হযরত সুরেশ্বরী (রাঃ) ক্বিবলা কা’বার সাহচর্যে আসিয়া যাহার বায়াত গ্রহণ করিয়াছেন প্রত্যেকেই সর্ব রকমের সন্দেহ ছাড়া মহা সৌভাগ্যবান। আর মুর্শিদের সহ্বত তথা খেদমতে থাকিয়া যাহারা এস্কে ফানা হইয়া তথা ফানাফিশ্ শায়খ এ পৌছাইয়া খেলাফত করিয়াছেন তাহারা প্রত্যেকেই আধ্যাত্ম তথা বেলায়েত গগনের এরককটি পূর্ণ শশী। সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকাকে তাঁহারা বাংলাদেশ তথা বিশ্বের আনাচে কানাচে করিয়াছেন পরিচিত এবং লক্ষ লক্ষ মুর্দা দীল মানুষের অন্ধকারময় ক্বলবকে করিয়াছেন আলোকোজ্বল। দুই তিন পুরুষ বিগত হওয়ার কারনে অনেকের সম্পর্কেই অথবা তাহার আওলাদ এর সম্পর্কে জানা হইয়া উঠে নাই তবু যতটুকু সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি তাহা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থাকিয়া তুলিয়া ধরিবার চেষ্টা করিলাম মাত্র।
চাটখিল পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী মেন্দি মিয়া (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অন্যতম প্রধান খলিফাদের একজন। বলা হইয়া থাকে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার চার আছহাব এর একজন তিনি ছিলেন। আজীবন তিনি মুর্শিদ ক্বিবলার খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি মুশিদের নির্দেশে নিজের দেশে গিয়া ত্বরিকত প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। এইখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, জীবদ্দশায় তিনি প্রায়ই তাহার মুর্শিদ ক্বিবলা বাবা সুরেশ্বরীর নিকট আবেদন জানাইতেন, “বাবা জীবদ্দশায় আমি যেমন আমার কোন শান-শওকত চাইনা তেমনি মৃত্যুর পরেও আমার শান-মান প্রচার হোক তা চাইনা। আমি আপনার মাঝে ডুব দিয়া কাল কিয়ামত পর্যন্ত এইভাবে ডুবিয়াই থাকিতে চাই”। হয়তো মুর্শিদ ক্বিবলা তাহার প্রাণের দাবি কবুল করিয়াছিলেন। তাইতো আজ নোয়াখালী জেলার চাটখিলেন এক অজপাড়াগায়ে নির্ঝঞ্জাট ঘুমিয়ে আছেন বাংলার গৌরব রবি, বেলায়েতের মধ্যসূর্য় বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রাঃ) এর অন্যতম রূহানীয়াত সন্তান শাহ্ সূফী সাইয়েদ মেন্দি মিয়া (রাঃ) মাহাকালের মহাচক্রে একদিন হয়তো সবাই ভুলিয়া যাইবে যে, এইখানে ঘুমিয়ে আছে সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার এক মহার অলি। বাংলা ১৩৪৫ সনের ১০ই জৈষ্ঠ্য এই মহান অলি বেছাল হক্ব লাভ করেন।
পশ্চিম লক্ষিপুর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী আসলাম ভূঁইয়া (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার কথিত চার আছহাবের অন্যতম প্রধান খলিফা। তাঁহার পিতার নাম হযরত এবাদুল্লাহ্ ভূঁইয়া। তিনি লক্ষিপুর জেলার পশ্চিম লক্ষিপুরের জমিদার ছিলেন। সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট বায়াত গ্রহনের পর হইতে তিনি জমিদারির সমস্ত কিছু বিষর্জন দিয়া মুর্শিদের চরণ তলে আশ্যয় গ্রহণ করেন।
এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, মুর্শিদের খেদমতে তিনি এতটাই নিবেদিত প্রাণ ছিলেন যে, একবার সুরেশ্বর দরবার শরীফের পবিত্র উরস মোবারক শেষে ভক্তদের আনা তবারক সমূহ থেকে তিনি একজোড়া নারকেল বাড়িতে নেওয়ার জন্য গ্রহণ করেন। কিন্তু দরবার শরীফের খাদেম সাহেব তাহাকে চিনিতেন না বিধায় নারিকেল ধরার অপরাধে ভীষন ভৎর্সনা করেন। মনের ভিতরে অত্যন্ত দুঃখ পাইয়া তিনি কাঁদিয়া ফেলিলে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা চিৎকার করিয়া বাড়ির মধ্য হইতে আসেন। এখানে উল্লেখ করিয়া রাখা প্রয়োজন যে, সময়ে আসলাম ভূইয়া সাহেব নারিকেলের জন্যে কষ্ট পাইয়া কাঁদিয়া ছিলেন সেই সময় সুরেশ্বরী বাবা বাড়ির অভ্যন্তরে নিজ হালের মধ্যে ছিলেন। প্রিয় মুরিদের কষ্ট তাহাকে এমনভাবে আন্দোলিত করিয়াছিল যে, তিনি চিৎকার করিতে করিতে দরবার প্রাঙ্গনে আসিয়া হাজির হন। খাদেমকে লক্ষ্য করিয়া তিনি বলিয়াছিলেন যে, “হায় হায় তুই কি করিয়াছিস, যে মানুষ জমিদারির সব কিছু মুর্শিদের চরনে উজাড় করিয়া নিজের দেহ মনকে ওয়াক্ফ করিয়া দিয়াছে আজ তাকে তুই দুইটা নারিকেলের জন্যে আমার দরবারেই কষ্ট দিলি”। একটু লক্ষ্য করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, হযরত আসলাম ভূঁইয়া কিভাবে তাহার মুর্শিদের মধ্যে নিজেকে ফানা করিয়াছিলেন। তাহার ক্বলবের উপরের মাংসপিন্ড সর্বদা জিকিরের তালে তালে উঠা-নামা করিত। বাংলা ১৩৪২ সালের ৩রা মাঘ অসংখ্য আশেক ও ভক্তদের শোকের সাগরে ভাসাইয়া বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন। হযরত শাহ্ সূফী আসলাম ভূঁইয়া (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ, পশ্চিম লক্ষিপুরে অবস্থিত।
শায়েস্তানগর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী মকরুম আলী দরবেশ (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অন্যতম চার আছহাবের একজন। তাঁহার পিতার নাম মরহুম মহরম আলী জমাদ্দার। সূফী মকরুম আলী দরবেশ মাত্র ১২ বৎসর বয়সে সুরেশ্বর দরবার শরীফে আগমন করেন। তিনি একাধারে ১৮ বৎসর বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খেদমতে নিয়োজিত ছিলেন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন খলীফা সূফী মকরুম আলী দরবেশ মুর্শিদের খেদম,তে ছায়ার মত লাগিয়া থাকিতেন। বেছাল হক্ব প্রাপ্তির পূর্বে তাঁহার অসংখ্য কারামত প্রকাশ পাইয়াছে। বাংলা ১২৭৭ সালে জন্ম গ্রহনকারী এই মহান অলি ৭৫ বৎসর হায়াত শরীফ লাভ করিয়া বাংলা ১৩৫২ সালেন ২৯ শে ভাদ্র ইহধাম ত্যাগ করেন। হযরত শাহ্ সূফী মকরুম আলী দরবেশ (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ শায়েস্তানগর, রায়পুর,লক্ষিপুর জেলায় অবস্থিত।
জয় পাড়া পাক দরবার শরীফ
