Thursday, September 25, 2025

বাবা সুরেশ্বরী (রহঃ) এর আওলাদগণ

 

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তিনবার দ্বার পরিগ্রহ করিয়াছেন। প্রথমা স্ত্রীর গর্ভে দুই পুত্র এবং চার কন্যা, দ্বিতীয় স্ত্রীর নিঃসন্তান ছিলেন এবং তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভে একমাত্র কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করিয়াছেন।

হযরত সুরেশ্বরী বাবার প্রথমা স্ত্রীর গর্ভের সন্তানগণ

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ (রহঃ)

কুতুবুর রব্বানী হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আব্দুল হাই ওরফে নূরী শাহ্ বাবা ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলার জৈষ্ঠপুত্র। তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হইতে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু, আরবী এবং ফার্সী ভাষার উপর তাহার অগাধ ব্যুৎপত্তি ছিল। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার বেছাল হক্ব গ্রহণ করিবার এক বছর আগে মোতাবেক বাংলা ১৩২৫ সনের ২০শে মাঘ পবিত্র উরসের দিনে তিনি তাহার জৈষ্ঠ পুত্র হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ বাবাকে তাহার স্থলাভিষিক্ত করিয়া যান। তিনি তাঁহার ভক্ত মুরিদদের উদ্দেশ্যে বলিয়াছিলেন, আজ হইতে নূরী শাহ্কে আমার জাহের ও বাতেনের সমস্ত দায়িত্ব দান করতঃ তাহার ভিতরে নূরের বাতি প্রজ্জলিত করিয়া গেলাম।

অলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ বাবা জাহের বাতেনে পূর্ণ যোগ্যতার সহিত পিতার ত্বরিকার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটান এবং দরবারে সুলতানুল আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের তত্বাবধান ও দারবারিক যাবতীয় দায়িত্ব সমূহ অত্যন্ত যোগ্যতার সহিত পালন করিয়াছেন। তিনি হাজার হাজার ভক্ত ও মুরিদদের শোক সাাগরে ভাসাইয়া ১৩৬১ সনের ৫ই ভাদ্র ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন।  

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ কলিম শাহ্ (রহঃ)

হযরত কলিম শাহ্ ছিলেন দ্বিতীয় পুত্র এবং জন্ম সূত্রে অলি। শৈশবেই তিনি কোন কিছুর উপর দৃষ্টিপাত করিয়া যাহা বলিতেন তাহাই হইয়া যাইত। তাহার শৈশব কালীন কিংবদন্তী এখনও লোকের মুখে আলাপ চারিতায় বিশেষ ভাবে স্থান পায়। হযরত কলিম শাহ্ সাহেবের যে ঘটনাটি সমস্ত আশেকানে সুরেশ্বরীর অন্তরে চির জাগরুক হইয়া আছে নিম্নে তাহা উল্লেখ করা হইলঃ

