহঃ) মিম্বরে বসিয়া সমাগত লোক দিগকে উপদেশ দিতেছিলেন ইতঃমধ্যে তিনি
ক্ষণকালের নিমিত্ত ব্যস্ত সমস্ত হইয়া দাঁড়াইলেন। মুহূর্ত পরেই আবার পূর্বের
ন্যায় উপদেশ দান করতঃ পুনর্বার দাঁড়াইলেন। এইরূপে তিনি একশত বারেরও অধিক
উঠিয়াছিলেন ও বসিয়াছিলেন। পরে কথা শেষ হইলে সকলে তাঁহার ঐ রূপে অস্বাভাবিক
আচরণের কারণ জানিতে বিশেষ উৎসুক্য প্রকাশ করায় তিনি অগত্যা বলিতে বাধ্য
হইলেন। তিনি বলিলেন আমি দেখিতেছিলাম, আমার মোর্শেদ হযরত উস্মান হারুনী (কঃ)
আমার দিকে আসিতেছেন। তদ্দর্শনে আমি অধীর হইয়া দাঁড়াইয়া ছিলাম। এবং এইরূপে
আমি যত বার তাঁহাকে দেখিয়াছি ততবারই দাঁড়াইয়াছি। ইহা “তাজ কেরাতুল আউলিয়া”
নামক পুস্তকে বাবা শেখ ফরিদ (কঃ) লিখিয়াছেন। বলুনতো এই দর্শন কিসের ফল?
গুণী ভিন্ন গুণের পরিচয় অন্যে বিশ্বাস করে না। কারণ যাহার যেই ইন্দ্রীয় নাই
তাহাকে সেই ইন্দ্রীয়গত জ্ঞান কথায় বুঝান দুষ্কর। বিশেষতঃ লদুনি বিদ্যার
জন্য তদপযুক্ত জ্যোতির্ম্ময় হৃদয়ের আবশ্যক। ঐ হৃদয়ে দিব্য চক্ষু সর্বদা
উন্মিলীত থাকে। তবে যখন হযরত এমাম মেহদী সাহেবের ঐ ভাগ্য সর্বদা প্রসন্ন,
তখন তাঁহার অন্তর, আত্মা, বুদ্ধি বল প্রভৃতি সমস্তই জ্যোতির্ম্ময়। সুতরাং ঐ
ইমানের নূর যে বিস্তৃত হইয়া সূর্য্যালোকের ন্যায় সমস্ত পৃথিবী আলোকিত
করিবে তাহাতে সন্দেহ কি, বাস্তবিক তখন সমুদয় লোকেরই হৃদয় জ্যোতির্ম্ময় হইয়া
দিব্য জ্ঞান সম্পন্ন হইবে। তখন যদি তাহারা হযরত ইছা (আঃ) এর আত্মাকে
মনুষ্যরূপে দেখে বা তাহা হইতে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়, তবে তাহাতেই আশ্চর্য্য
কি। পক্ষান্তরে যাহাদের দিব্য চক্ষু ফুটে নাই তাহারা কেবল দিন কানা পাখীর
মত অস্পষ্ট দৃষ্টিতে দর্শন করিতে শিখিয়াছে। তাহাদের দাবিটাই বড়। যদি গত
বারের ধূমকেতু ঐ দাবিকারকের জন্যই আকাশে উদিত হইয়া থাকে, তবে আফ্রিকা দেশীয়
সৈয়দ আহাম্মদ আবার কোন ধূমকেতু পাইয়াছেন? তিনিওতো মেহদী বলিয়া দাবি করিয়া
বসিয়াছেন। এই সৈয়দ আহাম্মদ সেখ সেনৌসি নহেন। তাঁহার ক্ষমতা অসাধারণ। তাঁহার
৯৫,০০,০০০ পঁচানব্বই লক্ষ মুরিদ শিক্ষিত করা হইয়াছে। যাহারা প্রকৃত নূরী
ধর্মে দীক্ষিত, তাঁহাদের শুধু দাউন ধরা বয়াৎ নহে এবং তাঁহারা কোন দাবিও
করেন না, পরন্তু হযরত এমাম মেহদীর আগমন ফলে সমস্ত পৃথিবী এক রাজার শাসনাধীন
হইবে। এবং তাহাতে এক ধর্ম ও একাচার প্রবর্ত্তিত হইবে। আর এক রাজা বলিতে
হযরত এমাম মেহদীকেই বুঝাইবে। ঐ সময় অতি নিকটবর্ত্তি হইয়াছে। শেখ সুব্নুসি