হযরত মাওলানা আব্দুল জব্বার চৌধুরী (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অন্যতম চার আছহাবের একজন। তাঁহার পিতার রাম হযরত তমিজ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বংশানুক্রমেই জমিদার ছিলেন। বর্তমান ঢাকা জেলার অন্তর্গত দোহার থানাধীন নারিশার তিমিকপুরে জমিদার হিসেবেই তাঁহার জীবন শুরু হয়। যেহেতু চৌধুরী সাহেব জমিদার ছিলেন সুতরাং কথা কাজ এবং আচরণে একটা জমিদারি ভাব প্রকাশ পাইত। কিন্তু মনের একান্ত গহীনে তিনি ছিলেন নিঃস্ব রিক্ত ফকির। সব সময় কিসের খোঁজে ব্যাকুল থাকিতেন। কি এক মহাকর্ষনে কোন মূল্যবান বস্তু না পাওয়ার ব্যাথায় থাকিতেন বিমর্ষ। জমিদারি জীবনে পার্থিব বিষয় আশয় কোন কিছুরই কমতি ছিলনা জব্বর চৌধুরীর। তাহার পিতা হযরত তমিজ উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন এলমে তা’সাউফ পন্থী। পিতার সেই পবিত্র জ্ঞানের স্রোত ফল্গুধারার মত তাহার অন্তরকে সিক্ত করিয়াছিল। তবুও কি এক মহাবস্তুর আশায় তিনি সব সময় চিন্তাযুক্ত থাকিতেন। এই অবস্থাতেই হঠাৎ একদিন একটি ঘটনার মাধ্যমে তাহার জীবনে ঘটিয়া যায় অচিন্তনীয় বিশাল ঘটনা এবং হযরত মাওলানা আঃ জব্বার চৌধুরী (রাঃ) এর নহিত তাহার মুর্শিদ হযরত সুরেশ্বরী বাবার মহা মিলন ঘটে। হযরত শাহ্ সূফী আব্দুল জব্বার চৌধুরী (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ ঢাকা জেলার দোহারে অবস্থিত।
কাটাখালী পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ মাওলানা আব্দুর জব্বার খাঁন মজলিস (রাঃ) ছিলেন তাঁহার সম সাময়িক কালের যুগশ্রেষ্ঠ আলেম তিনি উচ্চ শিক্ষিত এবং আরবী, ফার্সী ও উর্দু ভাষায় অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রেই তিনি শরিয়তের পা বন্দ ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি পীর ফকিরি, মাজারে সিজদা দেওয়া, উচ্চস্বরে জিকির করা, ভক্তি মূলক গান বাজনা প্রভৃতির গোড়া সমালোচক ছিলেন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার (রাঃ) সম্পর্কে তাহার অত্যন্ত নেতিবাচক মনোভাব ছিল। পরবর্তীতে তাহার শ্বশুর ক্বিবলা হযরত শাহ্ সূফী জব্বার চৌধুরী জয়পরী (রাঃ) এর অনুরোধে সুরেশ্বর গিয়া বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। প্রথম সাক্ষাতেই বাবা সুরেশ্বরী (রাঃ) তাহার প্রতি এমন তাওয়াজ্জুহ প্রক্ষেপণ করিলেন যে তিনি সহ্য করিতে না পারিয়া পানা নদীতে ঝাপাইয়া পড়েন এবং তিন দিন পর্যন্ত তিনি নদীতেই বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়িয়া ছিলেন। অতঃপর বাবা সুরেশ্বরী তাহাকে দয়া এবং স্নেহভরে বায়াত দান করিয়াছিলেন। সুরেশ্বরী বাবার নূরী স্পর্শে পরবর্তীতে তিনি আধ্যাত্মিক রাজ্যের একজন দিকপাল হইয়াছিলেন। হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী জব্বার খাঁন মজলিস (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ ঢাকা জেলার অন্তর্গত দোহার এর কাটাখালিতে অবস্থিত।
হযরত ইসমাইল শাহ্
শরীয়তপুরের নড়িয়া থানাধীন সুরেশ্বর নিবাসী হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী ইসমাইল হোসেন ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অতিশয় ভক্ত ও খলিফা। তদাদীন্তন ব্রিটিশ সরকারের আমলেই তিনি কলিকাতা হইতে মাদ্রাসা ইসলামী শিক্ষায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেন। টাইটেল পরীক্ণায় তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন এবং গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হন। প্রথম জীবনে তিনি পীর মুরিদি বিষয়গুলোকে বিতশ্রদ্ধার চোখে দেখিতেন। অসংখ্যবার একই বিষয়ে তিনি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার সহিত বাহাসে লিপ্ত হন। কিন্তু কোরআন-সুন্নাহর আলোকে প্রতিবারই তিনি সুরেশ্বরী বাবার নিকট পরাভূত হইতেন। অতঃপর সুরেশ্বরী বাবার তাহার নূরী হস্তে বায়াত গ্রহণ করিয়া নিজেকে ধন্য করিয়াছিলেন। মুর্শিদের খেদমত শরীফে নিয়োজিত থাকিয়া তিনি সারা বাংলাদেশে সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকা প্রচারের জন্য মুর্শিদের নির্দেশে বাহাছ করিয়া বেড়াইতেন। তাহার ক্বলব সবসময় জারি থাকিত। তিনি “ফানাফিস্ শায়খ” এর মোকাম পূর্ণভাবে হাসিল করিয়াছিলেন। তাহার ইন্তেকালের সময় তিনি তাহার পুত্র ও আত্মীয় স্বজনদের অছিয়ত করিয়া যান যেন, মুর্শিদের সম্মানার্থে ইন্তেকালের পরতাহার শির মোবারক দক্ষিন দিকে রাখিয়া দাফন করা হয়। কেননা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার রওজার অনতিদূরে উত্তর দিকে তাহার বসত বাড়ি ছিল। শরিয়তের বিধান অনুযায়ী উত্তরে শির মোবারক রাখিলে তাহার মুর্শিদের দিকে পদমোবারক চলিয়া যায়। এই বেয়াদবির ভয়েই তিনি অনুরূপ অছিয়ত করিয়া যান এবং ইন্তেকালের পর তাহাকে সেই ভাবেই দাফন করা হয়। ১৯৯৭ সালে পদ্মার করাল থাবায় যখন সুরেশ্বরের দিকে ভাঙ্গন শুরু হয় সেই সময়ে দুপুর ২ ঘটিকার সময় হঠাৎ তাহার তালাবদ্ধ রওজার ভিতর হইতে অত্যন্ত করুন সুরে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। আজানের সময় রওজার পার্শ্বস্থ রাস্তার উপর পথচলা ব্যস্ত মানুষের ভীড় জমিয়া যায়। সকল মানুষ দৌড়াইয়া রওজার দিকে গমন করে। কিন্তু কাহাকেও রওজা বা তাহার আশেপাশে দেখিতে পাওয়া গেলনা। এই ঘটনা সমগ্র এলাকায় ছড়াইয়া পড়ে। সেই সময় হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার পৌত্র হযরত জালাল নূরী (রাঃ) আফিআনহু জাহেরে ছিলেন। এই বিষয় বাবা জালাল নূরী (রাঃ) আফিআনহু’র কর্ণগোচর হইলে তিনি জানান যে, অলি-আউলিয়াগণ স্থান পরিবর্তন করিলে সাধারনতঃ তাহাদের মাজার শরীফ হইতে এইরূপ আজান ধ্বনিত হইয়া থাকে। ইহার একদিন পরেই পদ্মার করাল থাবায় মাওলানা ইসমাইল হোসেন সাহেবের মাজার শরীফ নদী গর্ভে বিলীন হইয়া যায়।