দরবার প্রাঙ্গনে বাবা সুরেশ্বরী নিজ মোবারক হস্তে একটি বেগুনের বাগান করিয়াছিলেন। সকাল বিকাল তিনি নিজ হাতে সেই বাগানের পরিচর্যা করিতেন। প্রকৃতির নিয়মেই এক সময় বাগানের বেগুন গাছে বেগুন ধরিল। নিত্যকার মত সুরেশ্বরী বাবা বাগানের পরির্চযা করিতে গিয়া দেখিলেন যে গাছের কূষা (কচি) বেগুনগুলি কে যেন ছিড়িয়া ফেলায়াছে। এই অবস্থা দেখিয়া সুরেশ্বরী বাবা ভয়ানক ক্ষেপিয়া গিয়া গালমন্দ করিলেন। বাগান হইতে বাহির হইয়া সুরেশ্বরী বাবা কয়েকজন ভক্তের সহিত আলাপ আলোচনায় মসগুল হইলেন, ইত্যবসরে কলিম শাহ্ বাবা বাবা একটি টুকরিতে করিয়া কুষা বেগুন গুলি সুরেশ্বরী বাবার সামনে আনিয়া রাখিলেন। এহেন কান্ড দেখিয়া কলিম শাহ্ বাবার উপর রাগান্বিত হইলেন। কলিম শাহ্ বাবাও কিছুক্ষণ কি করিবেন বুঝিতে না পারিয়া বলিলেন যে, বাবা আপনি যখন রাগ হইয়াছেন তখন বেগুনগুলি গাছে লাগাইয়া দিয়া আসি। সুরেশ্বরী বাবাও তখন আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন বিধায় কলিম শাহ্ বাবার জ্বালাতন হইতে নিস্কৃতি পাইবার জন্য কথার ফাকেই বলিলেন, আচ্ছা যাও লাগাইয়া দিয়া আস। কলিম শাহ্ বাবা টুকরিটি লইয়া বেগুনের বাগানে যাইয়া টুকরিটি রাখিয়া টুকরি মধ্যস্থিত বেগুন গুলির একেকটি লইয়া যেখান হইতে ছিড়িয়াছিলেন সেই বোটায় ধরিয়া বলিলেন, তোমাদেরকে ছিড়িয়াছি বলিয়া আমার আব্বা ভীষন রাগ হইয়াছেন।, অনতিবিলম্বে তোমরা জোড়া লাগিয়া যাও। আল্লাহর কি মহিমা যে এইটুকু বলিবার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি বেগুন স্ব স্ব বোটায় লাগিয়া গেল। খালি টুকরিটি লইয়া পূণরায় তিনি সুরেশ্বরী বাবার নিকট যাইয়া বলিলেন বাবা, আমি বেগুনগুলি গাছে লাগাইয়া দিয়া আসিয়াছি, এই বলিয়া তাহা দেখিবার জন্য হাত ধরিয়া টানাটানি শুরু করিয়া দিলেন। সুরেশ্বরী বাবাও তাহার হাত হইতে নিস্কৃতি পাইবার জন্য পুত্রের সহিত বাগানে আসিয়া দাড়াইলেন এবং অবাক হইয়া দেখিলেন যে বেগুন গুলি সত্য সত্যিই পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া গিয়াছে। ইহা দেখিয়া হযরত সুরেশ্বরী বাবা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকিয়া কলিম শাহ্ বাবাকে জিজ্ঞাস করিলেন, তুমি কিভাবে জোড়া লাগাইলা? উত্তরে কলিম শাহ্ বাবা বলিলেন যে আপনি ভীষণ রাগ হইয়াছেন বলিয়া উহাদের জোড়া লাগিয়া যাইতে বলিয়াছি, ইহা শুনিয়া বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা বলিয়া বসিলেন, “এক বনেতো দুই বাঘ বাস করেনা”। এই সর্ব্বসত্য ঘটনাটিই আশেকানে সুরেশ্বরীর মুখে মুখে কিংবদন্তির মত হইয়া রহিয়াছে। হযরত কলিম শাহ্ বাবার অসংখ্য কারামত শৈশবেই প্রকাশ পাইয়াছিল।

সুরেশ্বরী বাবার কন্যা রত্নগণ

হযরত বাবা সুরেশ্বরী (রাঃ) প্রথমা স্ত্রীর গর্ভে চারজন শাহ্জাদী জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। বড় শাহ্জাদী সাইয়েদা আবেদা খাতুন যাহার সাদী মোবারক সুরেশ্বর নিবাসী শাহ্ সূফী হযরত মাওলানা ইসমাইল (রাঃ) সাহেবের সহিত সুসম্পন্ন হইয়াছিল। দ্বিতীয় শাহ্জাদী সাইয়েদা জোবায়দা খাতুন যাহার সাদী মোবারক পার্শ্ববতী পাঁচ গাও নিবাসী শাহ্ সূফী হযরত মাইনুদ্দীন মাল (রাঃ) সাহেবের সহিত সুসম্পন্ন হইয়াছিল। তৃতীয় শাহ্জাদী সাইয়েদা ………….খাতুন যাহার সহিত নড়িয়াস্থ ধূনই নিবাসী শাহ্ সূফী হযরত সাইয়েদ আলী মীর (রাঃ) সাহেববের সহিত শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হইয়াছিল। চতুর্থ শাহ্জাদী সাইয়েদা ………….খাতুন যাহার সাদী মোবারক ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন জয়পাড়া পাক দরবার শরীফের শাহ্ সূফী হযরত মোঃ হোসেন চৌধুরীর সহিত সুসম্পন্ন হইয়াছিল। তৃতীয় স্ত্রীর গর্ভে একজন শাহ্জাদী সাইয়েদা আরেফা খাতুন জন্ম লাভ করেন। তাঁহার সাদী মোবারক শামপুর দরবার শরীফের পীর সাহেব হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ গোলাম মাওলা হোসাইন চিশ্তী (রাঃ) সহিত সুসম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য, সুরেশ্বরী বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী নিঃসন্তান ছিলেন। তাহারা সকলেই ছিলেন বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলার আদর্শের মূর্ত প্রতীক।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ বাবার আওলাদগণ

