Thursday, September 25, 2025

হযরত মিরান শাহ্ (রহঃ) এর মাজার জিয়ারতে অলৌকিক ঘটনা

 হযরত মিরান শাহ্ গাউসুল আজম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) এর পৌত্র। নোয়াখালী রামগঞ্জ থানাধীন কাঞ্চনপুরে তাঁহার মাজার শরীফ। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা নোয়াখালী সফর শেষে বাড়ি ফেরার পথে রামগঞ্জে হযরত মিরান শাহের মাজারের কাছাকাছি নৌকা ভিড়াইতে বলিলেন। এই সময়ে নোয়াখালীর আসলাম ভূঁইয়া, মেন্দি মিয়া, মোকরম আলী দরবেশ ও পন্ডিত সাহেব সহ আরো অনেকেই তাঁহার সফর সঙ্গী ছিলেন। হযরত তাহাদের বলিলেন, আমি হযরত মিরান শাহের মাজার জিয়ারতে যাইব, তোমরা কেহই আমার সহিত আসিবেনা। আমি ফিরিয়া আসা পর্যন্ত তোমরা নৌকায় থাকিবে। হযরত সব সময়ে ভক্তদের সঙ্গে লইয়া মাজার জিয়ারতে যান। আজ প্রথমবারের মত ভক্তদের যাইতে বারণ করায় তাহাদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি হইল তবে, তাহা হইলেইবা কি? মুর্শিদের হুকুম অমান্য করিবার উপায় নাই। কিন্তু পন্ডিত সাহেবের কৌতুহল অদম্য। তিনি জানিবেনই, কেন তাঁহাদেরকে সাথে যাইতে বারণ করা হইল। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কিছুদূর মাজারের দিকে অগ্রসর হইলে পন্ডিত সাহেব সাথীদের এড়াইয়া তাঁহার অগোচরে হযরতের পশ্চাদানুসরণ করেন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা মাজারে পৌছিলেন। এই দিকে পন্ডিত সাহেব তাঁহার অনতিদূরে জঙ্গলে আত্মগোপন করিয়া রহিলেন। হঠাৎ পন্ডিত সাহেব দেখিলেন, হযরত সুরেশ্বরী বাবা মাজারের নিকট পৌছানোর সঙ্গে সঙ্গে রওজা মোবারকের মাঝখান হইতে দুই ভাগ হইয়া গেল এবং অভূতপূর্ব একটি আলোকরশ্মি বাহির হইয়া মাজার প্রাঙ্গণ আলোকিত করিয়া তুলিল। সুরেশ্বরী বাবা নিমেষে রওজা মোবারকের মধ্যে অন্তরিন হইয়া গেলেন এবং রওজা শরীফ জোড়া লাগিয়া পূর্ববৎ হইয়া গেল। পন্ডিত সাহেব কিছুটা কৌতুহল, কিছুটা ভয়ার্তচিত্তে মাজারের দিকে একটানা দৃষ্টি রাখিয়া জঙ্গলে ওঁৎ পাতিয়া রহিলেন। প্রায় দুই ঘন্টা পর মাজার শরীফকে কেন্দ্র করিয়া অনুরূপ ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটিল। রওজা মোবারক পূণরায় দ্বিখন্ডিত হইয়া আলোকময় হইয়া পড়িল এবং হযরত সুরেশ্বরী বাবা রওজা মোবারক হইতে বাহির হইয়া আসিলেন। পন্ডিত সাহেব কিছু বুঝিতে পারিবার পূর্বে জ্যোতিঃ মিলাইয়া গেল। তিনি দেখিলেন, হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা নৌকার দিকে অগ্রসর হ্ইতেছেন।
এই দিকে পন্ডিত সাহেবের অন্তরে ভয় ধরিল। ধরা পড়িলে বিপদ হইতে পারে। অতএব দয়ালের আগে নৌকায় পৌছাইতে হইবে। সুতরাং জঙ্গল হইতে বাহির হইয়া দয়াল বাবার আগেই জোর কদমে নৌকার দিকে রওয়ানা হইলেন। কিন্তু দয়ালের দৃষ্টি এড়াইতে পারিলেন না। পিছন হইতে ডাক আসিল-হে পন্ডিত! দাঁড়াও পন্ডিতের তখন সমস্ত শরীরে কাঁপন শুরু হইল, কাঁপিতে কাঁপিতে করজোড়ে দয়াল বাবার পদ প্রান্তে লুটাইয়া পড়িয়া যান। আর মিনতি করিয়া বলিলেন, বাবা! আমি কৌতুহল দমাইতে পারি নাই, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি কোন দিন আপনার অবাধ্য হইব না। আমাকে ক্ষমা না করিলে আমি আপনার পা ছাড়িবনা।