মির্জাগঞ্জ পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। তাঁহার আদি নিবাস বর্তমান শরীয়তপুর জেলারপালং থানাধীন ধামসী গ্রামে। তাঁহার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কিছুই জানা যায় না। তবে তিনি বেশীর ভাগ সময় পবিত্র কোরআন পাঠ করিতেন বিধায় এইটুকু বুঝা যায় যে আরবি ভাষায় জ্ঞান ছিল। তিনি খাঁন বংশের লোক ছিলেন। তাঁহার আসল নাম ইয়ার উদ্দিন খাঁন এবং পিতার নাম ছিল মোঃ সরাই খাঁন। পরবর্তী জীবনে তিনি জামা-কাপড় এবং টুপি সেলাই করিতেন বিধায় সবাই খলিফা সাহেব বলিয়া সম্বোধন করিতেন। তবে তিনি যে সত্যি সত্যিই মহান সুরেশ্বর দরবার শরীফের খেলাফত প্রাপ্ত খলিফা ছিলেন একথা প্রায় সকলেরই অজানা। আর তাই তাঁহার মাজার শরীফের খাদেম ও ভক্তদের সুরেশ্বর দরবার শরীফের সহিত তেমন কোন যোগাযোগ সৃষ্টি হয় নাই। যাইহোক, তিনি ছিলেন অত্যন্ত অন্তর্মূখী মানুষ। দেশে অর্থাৎ শরিয়তপুরে থাকাকালীন সময়েও তিনি কোনরূপ আত্মপ্রচার প্রসার পছন্দ করিতেন না। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকাটাই তিনি বেশী পছন্দ করিতেন। তাঁহার স্ত্রী এবং একমাত্র পুত্র মারা যাইবার পর অত্যন্ত উম্মনা হইয়া পড়েন। ফলে তাহাদের স্মৃতির কষ্ট হইতে নিস্কৃতি পাইবার জন্য তিনি তাঁহার মুর্শিদ হযরত জনশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট ছফরের নিমিত্তে আরজি জানান। বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাহাকে বরিশাল (তদানীন্তন) যাইয়া ত্বরিকত প্রচারের নির্দেশ করেন। অতঃপর হযরত শাহ্ সূফী ইয়ার উদ্দিন খলিফা তদানীন্তন বরিশাল বর্তমান পটুয়াখালী জেলার মির্জাপুর জেলার মির্জাগঞ্জ থানা শহরে নিজের আবাসন গড়িয়া তোলেন। তিনি অত্যন্ত সাদা সিধে জীবন যাপন করিতেন। সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার এই মহান অলির জন্ম ও বেছাল হক্ব সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না তবে ধারণা করা হয় এখন হইতে প্রায় ৬৫/৭০ বৎসর পূর্বে তিনি ফাল্গুন মাসের ২৪ বা ২৫ তারিখে বেছালহক্ব লাভ করেন। কেননা ঐ তারিখ সমুহেই তাহার মাজার প্রাঙ্গনে বাৎসরিক উরস মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়। হযরত শাহ্ সূফী ইয়ার উদ্দিন খলীফা (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ পটুয়াখালী জেলার মির্জাপুর থানায় অবস্থিত।
কোনাপাড়া পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী মাওলানা ফরখ উদ্দিন (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা। তাঁহার পিতার নাম হযরত মাওলানা মফিজ উদ্দিন (রাঃ) আদি নিবাস তদানীন্তন ফরিদপুর বর্তমান শরীয়তপু জেলার ডামুড্যা ধানাধীন ধুনই গ্রামে। হযরত ফরখউদ্দিন (রাঃ) স্থানীয় লেখাপড়া শেষ করিয়া কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা হইতে টাইটেল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পীর-মুরিদি বিষয়গুলোকে নাজায়েজ-বিদ্য়াত মনে করিতেন। তথাপি সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার প্রতি তাহার ছিল অগাধ ভক্তি। কেননা তদানীন্তন সময়ে সুরেশ্বরী বাবা ছিলেন সর্বোচ্চ প্রাপ্ত আলেম ও অলীয়ে মোকাম্মেল। তদুপরি তাহার পিতার মুর্শিদ ক্বিবলা। যাহা হোক উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করিয়া দেশে ফিরিয়া আসিলে পিতার নির্দেশে সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট বায়াত গ্রহণ করেন। বায়াত গ্রহণ করিবার ১ বৎসর পরে একবার উরস শরীফে সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খেদমতে তিনি হাজির ছিলেন। ইত্যবসরে সুরেশ্বরী বাবা তাহাকে পাখা দিয়া বাতাস করিতে বলেন। বাতাস করিবার এক পর্যায়ে সুরেশ্বরী বাবা ঘুমাইয়া পড়েন। ফজরের আযানের সময় বাবা সুরেশ্বরী জাগিয়া দেখেন যে, মাওলানা ফরখ উদ্দিন তখনও পাখা হাতে তাহাকে বাতাস করিতেছেন। ইহা দেখিয়া দয়াল বাবা সুরেশ্বরীর অন্তরে দয়ার সৃষ্টি হইল। তিনি ওয়াজদের হালাতে ফরখ উদ্দিনের দিকে তাকাইলেন এবং তাহাকে তাওয়াজ্জুহ দান করিলেন। তাওয়াজ্জুহর শক্তিতে মাওলানা ফরখ উদ্দিন ঠিক থাকিতে না পারিয়া চিৎকার করিয়া পড়িয়া যান। অতঃপর একটানা তিন দিন বেহুশ অবস্থায় ছিলেন এবং ইহার পর হইতেই তাহার মজ্জুব হালাত প্রকাশ পায়। পরবর্তীতে প্রায় ১২ বৎসর সুন্দর বনের গহীন অরণ্যে মজ্জুব হালাতে সাধনায় রত থাকে। এই সময়ে তাহার অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হয়। ইহার পর তিনি মুর্শিদের খেদমতে সুরেশ্বর ফিরিয়া আসেন। এইখানেই কিছু কাল অতিবাহিত করিবার পর হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাহাকে খেলাফত প্রদান করতঃ ত্বরিকত প্রচারের নিমিত্তে ময়মনসিংহ জেলায় যাইবার নির্দেশ প্রদান করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার কোনাপাড়া নামক গ্রামে অত্যন্ত মর্যাদার সহিত সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার বিজয় কেতন উড়াইয়া অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রাখিয়া বাংলা ১৩৫৯ সালের ২৩ শে অগ্রহায়ণ বেছাল হক্ব লাভ করেন। হযরত শাহ্ সূফী মাওলানা ফরখ উদ্দিন (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ ময়মনসিংহ জেলার কোনাপাড়া গ্রামে অবস্থিত।
ঝাউগড়ার চর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী সাদির ফকির (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কাবার একজন বিশিষ্ট খলিফা। অলি-আউলিয়াদের প্রতি ছিল তাহার অগাধ ভক্তি ও বিশ্বাস। তিনি ভাল করিয়া উপলব্দি করিয়াছিলেন যে অলি-আউলিয়ার সহবত লাভ তথা উছিলা ব্যতিত আল্লাহ্ প্রাপ্তির দ্বিতীয় কোন পথ নাই। তাই তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায়র মাজার শরীফ গুলোতে পীরের সন্ধানে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছেন। কিন্তু কোথাও তাহার মন বসাইতে পারেন নাই। তখনকার সময়ে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাঁহার মুরিদ ও খলিফা হযরত মাওলানা ফরখ উদ্দিনের বাড়িতে মাঝে মাঝে তাশরিফ নিতেন। এমনি এক সময়ে সুরেশ্বরী বাবা যখন তাঁহার মুরিদ ও খলিফা মাওলানা ফরখ উদ্দিনের বাড়িতে অবস্থান করিতেছিলেন তখন সাদির ফকির খবর পাইয়া মনের ভিতর কতগুলো প্রশ্ন লইয়া ( যাহা তিনি প্রত্যেক পীর মাশায়েখের নিকট করিতেন এবং সদুত্তর না পাইলে ফিরিয়া আসিতেন) সুরেশ্বরী বাবার সহিত সাক্ষাৎ করিতে কোনাপাড়া মাওলানা ফরখ উদ্দিনের বাড়ী অভিমুখে রওয়ানা হইলেন। যথা সময়ে সুরেশ্বরী বাবার সম্মুখে পৌছিয়া