নামক পুস্তকে লিখিত আছে। আবার পাঞ্জাববাসী মেহদী সাহেব (কাদিয়ানী সাহেব)
নিজ পুস্তকে ইহাও লিখিয়াছেন আমিই যে প্রকৃত মেহদী তাহা নহে। বরং আমার পর
আরও মেহদী আসিতে পারেন। ব্যস, এবার সব লেটা চুকিয়া গেল। তবে তাহার দাবিতে
মূলে কান্তে বিদ্ধ নহে। এখন বলি যাহারা কেবল তাহার নাম শুনিয়াই ইমান
আনিয়াছেন বা নিকটে গিয়া তাহাকে দেখিয়াছেন, তাহারা প্রকৃত পক্ষে তাহার ভাব
উদ্ধার করিতে শিখিয়াছেন কিনা চারি পাঁচ লক্ষ লোকের অধিনায়ক হইলেই যদি মেহদী
দাবি করিতে পারা যায় তবে ৯৫ লক্ষ লোকের নেতা যে সেরূপ দাবি করিতে শিখেন
নাই, তাহারই বা কারণ কি। বলুনত এখন ইমানের মূলে কোন সিদ্ধান্তের রস দিলে
ইমানের গাছ তাজা হইবে। ঝড়ে বানে কাউয়া মরে, ফকির বলে মোর কেরামত বাড়ে।
বাপুহে, মেহদী হইলে এত লেখা লেখি কেন? কালে ত বৃক্ষের পরিচয় ফলেই দিবে। আর
কাদিয়ানী সাহেব ঐ হাদিছ দেখিয়াছেন কিনা যাহা ছেহা ছেত্তায় আসিয়াছে উহাতে
লিখিত আছে যে হযরত মেহদীর আগমনের কিঞ্চিৎ পূর্বে দুইজন মিথ্যাবাদী লোক
নিজেকে মেহদী বলিয়া পরিচয় দিয়া বহুলোক গোমরাহ (পথহারা) করিবে। ছেহা ছেত্তায়
যে মেহদী সাহেবের চিহ্ন লিখিত আছে তাহা কাদিয়ানী সাহেবের মধ্যে পাওয়া যায়
কি? আর ঐ চিহ্নসমূহ এই, যথা
১। পৃথিবীর যাবতীয় লোক একই ধর্ম ও আচারের আশ্রয়ে থাকিয়া ঈশ্বর চিন্তা করিবে।
২। তাঁহার সময়ে প্রাণ হরণোপযোগী অস্ত্রসস্ত্রের ব্যবহার পরিত্যক্ত হইয়া বাঘ ছাগ একত্রে কাল যাপন করিতে থাকিবে।
৩। লোক সমাজে হিংসা, বিদ্বেষ ও জাতি বর্ণের ইতর বিশেষ থাকিবে না।
৪। মানব জাতি নিষ্পাপ অধিকার হইবে।
৫। এমাম সাহেব আরব দেশ বাসী আব্দুল্লা ও আমেনার পুত্র এবং সৈয়দ হাসমি বংশ জাত হইবে।
৬।
তিনি যখন মদিনা হইতে মক্কার দিকে হেজরত করিয়া আসিবেন তখন একদল শত্রু
তাঁহাকে বধ করিতে অস্ত্রসস্ত্র লইয়া আসিবে। তখন তাঁহার অভিশাপে তাহারা সদল
বলে মৃত্তিকায় ধ্বসিয়া যাইবে। এবং তাঁহার এই কেরামত দেখিয়া সমুদয় মানব জাতি
তাঁহাকে আখেরী ইমাম বলিয়া চিনিবে ও তাঁহার আশ্রয়ে আসিয়া নবজীবন প্রাপ্ত
হইবে।
সুতরাং এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা প্রভৃতি মহাদেশের যাবতীয়
অধিবাসী একত্রে একই ধর্মের আশ্রয়ে একই নেতার অধীনে, একপ্রাণ হইয়া পরম সুখে
জীবন যাপন করিতে থাকিবে।
নৌশেরওয়া বাদ্শা মৃত্যুর পর যে পৃথিবীতে পুনঃ
আগমন করেন, সে বিষয়ে ‘তারিখ তেবরির’ বরাত দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু সহসা
তাহাতে পাওয়া যায় নাই অন্যান্য গ্রন্থে আছে।
দূরূহ শব্দের অর্থ
শব্দ অর্থ
অ অন্নের = খাদ্যের খাওনের।