অলিয়ে বরহক্ব হযরত নূরী শাহ্ বাবা (রাঃ) দুইবার দ্বার পরিগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার প্রথমা স্ত্রী সাইয়েদা সালেহা বেগম নোয়াখালী জেলার রায়পুর নিবাসী তদানীন্তন পূর্ব বঙ্গের হাদিস শাস্ত্রবিদ, অদ্বিতীয় আলেম পীরে কামেল আরেফে বিল্লাহ দানশীল মহাপুরুষ হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) এর কন্যা ছিলেন।

হযরত নূরী শাহ্ অনেক বিলম্বে দ্বিতীয় বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। তাহার দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম আশরাফুন্নেছা ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার খলিফা এবং বড় জামাতা জনাব মৌলভী ইসমাইল হোসেন সাহেবের ভ্রাতুষ্পুত্রী।

হযরত নূরী শাহ্ বাবা প্রথমা স্ত্রীর গর্ভের সন্তান। প্রথমা স্ত্রীর গর্ভে তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করে।

প্রথম পক্ষের আওলাদগণঃ

জৈষ্ঠ পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ হেলাল নূরী (রহঃ)

মেঝপুত্রঃ   হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রহঃ)

সেজপুত্রঃ    হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ তাজাম্মল নূরী (রহঃ)

জৈষ্ঠ কন্যাঃ শাহজাদি সাইয়েদা সালেহা নূর (রহঃ)

দ্বীতিয় পক্ষের আওলাদগণঃ

চতুর্থ পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ বেলায়েত হোসেন নূরী (রহঃ)

কনিষ্ঠপুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরে আখতার হোসাইন (মাঃজিঃআঃ)


মেজ কন্যাঃ শাহজাদি সাইয়েদা মমতাজ নূর (রহঃ)

কনিষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদি সাইয়েদা নাসিমা নূর।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ হেলাল নূরী (রহঃ)

হযরত শাহ্ সূফী হেলাল নূরী (রাঃ) ছিলেন হযরত নূরী শাহ্ বাবার জৈষ্ঠপুত্র। তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। দুনিয়া তথা জাগতিক বিষয়াদির প্রতি তিনি ছিলেন একেবারেই উদাসীন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার পবিত্র নামের প্রেমেই তিনি নিজেকে ধ্যানমগ্ন করিয়া রাখিতেন। পিতার সিলসিলা মোতাবেক তিনিও দরবারের সুমহান দায়িত্ব অত্যন্ত যোগ্যতার সহিত পালন করিয়াছেন। তিনি ছিলেন স্বভাব কবি এবং সংগীতজ্ঞ। সুরের মূর্ছনার মধ্যে তিনি বেহাল হইয়া যাইতেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষ দোতরা বাদক ছিলেন। তাঁহার দোতরায় যখন তিনি ধুন তুলিতেন তখন দরবারের আশেক ও ভক্তগণ বেহুশ বেক্বরার হইয়া পড়িত। অসংখ্য ভক্তের মধ্যে রাঁগ-মূর্ছনায় যাহার ব্যাকুল বেক্বারার হইয়া তাহাদের মধ্যে পল্লী কবি জসীমউদ্দিন, সুরের পাখী আব্বাছ উদ্দিন এবং প্রথতযশা কবি তসর আলী সাহেব বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত মুরিদ ছিল। একপুত্র, দুই কন্যা ও অসংখ্য ভক্তকুল রাখিয়া এই মরমী শিল্পী, অলিয়ে কামেল হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ হেলাল নূরী (রাঃ) বাংলা ১৩৫৭ সনের ১০ই শ্রাবণ তারিখে বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন। তাঁহার রওজা শরীফ সুরেশ্বরী ক্বিলা কা’বার রওজা মোবারকের দক্ষিণ প্রান্তে রহিয়াছে।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ হেলাল নূরী (রহঃ) এর আওলাদগণ