দেখিলেন যে হুজুর ক্বিবলা ভক্তগণ পরিবেষ্টিত হইয়া ত্বরিকত সম্পর্কে আলোচনায় মশগুল রহিয়াছেন। সাদির ফকিরও প্রশ্ন করিবার মানসে মাহফিলের এক কোণে বসিয়া পড়িলেন। কিন্তু কি হইতে কি হইয়া গেল সাদির ফকির কোন প্রশ্নতো করিতে পারিলেনই না উপরন্ত তাহার শরীর এমন ভাবে কাপিতে লাগিল যে জজ্বার হালতে তিনি লাফাইতে লাগিলেন। হৃদয়ের খবর উম্মোচনকালী হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা সাদির ফকিরের আগমনের পরই তাহার মন মধ্যস্থ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দা করিয়া তাহাকে এমন ভাবে তাওয়াজ্জুহ্ নিক্ষেপ করেন যে সাদির ফকির নিজেকে ধরিয়া রাখিতে না পারিয়া লাফালাফি শুরু করেন। অতঃপর বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর নূরী হাতের স্পর্শে সাদির ফকির শান্ত হইয়া আসিলে দয়াল বাবা সুরেশ্বরী তাহাকে বায়াত দাত করিয়া আপন রূহানীয়াত সন্তান রূপে গ্রহণ করিয়া লইলেন। বাংলা ১৩৭৬ সনের ২রা পৌষ সুরেশ্বরী ত্বরিকার এই মহান অলি বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন। হযরত শাহ্ সূফী সাদির ফকির (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ ময়মনসিংহ জেলার ঝাউগড়ার চরে অবস্থিত।
রামার বাড়ি পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী নূরী মোহাম্মদ মগবুল আহম্মদ মুন্সী (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার (রাঃ) প্রথম খলিফা। তাহার আদি নিবাস তদানীন্তন নোয়াখালী, বর্তমানে লক্ষিপুর জেলার রামগঞ্জ থানাধীন সোমপাড়া গ্রামে। তিনি ছাত্রঅবস্থায় অতি অল্প বয়সে সুরেশ্বর আগমন করেন। সুরেশ্বর দরবার শরীফে বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা আরবী ভাষা শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রথমে ৬/৭ জন ছাত্র লইয়া যে মাদ্রাসার গোড়াপত্তন করেন সেই মাদ্রাসারও ১ম ছাত্র ছিলেন শাহ্ সূফী মগবুল মুন্সী। মাদ্রাসার পাঠ সমাপণ করিয়া প্রায় ২০ বৎসর তিনি সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খেদমতে থাকিয়া যান। এই সময় তিনি তাহার মুর্শিদ হযরত সুরেশ্বরী বাবর নির্দেশে অনেক অসাধ্য সাধন করিয়াছেন। অতঃপর ত্বরিকতের অমিয় সুধা বিতরণের নিমিত্তে বাবা সুরেশ্বরী তাহাকে খেলাফত দান করিয়া তদানীন্তন ময়মনসিংহ বর্তমান নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার রামরবাড়ি গ্রামে প্রেরণ করেন। বাংলা ১৩৫৬ সালেন ২রা মাঘ রোজ সোমবার সুরেশ্বরী ত্বরিকার এই মহান অলি বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন।
মেঘুলা পাক দরবার শরীফ
হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সাইয়েদ অছিম উদ্দিন (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা। তিনি তৎকালীন ফরিদপুর শিবচর থানার পোদ্দারচর গ্রামে সাইয়েদ হাজী মফাতুল্লাহ সাহেবের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন। কৈশর বয়সে স্কুলে পড়া-লেখা না করিবার ফলে সকলের তিরস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে অভিমান করিয়া বাড়ি হইতে কাউকে কিছু না বলিয়া ঢাকায় চলিয়া আসেন। ঢাকায় আসিয়া বড় কাটারা মাদ্রাসায় ভর্তি হইয়া অধ্যয়ন শুরু করেন। মাদ্রাসার সর্বশেষে পরীক্ষায় কৃতিত্বের সহিত উত্তীর্ণ হইয়া সর্বোচ্চ সনদ লইয়া তিনি বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন। স্থানীয় জনসাধারণকে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা দিবার জন্য মক্তব ভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ও নছিহত শুরু করেন। অতি দ্রুত তাঁহার নাম ও যশ চতুর্দিকে ছড়াইয়া পড়ে।
তৎকালীন সময়ে হযরত বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) ত্বরিকত প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে প্রতি বছর ন্যায় অত্র এলাকায় আগমন করেন। হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার ত্বরিকত প্রচারে তিনি ঘোরেিরাধিতা শুরু করিলেন এবং এলাকার জনগণকেও বিরোধিতা করিবার জন্য আদেশ করিলেন। কিন্তু মহান রাব্বুল আলামিন যাহাকে দিয়া তাহার শান্তির বাণী প্রচার করাইবেন সে যতই বিরুদ্ধবাদী হউক না কেন তাহাকে অবশ্যই যথাস্থানে আসিতে হইবে। ঘটনাক্রমে মাওলানা সাহেবের সুযোগ্য সহধর্মিনী সাইয়েদা মাজু বিবি বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বাকে স্বপ্নে দর্শন প্রাপ্ত হইয়া বাড়িতে দাওয়াত করিবার জন্য মাওলানা সাহেবকে অনুরোধ করেন। অনিচ্ছা সত্বেও বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বাকে দাওয়াত করিয়া বাড়িতে আনিয়া বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলার সহিত বাহাছ শুরু করেন। সারা রাত বাহাছ করিবার পর পরাজয় বরণ করিয়া মাওলানা সাহেব এবং তাহার স্ত্রী দুইজনেই এক সঙোগ সুরেশ্বরী বাবার নিকট বায়াত গ্রহণ করিলেন। উল্লেখ্য যে, অত্র এলাকার মৌলভী আব্দুল জব্বার সহ বহু লোক সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট বায়াত গ্রহণ করেন।
তখন থেকে মাওলানা ইলমে তাছাউফের মহা সাগরে ডুব দিয়া মনি আহরন শুরু করেন। এক পর্যায়ে বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) মাওলানা সাহেবকে খেলাফত দান করিয়া ত্বরিকত প্রচার ও প্রসারের নির্দেশ প্রদান করেন। মাওলানা সাহেবের সহধর্মিনী যিনি বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নূরী হাতে বায়াত নিয়াছিলেন তিনি বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার এতটাই আশেক ছিলেন যে, হাল ও ওয়াজদের সময় তাহাকে জিঞ্জির দিয়া বাধিয়া রাখা হইত। কিন্তু তিনি “ইয়া জানু বাবা” বলিয়া হাঁক মারিলেই জিঞ্জির খুলিয়া যাইত। জীবদ্দশায় হযরত মাওলানা অছিম উদ্দিন শাহ্ (রাঃ) এর তরফ হইতে অসংখ্য কারামত প্রকাশিত হইয়াছে। বাংলা ১৩৪৩ সনের ১৯ শে ফাল্গুন রোজ বুধবার সকাল ৮ ঘটিকার সময় সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার এই মহান অলী অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদদেরকে শোক সাগরে ভাসাইয়া বেছাল হক্ব লাভ করেন। তাঁহার মাজার শরীফ চৌধুরীর চর, সদরপুর, ফরিদপুর।