অবতার = নবী, যাহার দ্বারা আসমানী হুকুম প্রকাশ পাইয়াছে।
আ আসু = সহসা, ইহকাল।
আয়বপুশী = অন্যের দোষ ঢাকিয়া রাখা।
আকাংখা = প্রয়াস, অনুরাগ।
আদম = আদি পুরুষ।
আউলিয়া = বহুবচন যাহারা খোদা প্রাপ্ত হইয়াছেন, সাধু।
আম্বুর = একটি সুগন্ধির নাম।
ই ইসলাম = মান্য লওয়া, নতশির হওয়া।
ইঞ্জেল = ইছাইদের ধর্ম পুস্তক।
ইমান = খোদার উপরে বিশ্বাস করা।
এ এস্ক = বিরহ, প্রেম।
ক কায়ছর = যে শিশুকে মৃত মাতার উদর ফাঁড়িয়া বাহির করা হয়।
কল্প তরু = স্বর্গের বৃহৎ বৃক্ষ, যাহার আশ্রয়ে সমুদয় স্বর্গবাসিরা থাকিবেন।
কুহুকে = ফাঁদে।
গ গদ্দিনশীন = আসনে বসনে ওয়ালা।
গুণ = ক্ষমতা, সার্থকতা।
ছ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন = খন্ড খন্ড।
ন নফস = প্রাণীর শান্ত বিশিষ্ট রিপু।
নূর = জ্যোতি, ঐশ্বরীক দর্পণ।
নাসাশ্বর = নাকের শব্দ।
নির্দ্ধারিত = স্থির।
নূরত = নতুন, অঙ্কুর।
ত তিবে = ইহুদিদিগের কেতাব।
ত্বমোগুণ = ধ্বংস, লয় নেস্তিকরা।
তৌরিত = তটে, পাড়ে।
দ দেব = যে ঈশ্বরের কোন শক্তি ধারণ করিয়াছে।
দরে = দরবারে, দ্বারে।
প পত্নী = স্ত্রী, আওরত।
ফ ফকির = খোদার বন্ধু বা প্রেমিক।
ধ ধর্ম = দ্বীন, পরকালীন পন্থা।
ব বেঞ্জন = শান, তরকারি।
বক্ষ স্থলে = বুক, ছিনা।
বেলায়েত = মানসিক পন্থা, ঈশ্বর প্রাপ্তি রাস্তার গুণ বিশিষ্ট।
বিলক্ষণ = উত্তম, নির্বিঘ্নে।
বিলুপ্ত = গোমকার অপ্রকাশ।
বশিষ্ট = মূহ, ইত্যাদি।
ম মণি = মূল পদার্থ
মোনাফিক = যে ব্যক্তি মনে কুরটনা রাখে, শয়তান পক্ষিয় মোখালেফী।
মাওলানা = মুসলমানের বড় পন্ডিত।
মস্তান = যে খোদার প্রেমে উম্মাদ।
মুস্তফা = ভালবাসা।
মুহাম্মদ = যাহাকে ধন্যবাদ দেওয়া হইয়াছে।
মন্ত্রী = উজির, নায়েব।
মদিনা = মাঠ, লোকহীনদেশ, বনস্থ।
মন্দির = দেবালয়, মসজেদ।
মাজুল = উচ্ছেদ।
র রোখা = পত্র, পত্রিকা।
রজগুণ = জন্ম প্রণালী, পয়দায়েসের ক্ষমতা।
রঙ্গ = টেউ, মৌজ।
ল লয় = বিলুপ্ত, ফানা, নাস্তি করণ।
শ শারদা গমন = ধীর চলন, সুন্দর চলন।
শ্রদ্ধা = ভক্তি।
শান = গুণ, ক্ষমতা।
শাস্ত্রে = ধর্মগ্রন্থে, ধর্ম পন্থায়।
স সম্বোদিয়া = আদর করিয়া।
সদনে = নিকটে
সংস্করণ = ভাগ, হিস্যা।
সুতরাং = পরবর্তী।
সত্যগুণ = নিশ্চিত যে গুণ স্থির থাকে।
হ হারাম = নিষিদ্ধ, যাহা নিষেধ করা গিয়াছে।
হাদিস = নবী সাহেবের বাক্য।
হিন্দু = যাহারা সিন্ধু নদী পার হইয়া আসিয়াছে কিম্বা যাহার দুই বস্তু নাই তাহাকে হিন্দু বলে।
হর মাগিদন = একটি স্থানের নাম।
য যৌবন = আশ্চর্য্য।
তামাম শোধ
No comments:
Post a Comment