একমাত্র পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ বোরহান নূরী।

কন্যাগণঃ

শাহ্জাদী সাইয়েদা আবে কাউছার নূর পিয়া

শাহ্জাদী সাইয়েদা আবেদা আক্তার নূর শরীফা।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রাঃ)

সামছুল আরেফিন, রফিকুচ্ছালেহীন, কোতবোল আকতাব, হযরত মাওলানা সাইয়েদ শাহ্ সূফী জালাল নূরী (রাঃ) বাংলা ১৩২৮ সালের ৮ই কার্তিক জন্ম গ্রহণ করেন। অল্প বয়সে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া ত্বরিকায়ে সুরেশ্বরীর খেদমতে নিয়োজিত হন। বড় ভাই শাহ্ নূরে হেলালের মত তিনিও নিপুন ভাবে বাশেঁর বাশিঁ বাজাইতে পারিতেন। কাব্যিক জ্ঞান ছিল তাহার সাগর তুল্য। গভীর রাতে তাঁহার বাশিঁর সুরে ভাবুক মনে চরম ভাবের উদয় হইত। উল্লেখ্য, হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) স্বয়ং জৈষ্ঠ পুত্র হযরত নূরী শাহ্ (রাঃ) বাবার কাছে বলিয়া ছিলেন, “তোমার ঔরসে দ্বিতীয় যে সন্তান আসিবে তাহার দ্বারা এই দরবারের প্রচার প্রসার এবং শান-শাওকাত বৃদ্ধি পাইবে আমি তাহার নাম নূরে জালাল রাখিয়া গেলাম”। হযরত নূরী শাহ্ বাবার বেছাল হক্ব লাভ করিবার এক বৎসর আগে ১৯৬০ সনের ২০শে মাঘ মহা পবিত্র উরসের দিনে হযরত নূরী শাহ্ বাবা তাহার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদের সমন্বয়ে দরবারে বসিয়া ছিলেন। হঠাৎ সুরেশ্বরী (রাঃ) এর প্রথম শ্রেণীর খলিফা মোকরম আলী দরবেশ নূরী শাহ্ বাবার নিকট বলিলেন “হুজুর, আমি স্বপ্নে দর্শন করিয়াছি যে, স্বয়ং সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা হযরত জালাল নূরীর মাথায় জরির মুকুট পরাইয়া দিতেছেন”। ইহা শ্রবণ করতঃ হযরত নূরী শাহ্ ক্বিবলা তাহা সমর্থন করেন। অতঃপর ঐ মাহ্ফিলেই তিনি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার বাতেনী নির্দেশ প্রাপ্ত হইয়া বাবাজান হযরত জালাল নূরী (রাঃ) কে হযরত নূরী শাহ্ ক্বিবলা হযরত সুরেশ্বরী (রাঃ) এর বেলাতের ভান্ডার এবং বেলায়েতের বন্টনকারী ও দরবারের গদিনশীন বলিয়া ঘোষণা করেন। বাবা জালাল নূরী (রাঃ) দীর্ঘ ৪৫ বৎসর যাবত গদিনশীন হিসেবে সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার অতিশয় উন্নতি সাধন করেন। সুরেশ্বরী বাবার রওজা পাকের মূল বিল্ডিং সংস্কার করিয়া গম্বুজ নির্মাণ করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা জীবদ্দশায় তাহার জৈষ্ঠ পুত্র হযরত নূরী শাহ্ বাবাকে বলিয়াছিলেন, “যেই দিন উরস মাহ্ফিল প্রধান আষা খানি ভাঙ্গিয়া দুই টুকরা হইয়া যাইবে যাহা হুজুর পুর নূর রাসূলে করিম (সাঃ) এর রূহানীয়াত এর সহিত সম্পৃক্ত সেই দিন এই দরবারের বেলায়েত ও রূহানীয়াত ক্ষমতা স্থানান্তরিত হইবে”। সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার সেই অমোঘ অছিয়ত বাণী হযরত নূরী শাহ্ বাবার সময়ের শেষ দিকে সংঘটিত হইয়া ছিল এবং বাবা হযরত জালাল নূরী (রাঃ) উক্ত আষা মোবারকের সংস্কার করিয়াছিলেন। বাবা হযরত জালাল নূরী (রাঃ) পবিত্র হজ্বব্রত পালন করিয়াছেন। হজ্ব হইতে ফিরিয়া আসিয়া তিনি “জিয়ারতে মদিনা” নামে একখানি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। আশেক তথা রাসূল প্রেমিকদের জন্য ইহা একখানি অমূল্য গ্রন্থ। “জীবন কাব্য” নামে কবির আর একখানা কাব্যগ্রন্থ রহিয়াছে যাহা বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। তাহার বিরচিত কাব্যগ্রন্থে ছন্দ ও লয় আশ্চর্য্য রকম ভাবে স্থিতি লাভ করিয়া জগৎ সংসারের খুটিনাটি বিষয়কে তিনি তাহার লিখনীতে এমন করিয়া ফুটাইয়া তুলিয়াছেন যাহা নিতান্তই বিরল। হযরত নূরী শাহ্ ক্বিবলা কা’বার ভক্ত বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জসীম উদ্দিন প্রায়ই সুরেশ্বর দরবার শরীফে আগমন করিতেন এবং বাবা হযরত জালাল নূরী (রাঃ) সহিত নিরালায় বসিয়া মারেফত সম্পর্কে বিশেষ আলোচনায় সারা রাত্র নির্ঘুম কাটাইয়া দিতেন। কবির সহিত বাবা জালাল নূরী (রাঃ) গভীর সম্পর্ক ছিল।বাবা জালাল নূরীর লিখনীর মধ্যে পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের লিখার প্রভাব দেখা যায়। ইহাছাড়াও কবি সিরাজুল ইসলাম সাহেবও বাবা জালাল নূরী (রাঃ) একজন মুরিদ ছিলেন এবং তাঁহার লিখিত কবিতার সর্বোচ্চ ভক্ত ছিলেন। আপন কৃতিত্বে ভাস্বর, বেলায়েতের পূর্ণ মনি, শামসুল আরেফিন, রফিকুচ্ছোলেকীন অলিয়ে মোকাম্মেল লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও মুরিদের মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রাঃ) আফিআনহু সুরেশ্বর দরবার তথা আশেকানে সুরেশ্বরীদের কষ্ট এবং শোকের দরিয়ায় ভাসাইয়া বাংলা ১৪০৬ সালের ২৫শে ফাল্গুনে ৭৯ বৎসর হায়াত মোবারক লাভ করিয়া বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন। তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ দরবারে সুলতানুল আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরিফ, নড়িয়া, শরীয়তপুর।