নিতিরা পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী করিম চান পেয়াদা (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার (রাঃ) অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ও রহমতপ্রাপ্ত খলিফা। বাবা সুরেশ্বরী তাহাকে আকনজী বলিয়া সম্বোধন করিতেন। সুরেশ্বর দরবার শরীফের পবিত্র উরস সমূহে সারা জীবন বাবুর্চী খানার দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারু রূপে পালন করিয়া গিয়াছেন।
একবার মাহ্ফিলেন সময় অসংখ্য ভক্ত মুরিদ পরিবেষ্টিত হইয়া জিকির আজগার ইত্যাদি দেখিয়া বাবুর্চী খানার পেয়াদা সাহেবের মনে অনুশোচনার উদয় হইল যে বাবার আশে-পাশে থাকিয়া অন্যান্য পীরভাই এবং ভক্তেরা ইবাদত বন্দেগিতে ফয়েজ ও রহমত হাসিল করিয়া নিজেদের পরিপূর্ণ করিয়া তুলিতেছে আর আমরা সারাজীবন বাবুর্চী খানায় বসিয়া খানা পাকাইতেছি। বোধ হয় আমাদের এইখানে ফেলিয়া রাখিয়াছে। ইহা ভাবিয়া বুকের মধ্যে দারুন বেদনা অনুভব করিলেন। অতঃপর সুযোগ বুঝিয়া সুরেশ্বরী বাবার নিকট আরজ করিলেন, “বাবা আমার আপনার কোন খেদমতেই আসিতে পারিলাম না। আমাদের কৃত অপরাধের জন্য-বোধ হয় সারা জীবন বাববুর্চী খানায় ঘানি টানিতে হইবে।
সুরেশ্বরী বাবা তাহাদের অন্তরের অব্যক্ত বেদনাটুকু বুঝিতে পারিয়া বলিলেন, ”বাবা আমার দুইটি চোখ। একটি সদা-সর্বদা বাবুর্চী খানায় নিয়োজিত থাকে আর অন্য চোখটি সারা জাহানের ভাল-মন্দ দেখিয়া থাকে। তোমরা বাবুর্চী খানায় যে কয়জন কাজ করিতেছ তোমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখিবার জন্য আমার রহমতের একটি চোখ বাধা পড়িয়া আছে। আজ পর্যন্ত নিতিরা পেয়াদা বাড়ির উত্তরসূরীগণ যোগ্যতার সহিত সেই মহান দ্বায়িত্ব বিভিন্ন হিস্যায় পালন করিয়া আসিতেছে। হযরত শাহ্ সূফী শেখ করিম চাঁন পেয়াদা (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ নিতিরা, নড়িয়া, শরিয়তপুর জেলায় অবস্থিত।
টঙ্গি পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী মৌলুভী আব্দুল ওয়াহেদ শাহ্ ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অতি প্রিয় শিষ্য ও খলিফা। সুরেশ্বরী বাবার সহিত তিনি সবসময় সফরে যাওয়া আসা করিতেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি মুর্শিদের নির্দেশে বিভিন্ন মাজার শরীফ ও পবিক্র স্থান সমূহে ঘুরিয়া বেড়াইয়াছেন। তিনি জিবদ্দশায় তাহার একমাত্র মেয়ে এবং নিকটতম আত্মিয় স্বজনেেদর অছিয়ত করিয়া যান যে তাহাকে মৃত্যুর পরে যেন দক্ষিণ দিকে মাথা রাখিয়া দাফন করা হয়। যথা সময়ে তিনি বেছাল হক্ব লাভ করিলে শরিয়তের আলেমগণ অছিয়তকে প্রাধান্য না য়িা শরিয়তের রীতি অনুযায়ী উত্তর দিকে মাথা দিয়া দাফন করিবার নিমিত্তে কবরে রাখে। কিন্তু আল্লাহর কি মহিমা যে, কবরে রাখা মাত্রই তাহার দেহ মোবারক আপনা-আপনি দক্ষিন দিকে মাথা চলিয়া যায়। উপস্থিত সকলে অতিশয় আশ্চর্য হইলেও শরিয়তের আলেমগণের অলি-আউলিয়ার সম্পর্কে শুভ বুদ্ধির উদয় হয় নাই। তাহারা পূনরায় হযরত শাহ্ সূফী মৌলুভী আব্দুল ওয়াহেদ শাহ (রাঃ) এর দেহ মোবারকের মস্তক উত্তর দিকে ঘুরাইয়া দিলে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এইভাবে তিনবার তাহারা চেষ্টা করিবার পরেও যখন দেহ মোবারককে উত্তর সিথানে নেওয়া যাইতেছিলনা তখন তাহারা অছিয়ত অনুযায়ী দক্ষিন দিকে মাথা রাখিয়াই দাফন সম্পন্ন করে। সেই হইতে হযরত শাহ্ সূফী মৌলুভী আব্দুল ওয়াহেদ শাহ এর নাম উল্টা শাহ্ হিসাবে ব্যাপক ভাবে পরিচিতি লাভ করে। হযরত শাহ্ সূফী ওয়াহেদ শাহ্ ওরফে উল্টা শাহ্ (রাঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফ ঢাকার অদুরে গাজিপুর জেলাস্থ টঙ্গি বাজারের মধ্যে অবস্থিত।
সোমপাড়া পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী আব্দুল মজিদ মুন্সি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খেলাফত প্রাপ্ত খলিফা ছিলেন। হযরত সুরেশ্বরী বাবা যখনই নোয়াখালী সফরে যাইতেন তখনই তিনি গোপাইরবাগ, সোমপাড়া, চাটখিল জনাব মজিদ মুন্সী সাহেবের বাড়ীতে তাশ্রীফ নিতে ভুলিতেন না। সুরেশ্বরী বাবার ব্যবহৃত অনেক জিনিস পত্র আজও সেইখানে সর্বোচ্চ মর্জাদার সহিত সংরক্ষিত রহিয়াছে। এইখানে উল্লেখ করিয়া রাখা প্রয়োজন যে, হযরত মেন্দি মিয়া মুর্শিদের ওফাত দিবস উপলক্ষে নিজ গ্রামে উরস মোবারক পালন করিতেন। বেছাল হক্ব লাভ করিবার পূর্বে তিনি হযরত মজিদ মুন্সি সাহেবকে অছিয়ত করিয়া যান আপন পীর ভাইয়ের উরস মোবারক পালন করিবার জন্য সেই হইতে মজিদ মুন্সি সাহেব ২রা অগ্রহায়ণে যথাযোগ্য মর্জদার সহিত উরস মোবারক পালন করিয়া আসিতেন।পরবর্তীতে তাহার আওলাদগণ আজও ভাবগাম্ভির পরিবেশে ২রা অগ্রহায়ণে উরস মোবারক পালন করিয়া আসিতেছেন। হযরত শাহ্ সূফী আব্দুল মজিদ মুন্সি (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ গোপাইরবাগ, সোমপাড়া, লক্ষিপুর জেলায় অবস্থিত।
উত্তর গাও পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ মুন্দি সরদার (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খেলাফত প্রাপ্ত খলিফা। সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার বিশেষ আশেক ও খাদেম সাইয়েদ মুন্দি সরদার সাহেব বাংলা ১৩৩৮ সনের জৈষ্ঠ্য মাসে বেছাল হক্ব লাভ করেন। শ্রীনগর থানার তদন্ত ইউনিয়নের উত্তর গাও পাক দরবার শরীফে ১১ই অগ্রহায়ণ উরস মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ মুন্দি সরদার (রাঃ) এর পবিত্র রওজা শরীফ শ্রীনগর থানার তন্তর ইউনিয়নের উত্তর গাও অবস্থিত।
নরকলিকাতা পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী ইউসুফ ফকিরঃ শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন নরকলিকাতা গ্রামের হযরত শাহ্ সূফী ইউসুফ ফকির সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা ছিলেন। তিনি কাশফিয়া শক্তির অধিবারী হন। মুর্শিদের খেদমতই তাহার নিকট সবচেয়ে বড় ইবাদত বলিয়া বিবেচিত হইত। হযরত ইউসুফ শাহ্ সুরেশ্বরী বাবার সহিত সবসময় সফর সঙাগী হইতেন। তাহার অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রহিয়াছে। জীবদ্দশায় তাহার অনেক কারামত প্রকাশ পাইয়াছে। প্রতি বৎসর ২৪ শে মাঘ অত্যন্ত শান-শওকত ওজাকজমকের সহিত তাহার উরস মোবারক পালিত হয়।