অতঃপর হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা হুকুম করিলেন। পন্ডিত! তোমাকে এক শর্তে ক্ষমা করিতে পারি- তুমি হযরত মিরান শাহের মাজারে যাহা কিছু দেখিয়াছ, তাহা আমার জীবদ্দশায় কাহাকেও বলিতে পারিবেনা। যদি বল, তাহা হইলে তৎক্ষনাত পেটের পীড়া হইয়া তোমার মৃত্যু হইবে। পন্ডিত সাহেব শর্ত মানিয়া নিলেন এবং কখনও কাহাকেও বলিবেন না মর্মে ওয়াদা করিলেন। দয়াল তাহাকে মাফ করিয়া দিলেন এবং দুই জনই নৌকায় চলিয়া আসিলেন।
নিজের মুর্শিদের এইরূপ অত্যাশ্চর্য অলৌকিক ক্ষমতা এবং নূরানী শক্তি প্রচার করিতে সব মুরীদেরই ভাল লাগে। কিন্তু অনেক বার বলিতে চাহিয়াও পন্ডিত সাহেব ওয়াদার কারণে এই বিষয়ে মুখ খুলিতে পারেন নাই বা খুলেন নাই। আপনা মুর্শিদের এইরূপ অলৌকিক ক্ষমতা ও নূরানী শক্তির চাক্ষুস দৃশ্য মনে ধারণ করিয়া পন্ডিত সাহেব অনেক বছর বাঁচিয়া ছিলেন। যেই দিন তাহা প্রকাশ করিলেন সেই দিনই দাস্ত-বমি করিতে করিতে পন্ডিত সাহেব ইহধাম ত্যাগ করেন।
পন্ডিত সাহেবের মৃত্যুর ঘটনাটি এই রকম। একদিন পন্ডিত সাহেবর কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি তাহার ঘরে বসিয়া নিজ নিজ পীরের গুণগান ও বিভিন্ন অলৌকিক ক্ষমতার কথা বলাবলি করিতেছিল। অনেকক্ষণ এই সব শুনার পর তিনি অধৈর্য্য হইয়া পড়িলেন এবং নিজের মুর্শিদের গুণগান ও অলৌকিক ক্ষমাতার কথা বলিতে বলিতে এক অসতর্ক মূহুর্তে হযরত মিরান শাহের মাজারের নিষিদ্ধ ঘটনাও বলিয়া ফেলিলেন। ফলে তাহার দাস্তবমি শুরু হইল। লোক ডাক্তার ঔষদের খোঁজে দৌড়াদৗড়ি আরম্ভ করিলে পন্ডিত সাহেব সকলকে ডাকিয়া বলিলেন, ডাক্তার-ওঝা দ্বারা আমার কোন উপকার হইবে না। মুর্শিদের কথা স্মরণ করিয়া শান্তভাবে সকলকে জানাইয়া দিলেন, আমার যাওয়ার সময় হইয়াছে তোমরা প্রস্তত হও। বস্ততঃ তাহাই হইল। হযরত মিরান শাহের মাজারে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার ঘটনা এবং এতদসংক্রান্ত তাহার ওয়াদার কথা বলিতে বলিতে পন্ডিত সাহেব আনন্দোজ্জল মুখ মন্ডলে ইহধাম ত্যাগ করিলেন।
বলা বাহুল্য যে, এইখানে অনেকেই মনে করিতে পারেন, হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার কারণেই পন্ডিত সাহেবের অকাল মৃত্যু হইল। তিনি যদি তাহাকে মৃত্যুর অভিশাপ না দিতেন তাহা হইলে এইভাবে অকালে তাহার মৃত্যু হইত না। স্থুল দৃষ্টিতে ইহা মনে হওয়া স্বাভাবিক। তবে, যাহারা বিশ্বাস করেন, বেলায়েতের শিরমণি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলার মত মুর্শিদ কখনও আপন মুরিদকে অকাল মৃত্যু অভিশাপ দিতে পারেন না এবং যাহাদের আধ্যাত্মিক বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান আছে, তাহাদের কখনও তাহা মনে হইবে না। বস্তুতঃপক্ষে পন্ডিত সাহেবের মৃত্যু সংক্রান্ত হযরতের উক্তিটি ছিল, তাহার মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষৎবাণী স্বরপ। মানুষের মৃত্যু হয় না। তাহাতে সাধারণ মানুষ মনে করে, এই কারনেই অমুকের মৃত্যু হইল। বস্তুতপক্ষে নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত কারণে মানুষের মৃত্যু হইবে এবং তাহাই হইয়াছে। আসলে ঐদিন ঐভাবে তাহার মৃত্যু নির্ধারিত ছিল বলিয়াই আপন মুর্শিদের সহিত কৃত ওয়াদা ভুলিয়া গিয়া অন্যদের কথায় উত্তেজিত হইয়া আপন মুর্শিদের গুণগান করিতে করিতে নিষিদ্ধ গোপন পর্যন্ত প্রকাশ করিয়া দিয়াছিলেন।

No comments:

Post a Comment

কালামে সুরেশ্বরী

হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ছিলেন অত্যন্ত বুৎপত্তিময় কবি ও লেখক। তাঁহার রচিত বাংলা ও উর্দু কিতাবগুলি মারেফত রাজ্যের এক বিশাল ভান্ডার। গ্...