হযরত জালাল নূরী (রাঃ) পাঁচ পুত্র সম্পর্কে “জীবন কাব্য” নামক কাব্য গ্রন্থে স্বয়ং খিয়াছেন- 

“পাঁচ পুত্র তিন মেয়ে জালাল নূরীর,

প্রথম পুত্র কামাল নূরী বড় এ বাড়ির।

লেখাপড়া এম.এ. পাশ বিশ্ববিদ্যালয়,

যোগ্যতা সময় মাঝে দেয় পরিচয়।

দ্বিতীয় বেলাল নূরী শাহ্ মুজাদ্দেদী,

বি-কম ডিগ্রিতে পাশ হয় অগ্রগতি।

তৃতীয় ইকবাল নূরী বি.এ. পাশ করে,

দরবারের কার্য্যভার রাখে শিরোপরে।

চতুর্থ শাহানশাহ্ নূরী করে এম.এ. পাশ,

ব্যবসার যাত্র করিছে তালাশ।

দরবারে বিদ্যুৎ বাতি টেলিফোন তার,

তার চেষ্টায় স্থিতি হল অতি চমৎকার।

পঞ্চম আলম শাহ্ নূরী বি.এ. পাশ করি,

যোগ্যতার অভিযান করে ধৈর্য্য ধরি।

মাইক্রোফোনে সঙ্গীত চর্চা সুরেশ্বরী গান,

উরস দিবস করে নামাজ আযান।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ জালাল নূরী (রাঃ) আওলাদগণ