একবার সুরেশ্বর দরবার শরীফে পবিত্র উরসে সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা ইউসুফ ফকিরকে মহিলা মহলে প্রবেশের দরজায় পাহারায় রাখেন। তিনি ইউসুফ ফকিরকে এই বলিয়া নির্দেশ প্রদান করেন যেন কোন সাবালক বা প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ প্রবেশ করিতে না পারে। কিছু সময় পরে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলাা কা’বার পুত্র হযরত আব্দুল হাই ওরফে নূরী শাহ্ বাবা মহিলা মহলে যাইবার জন্য দরজায় আসিয়া পৌছাইলে ইউসুফ ফকির বাধা প্রদান করে। নূরী শাহ্ বাবা কিছুক্ষন আশ্চর্য হইয়া চুপচাপ তাহার দিকে তাকাইয়া রহিলেন। অতঃপর বলিলেন তুই কি আমাকে চিনিতে পারিয়াছিস আমি কে? ইউসুফ ফকির করজোড়ে বিণয়ের সহিত উত্তর করিলেন জি, আমি আপনাকে চিনি। কিন্তু আমার মুর্শিদ ক্বিবলা আমাকে এই দরজায় পাহারায় রাখিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। যেন কোন সাবালক পুরুষ মহিলা মহলে প্রবেশ করিতে না পারে।মুর্শিদের হুকুম মান্য করিবার জন্যই আমি আপনাকে বাধা প্রদান করিয়াছি দয়া করিয়া আমার বেয়াদবি নিবেননা। এই কথা শুনিয়া নূরী শাহ্ বাবা তাহাকে বুঝাইবার চেষ্টা করিয়া ব্যর্থ হইলে রাগ হইয়া হাতের লাঠি দ্বারা ইউসুফ ফকিরকেপিঠে সজোরে একটি আঘাত করিয়া বসিলেন। ইউসুফ ফকির আঘাত প্রাপ্ত হইয়া পড়িয়া গেলেন নূরী শাহ্ বাবা ভিতরে চলিয়া গেলেন। ইউসুফ ফকির একদিকে মুর্শিদের আওলাদকে বাধা দেওয়া এবং তাহার সহিত তর্ক করায় অপরাধ হইয়াছে মনে করিয়া কাঁদিতে লাগিলেন। অন্যদিকে মুর্শিদের আদেশও সঠিক ভাবে পালন করা হইলনা বলিয়া বিহ্বল হইয়া পড়িলেন। এই রূপ সাত-পাচ ভাবিতে ভাবিতে তাহার অপরাধ বোধ ও ক্রন্দনের মাত্রা আরও বাড়িয়া গেল। এই মুহুর্তে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা কোন রকম তাঁহার পাঞ্জাবি চাড়াইতে দ্বারে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আসিয়াই ইউসুফ ফকিরকে উদ্দেশ্য করিয়া হাঁক মারিলেন, “কিরে ইউসুফ কাদিস কেন? আমার পিঠের দিকে পাঞ্জাবী তুলিয়া দেখ!” ইউসুফ ফকির পাঞ্জাবী তুলিয়াই দেখিলেন নূরী শাহ্ বাবা যে আঘাতটি তাহার পিঠে করিয়াছিল সেই আঘাতের দাগটি দয়াল সুরেশ্বরীর পৃষ্ঠ মোবারকে স্পষ্ট ফুঠিয়া রহিয়াছে। মুর্শিদের নেক নজর, করম এবং তাঁহার দয়ার চরম নজির দেখিয়া ইউসুফ ফকির তাহার সমস্ত দুঃখ ব্যথা ভুলিয়া গেল।
শিবপুর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী আব্দুল্লা মুন্সী ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খলিফা। বৃহত্তর বরিশালের ভোলা তজুমুদ্দিন থানার শিবপুর গ্রামে তাহার পবিত্র মাজার শরীফ অবস্থিত। রানীগঞ্জের ফরাজী বাড়ীতে জনৈক মুরিদের বাড়িতে হযরত সুরেশ্বরী বাবা সফরে গেলে আব্দুল্লহ্ মুন্সী সাহেব তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যান। তিনি যখন কথিত মুরিদের বাড়িতে পৌছান তখন সুরেশ্বরী বাবা বাহ বাড়িতে গাছের ছায়ায় চেয়ারে উপবিষ্ট হইয়া বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায়, আব্দুল্লাহ্ মুন্সী সেখানে আসিয়া পৌছাইলে ২০/২৫ হাত দূর হইতেই সুরেশ্বরী বাবা তাহার প্রতি জ্বালওয়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করতঃ তাওয়াজ্জুহ প্রদান করিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বেহুস বেকারার হইয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িলেন। অতঃপর জ্ঞান ফিরিয়া আসিলে সুরেশ্বরী বাবার নিকট বায়াত গ্রহণ করতঃ নিজেকে মুর্শিদের খেদমতে সঁপিয়া দিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ মুন্সী “পাংকি শাহ্ ফকির” নামেই সমধিক পরিচিত।
উত্তর গাও আমিরিয়া পাক দরবার শরীফ
হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী আমির উদ্দিন মুন্সি ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার প্রিয় মুরিদ ও খলিফা। শ্রীনগর থানাধীন উত্তর গাও গ্রামে তাহার পবিত্র মাজার শরীফ অবস্থিত। তিনি সবসময় মস্তকের চুল বড় রাখিতেন। কথিত আছে, একবার স্থানীয় আলেম ওলামা তাহাকে বিদ্আতি আখ্যা দিয়া জোর পূর্বক তাহার কেশ কর্তন করে। এই ঘটনায় তিনি মনে প্রচন্ড আঘাত পান এবং নিজ মুর্শিদ ক্বিবলা বাবা সুরেশ্বরীর খেদমতে যাইয়া অশ্রু বিসর্জন করতঃ ঘটে যাওয়া ঘটনার আনুফ’র্বিক বর্ণনা দেন। সুরেশ্বরী বাবা পূনরায় তাহাকে চুল রাখিতে উপদেশ দান করেন। কিছু কাল পরে পূনরায় তিনি চুল রাখিয় জলী যিকিরে মশগুল হইলে পূর্বোক্ত আলেম ওলামাগণ তাহার চুল কাটিয়বার জন্য পাকড়াও করিয়া আনে।তাহার চুলগুলি টেবিলের উপর ফেলিয়া কাটিতে উদ্যত হইলে চুলগুলো হইতে আল্লাহ্ আল্লাহ্ যিকির জারী হইয়া যায় এবং চুলগুলি টেবিলের উপর লাফাইতে থাকে। এতদ্দর্শণে উপস্থিত আলেম ওলামাগণ বিস্ময় প্রকাশ করিয়া তাহার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা মাওলানা আমির উদ্দিন মুন্সীকে “আমির আলী” বলিয়া সম্বোধন করিতেন। বংলা ১৩৫৭ সালের ১৭ ই চৈত্র রোজ রবিবার ইহধামের মায়া ত্যাগ করিয়া বেছালহক্বলাভ করেন।
খাসমহেশ পুর পাক দরবার শরীফ
বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী মফিজ উদ্দিন আকন বরগুনা জেলার বেতাগী থানাধীন গ্রেদ লক্ষিপুর গ্রামে বিখ্যাত এক আলেম পরিবারে বাংলা ১২৬৫ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁহার পিতার নাম মাওলানা মোঃ ছলিম উদ্দিন আকন।