জৈষ্ঠ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ কামাল নূরী

মেঝপুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ বেলাল নূরী

সেজ পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ইকবাল নূরী

চতুর্থ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহানশাহ্ নূরী

কনিষ্ঠপুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ আলম শাহ্ নূরী

কন্যাত্রয়

জৈষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা ফরিদা নূর

মেজ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা শাহিদা নূর

কনিষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা ইরানী নূর।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ (রহঃ) এর তৃতীয় পুত্র হযরত শাহ্ নূরে তাজাম্মল নূরী (রাঃ)

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ তাজাম্মল নূরী (রাঃ) হযরত নূরী শাহ্ (রাঃ) বাবার তৃতীয় পুত্র অলীয়ে বরহক্ব শাহ্ নূরে তাজাম্মল (রাঃ) হুজুরও সুরেশ্বর দরবার শরীফের অন্যতম গদীনশীন পীর ছিলেন। পিতার ত্বরিকত প্রচারে তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সংযম প্রদর্শন করিয়া ত্বরিকার শ্রী বৃদ্ধি করিয়াছেন। অসংখ্য ভক্ত মুরিদের ক্বিবলা তিনি। বাংলা ১৩৯৫ সনের ২৬ শে ফাল্গুন তিনি অসংখ্য ভক্তকুল রাখিয়া ইহধাম ত্যাগ করেন।

শাহ্ নূরে তাজাম্মল (রাঃ) হুজুর দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছেন। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে এক পুত্র ও এক কন্যা এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে তিন পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান রহিয়াছেন। শাহ্ নূরে তাজাম্মল (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মাজারের পদপ্রান্তে পাঁচ মাজার শরীফের পূর্ব পার্শ্বে রহিয়াছে।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ তাজাম্মল নূরী (রহঃ) এর আওলাদগণ

প্রথম পক্ষঃ

একমাত্র পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে পারভেজ।

একমাত্র কন্যাঃ শাহজাদী সাইয়েদা শাহিনা নূর।

দ্বীতিয় পক্ষঃ
জৈষ্ঠ পুত্রঃ   হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে সেলিম নূরী

মেজ পুত্রঃ   হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে বেনজীর নূরী

কনিষ্ঠ পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে মাহ্তাব নূরী।

কন্যাদ্বয়ঃ

জৈষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা নাজমা নূর

কনিষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা সুলতানা নূর।

হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ বাবার দ্বিতীয় পক্ষের আওলাদগণ
হযরত সাইয়েদ শাহ্ সূফী বেলায়েত নূরী (রহঃ)

শাহ্ সূফী সাইয়েদ বেলায়েত নূরী (রাঃ) ১৩৪৫ বাংলা সনের ১লা মাঘ পৃথিবীতে আগমন করেন। কিশোর বয়সেই তিনি পিতাকে হারান। কৃচ্ছাতা সাধক এবং সংযমের মুর্ত প্রতীক হযরত শাহ্ সূফী বেলায়েত হোসেন (রাঃ) ছিলেন সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার একজন বিশেষ খাদেম ও প্রচারক। তিনি দরবারের উন্নতিকল্পে সর্বদা ব্যস্ত থাকিতেন। তিনি সুরেশ্বর দরবার শরীফের একজন গদীনশীন পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা। দরবার শরীফের আশপাশের রাস্তাঘাট সংস্কার তাহারই সু-কীর্তি। দরবার ও আশেক ভক্তদের প্রয়োজনের কথা স্মরণ করিয়া তিনি দরবার শরীফে পোষ্ট অফিস স্থাপন করেন। উরস উপলক্ষে আগত লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরিদদের যাহাতে কোনরূপ কষ্ট পাইতে না হয় সেই জন্য তিনি ছিলেন সদা ব্যস্ত। ত্বরিকতের দিকপাল হইয়াও তিনি অতি সাধারণ ভাবে চলাফেরা করিতেন। বিবাহিত জীবনে তিনি দুইবার দ্বার পরিগ্রহণ করিয়াছেন। চার পুত্র ও দুই কন্যার গর্বিত জনক তিনি।