তিনি ব্যক্তি জীবনে কঠোর ভাবে জাহেরী শরীয়তের বিধি-বিধান পালন করিতেন এবং এলাকার অন্যায়-অনাচারের বিচার-আচার করিতেন। প্রচলন আছে যে, কেহ নামাজ আদায় না করিলে তাহাদের বাড়িতে তিনি পানাহার করিতেন না। দ্বীনি শিক্ষা ও ইসলামী গবেষনায় লিপ্ত তাঁহার হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রাপ্তির বাসনা জাগ্রত হওয়ায় কামেল পীরের সন্ধান করিতে থাকেন। তখন পূর্ববঙোগ আউলিয়া সর্দার বেলায়েতের মধ্যমনি মহান অলি হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) বহাস ও জ্বিহাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার ইসলাম প্রচারে ব্যস্ত। আল্লাহ্ পাকের অপার মহিমায় তিনি বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা বা’বা (রাঃ) সন্ধান পাইয়া তাহার শিষ্যত্ব গ্রহন করতঃ ১২ বৎসর মোর্শেদের সংগ ও সাধনায় অতিবাহিত করিবার পর বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাহাকে খেলাফত প্রদান করিয়া নিজ এলাকায় ইসলাম প্রচারের আদেশ প্রদান করেন। তিনি নিজ এলাকায় জলি-যিকির এবং গান-বাজনার মাধ্যমে ধর্ম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) তাহাকে “দক্ষিনা মুন্সি” বলিয়া ডাকিতেন।১৩৩৪ সনের ৯ই কার্তিক বিকাল ৫ ঘটিকার সময় ভক্তবৃন্দ ও আত্মীয় স্বজনকে শোক-সাগরে ভাসাইয়া ইহলোক ত্যাগ করিয়া পরলোক গমন করেন।
দাইপুর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী আব্দুর রাজ্জাক ওরফে কালা শাহ্ (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা। তিনি সাত/আট বছর বয়সে সুরেশ্বরে আগমন করেন। পিতৃমাতৃহীন কালা শাহ্ ৫/৬ বছর বয়সে এক অলৌকিক ঘটনার মাধ্যমে মজ্জুব হালাতে দিনাতীপাত করেন। তিনি কলিকাতার বর্ধমান জেলার হযরত সূফী সাহেবের নিকট থাকিতেন। এই অবস্থায় দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি খাবার হিসাবে পান্তাভাত ও পোড়া মরিচ খাইয়া অতিবাহিত করিয়াছেন। দরবারের খেদমত শরীফে থাকিয়াই তিনি প্রচন্ড অসুস্থ হইয়া পড়েন এবং হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নেক নজর লাভ করেন। অবশেষে তাহাকে বায়াত করিয়া খোফত দাত করতঃ নিজ গ্রামে যাইয়া ত্বরিকতের খেদমতে আত্মনিয়োগ করিতে নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত কালা শাহ্ (রাঃ) এর জীবনে অসংখ্য কারামত প্রকাশ পাইয়াছে। বাংলা ১৩৬৯ সালের ২ রা জৈষ্ঠ্য এই মহান অলী বেছাল হক্ব লাভ করেন। তাহার মাজার শরীফ ধীরাই, সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত।
কুসুমপুর পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী গণি মুন্সী (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অন্যতম বিশিষ্ট খলিফা। দরবার শরীফ প্রাঙ্গনে সুরেশ্বরী ক্বিবলা ইট-পাথরের যাহা কিছু নির্মাণ করিয়াছেন তাহার সবই হযরত গণি মুন্সী সাহেব তাহার ভাগ্নে এবং পালকপুত্র মোঃ রহমান দেওয়ানকে সঙ্গে লইয়া করিয়াছেন। হযরত গণি মুন্সী সাহেবের বেছাল হক্ব এর পর তাহার পালকপুত্র মোঃ রহমান দেওয়ান অসমাপ্ত কাজ গুলি সমাপ্ত করেন। হযরত গণি মুন্সী (রাঃ) ছিলেন অত্যন্ত সুকন্ঠের অধিকারী। বাবা সুরেশ্বরী তাহার কন্ঠের গান খুব পছন্দ করিতেন। হযরত গণি মুন্সী (রাঃ) বাংলা ১২৮৯ সালের ১২ই ভাদ্র মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাধীন কুসুমপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
হযরত শাহ্ সূফী গণি মুন্সী (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বে তাহার সন্তানদেরকে অছিয়ত করিয়া যান যেন কবরে তাহাকে ইত্তর সিথানে না রাখা হয় কারণ দক্ষি দিকে তাহার মুর্শিদ ক্বিবলা বাবা সুরেশ্বরীর পবিত্র রওজা মোবারক। মুর্শিদের প্রতি সম্মানার্থে এবং বেয়াদবির কুফল হইতে রক্ষা পাইবার জন্য এই অছিয়ত করিয়া যান। তখনকার সময়ে স্থানীয় বাহ্যদর্শী কেতাবী মুন্সি মাওলানা হযরত গণি মুন্সির ইপর প্রচন্ড ক্ষ্যাপা ছিল। কারণ বাহেছে কোন দিনই তাহারা পারিয়া উঠে নাই এমতাবস্থায় তিনি বেছাল হক্ব লাভ করিলে অছিয়ত অনুযায়ী আত্মীয় ও সন্তানগণ দাফন করিতে গেলে বিপত্তি দেখা দেয়। শরিয়তের বরখেলাপ করা চলিবেনা বলিয়া মোল্লা মুন্সির দল নিজেরাই হযরত শাহ্ সূফী গণি মুন্সী (রাঃ) দেহ মোবারক উত্তর সিথান করিয়া কবরে নামায়। এই সময়ে দক্ষিণ দিক হইতে আলু থালু বেশে এক পাগল চিৎকার করিয়া ছুটিয়া আসিয়া হুকুম করিয়া বসে, “দাড়াও! শেষ বারের মত আমাকে এক নজর দেখিতে দাও”। তাহার ভীষণ অবস্থা দেখিয়া মোল্লা মুন্সি যাহারা দেহ মোবারকের সহিত কবরে নামিয়া ছিল তাহারা বিনা বাক্য ব্যয়ে উত্তর দিকের চেহারা মোবারকের কাফনের কাপড় খুলিয়া দিল। কিন্তু আল্লাহ্র কি মহিমা মোল্লা মুন্সির দল দেখিল যে হযরত শাহ্ সূফী গণি মুন্সী (রাঃ) চেহারা মোবারকের পরিবর্তে চরণ মোবারক দুইখানী সেখানে শোভা পাইতেছে। এতদ্দর্শনে তাহারা সকলে ভয় পাইয়া গেল এবং অছিয়ত অনুযায়ী ঐভাবেই দাফন সারিয়া কৃত বেয়াদবির জন্য অনুতপ্ত হইল। মুর্শিদের রাহে জীবনের সবটুকু সময় কাটিয়া দেওয়া এই মহান অলী অজস্র ভক্তকুল রাখিয়া বাংলা ১৩৫২ সালের ১২ই ভাদ্র বেছাল হক্ব প্রপ্তি হন।
শম্ভুকাঠি পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী ইউসুফ আলী দরবেশ (রাঃ) ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা। তিনি ডামুড্যা থানাধীন পূর্বডামুড্যা ইউনিয়নের শম্ভুকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার মুর্শিদ হয়রত সুরেশ্বরী বাবার খেদমতে আওশক ভক্তদের সঙ্গে লইয়া পবিত্র উরস শরীফে তিনি সবসময় আগমন করিতেন।এমনি একবার দরবারে আসিবার নিয়তে সঙ্গি সাথি সমেত ইউসুফ আলী দরবেশ নৌকা যোগে রওয়ানা হইলেন্ সকাল হইতেই সেইদিন প্রচন্ড বাতাস বহিতেছিল্ এই অবস্থায় পদ্মা পাড়ি দিয়া ঠিক হইবেনা বলিয়া এলাকার মজিদ আলী সর্দার, আজিদ আলী সরদার সহ অনেকেই নিষেধ করিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা। দরবার শরীফের উরসে তাহাকে যোগ দিতেই হইবে। তাই কাহারো নিষেধ না মানিয়া ইউসুফ আলী দরবেশ মুর্শিদের শ্রীচরণ স্মরণ করিয়া রওয়ানা হইলেন। পদ্মায় আসিয়া বাতাসের গতি অত্যন্ত তীব্র হইল। নৌকাটিকে আর রক্ষা করা যায় না দেখিয়া তিনি মুর্শিদের স্মরণে চিৎকার করিয়া বলিলেন, “হে দয়াল সুরেশ্বরী! তোমার পবিত্র উরস শরীফে যাইবার জন্য যদি আমার আশেক ভক্তদের লইয়া পদ্মায় ডুবিয়া মরিতে হয় তোমার পবিত্র নামের কলঙ্ক হইয়া যাইবে”। এই বলিয়া নৌকার ভিতরেই সিজদায় পড়িয়া গেলেন।