হযরত সাইয়েদ শাহ্ সূফী বেলায়েত নূরী (রাঃ) ওরফে লাল মিয়া শাহ্ (রাঃ) ভক্তদের নিকট লালু চান নামে সমধীক প্রসিদ্ধ। সুরেশ্বর দরবারের ত্বরিকত প্রচার ও প্রসারের জন্য আমৃত্যু নিজেকে নিয়োজিত রাখিয়া বাংলা ১৪০৮ সনের ২৬ শে আষাঢ় এই অলীয়ে বরহক্ব অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদদেরকে শোকের মাঝে রাখিয়া বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন। তাঁহার রওজা মোবারক সুরেশ্বর দরবার শরীফ, নড়িয়া, শরীয়তপুর।

হযরত সাইয়েদ শাহ্ সূফী বেলায়েত নূরী (রহঃ)আওলাদগণ

প্রথম পক্ষঃ

জৈষ্ঠ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে শাহরিয়ার হোসাইন নিরব (রাঃ)

মেজ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে জামান হোসাইন নাঈম

কনিষ্ঠ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরে আরিফ আল শরীফি।

জৈষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা বিলকিস মহল কলি নূর
কনিষ্ঠ কন্যাঃ শাহ্জাদী সাইয়েদা জারজিস মহল কুহু নূর।

দ্বীতিয় পক্ষঃ

একমাত্র পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে তৌহিদুল হোসাইন

হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরে আকতার হোসাইনঃ

হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরে আখতার হোসাইন ওরফে হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়দ চুন্নু মিয়া শাহ্ ১৩৫০ বাংলা সনের ২রা অগ্রহায়ণ দিবাগত রাত্রে সুব্হে সাদেকের সময় সুরেশ্বরে জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরী শাহ্ (রাঃ) অতি মহব্বতের তাঁহাকে ত্বরিকত শিক্ষা দান করেন। জনাব শাহ্ নূরে আখতাব হোসাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি বর্তমানে সুরেশ্বর দরবার শরীফের খেদমতে নিয়োজিত রহিয়াছেন। তিনি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার তৃতীয় পুরুষের মধ্য জীবিত একমাত্র আওলাদ। সুরেশ্বর দরবার শরীফের অন্যতম গদিনশীন পীর। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রহিয়াছে। তৎসঙ্গে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার মালিবাগে “খানকায়ে সুরেশ্বরীয়া” স্থাপন করিয়া বিশ্বের সর্বত্র ত্বরিকতের প্রচার কার্য্য চালাইয়া আসিতেছেন। তিঁনি ‘মাসিক সুরেশ্বর’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা। তাঁহার পাঁচ পুত্র ও এক কন্যা।

হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ নূরে আকতার হোসাইন আওলাদগণঃ

জৈষ্ঠ পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে মঞ্জুর মোর্শেদ

মেজ পুত্রঃ   হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে আহম্মদ মোর্শেদ

সেজ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে এহসান মোর্শেদ

চতুর্থ পুত্রঃ হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে আ’তা মোর্শেদ

কনিষ্ঠ পুত্রঃ  হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ শাহ্ নূরে সাইফুল মোর্শেদ

একমাত্র কন্যাঃ  শাহ্জাদী সাইয়েদা কেয়া নূর।

No comments:

Post a Comment

কালামে সুরেশ্বরী

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ছিলেন অত্যন্ত বুৎপত্তিময় কবি ও লেখক। তাঁহার রচিত বাংলা ও উর্দু কিতাবগুলি মারেফত রাজ্যের এক বিশাল ভান্ডার। গ্...