এদিকে সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা তাঁহার কতিপয় ভক্ত ও মুরিদদের লইয়া দরবার প্রাঙ্গনে সেই সময়ে উরস সংক্রান্ত আলোচনায় রতছিলেন। ইউসুফ আলী দরবেশ নিরাপদে দলবল সমেত সুরেশ্বরী বাবার পদপ্রান্তে হাজির হইলে তিনি তাঁহার হস্তস্থিত লাঠি দ্বারা ইউসুফ আলী ফকিরেকে মারিতে শুরু করেন। সমবেত সকেেল সুরেশ্বরী বাবার নিকট ইউসুফ আলী দরবেশের পক্ষ হইয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিলে তাঁহার রাগ দমন হয় এবং পরিশেষে সকলকে দ্বায়রা শরীফে যাইবার নির্দেশ প্রদান করেন। উপরোক্ত ঘটনা ছাড়াও হযরত শাহ্ সূফী ইউসুফ আলী দরবেশ (রাঃ) অসংখ্য কারামত স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের নিকট শোনা যায়। সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার এই মহান অলি অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রাখিয়া বাংলা ১৩৬০ সনের ২৪শে পৌষ বেছাল হক্ব প্রপ্তি হন।
গোয়ালপাড়া পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী বশির শাহ্ (রাঃ) হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার খলিফা ছিলেন। মুর্শিদের প্রতি নির্বাণ হয়ে যাওয়া এই মহান খলিফাত্বরিকায়ে সুরেশ্বরীয়া প্রচারের নিমিত্তে ওদশ বিদেশে ছফর করিয়া বেড়াইতেন। অবশেষে তিনি ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া নামক স্থানে “খানকায়ে সুরেশ্বরীয়া” প্রতিষ্ঠিত করিয়া স্থায়ীভাবে ত্বরিকত প্রচারে লিপ্ত হন।
আজও গোয়াল পাড়া হইতে অসংখ্য ভক্ত মরিদান সুরেশ্বর দরবার শরীফের পবিত্র উরস সমূহে হাজিরা দিয়া থাকে। ত্বরিকত প্রচারের নিমিত্তে বশির শাহ্ (রাঃ) অসংখ্যবার কারামত প্রকাশ করিয়াছিল। তাঁহার মুর্শিদ হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মত তিনিও আপন ভক্তদের সুখে দুঃখে দয়ার হাত প্রসারিত করিয়া দিতেন। শোনা যায়, এক বার মুন্সীগঞ্জে তাঁহার এক ভক্তের বাড়িতে আগুন লাগিলে তিনি নারায়নগঞ্জে বসিয়া পানি ছিটানোর মাধ্যমে সেই আগুন নিভাইয়া দেন। উক্ত মুরিদ অলৌকিক ভাবে আগুনের হাত হইতে রক্ষা পাইলে মুর্শিদের নিকট শুকরিয়া আদায় করিতে আসেন এবং আসিয়া মুর্শিদের এহেন রহমতের কথা জানিতে পারেন। বাংলা ………….সনের ১৫ই বৈশাখ অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদানদের শোক সাগরে ভাসাইয়া বেছাল হক্ব লাভ করেন।
নিতিরা সিরাজিয়া পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী সিরাজুল হক নূরী (রাঃ) ছিলেন সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদ ও খলিফা। তিনি বাংলা ১২৭৫ সালে শরিয়তপুর জেলাধীন নড়িয়া থানার অন্তর্গত নিতিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৪০ বৎসর বয়সে হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট বায়াত গ্রহণ করিয়া মুর্শিদের খেদমতেই অধিকাং সময় কাটান। তিনি কাশ্ফিয় শক্তির অধিকারী ছিলেন। ত্বরিকত প্রচারের সময়ে তাহার অসংখ্য কারামত প্রকাশ পাইয়াছিল।
ডুহুরী, নোয়াপাড়া নিবাসী মোঃ লুহাই উকিল এবং তাহার পরিবার ছিল হযরত সিরাজুল হক নূরীর আশেক ও ভক্ত। উকিল সাহেব একবার ভীষণ অসুস্থ হইয়া পড়েন। ছয় মাসের বেশী তিনি কঠিন জ্বরে ভুগতেছিলেন। এমতাবস্থায়ই একবার সিরাজুল হক নূরী (রাঃ) তাহার বাড়িতে তাশরীফ আনেন। উকিল সাহেবের স্ত্রী হযরত সিরাজুল হক নূরী (রাঃ) নিকট তাহার স্বামীর রোগ আরোগ্য জন্য দোয়া চাইলেন। উকিল সাহেবের স্ত্রীর কান্নাকাটিতে তাহার মনে দয়ার উদ্রেক হইল। সেই চৈত্র মাসের দুপুরে তিনি তাহার গায়ের উপর সাতখানা কাথা চাপা দিয়া শুইয়া পড়িলেন। উপস্থিত যাহারা ছিল তাহারা সকলেই দেখিতে পাইল যে, কাথার নীচে হযরত সিরাজুল হক নূরী (রাঃ) কাঁপিতেছেন। দীর্ঘ সময় পরে তিনি স্বাভাবিক হইয়া ঘোষণা করিলেন আর কোন ভয় নাই দয়াল সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার পক্ষ হইতে তাহার হায়াত বাড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে। অতঃপর তিনি উকিল সাহেবকে ঠান্ডা পানিতে গোসল এবং পান্তা ভাত খাইতে নির্দেশ করিলেন। ইহার দিন কয়েকের মধ্যেই তিনি সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করিলেন এবং ১১২ বৎসর হায়াত লাভ করিয়াছিলেন। অসংখ্য আশেক, ভক্ত এবং মুরিদ রাখিয়া সুরেশ্বরীয়া ত্বরিকার এই মহান অলি ৮৫ বৎসর হায়াত শরীফ লাভ করিয়া বাংলা ১৩৬০ সালের ১৯শে ভাদ্র বেছাল হক্ব প্রাপ্ত হন।
নারিশা পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ আব্দুল মাস্তান (রাঃ) সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অতিপ্রিয় মহিলা ভক্ত ছিলেন পূণ্যাত্মা মরিয়ম বিবি। হযরত শাহ্ আব্দুল মাস্তান (রাঃ) তাহারই গর্ভজাত যোগ্যতম উত্তরসূরী ও হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার প্রাণ প্রিয় রূহানীয়াত নাতি। ঢাকা জেলার দোহার থানাধীন নারিশা গ্রামে তাঁহার পবিত্র মাজার শরীফ রহিয়াছে। বাংলা ১৩৯৭ সনের ১৬ই অগ্রহায়ণ অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ রাখিয়া এই মহান অলী বেছাল হক্ব প্রপ্তি হন।
চাঁনখারপুল পাক দরবার শরীফ
হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ করিম শাহ্ মস্তান (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার প্রাণ প্রিয় রূহানীয়াত নাতি। তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত মজ্জুব হালাতে কাটাইয়া গিয়াছেন। তিনি সবসময় পোষাকহীন অবস্থায় থাকিতেন। অসংখ্য কারামতের অধিকারী করিম শাহ্ মস্তান (রাঃ) ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার ফকিরাপুল এলাকার কুতুব এর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ইহা সর্বজনের জ্ঞাত যে, পাক হানাদার বাহিনী যখন ফকিরাপুল এলাকায় বাঙ্গালী নিধনে নিয়োজিত হয় তখন করিম শাহ্ মস্তান (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে একজন পাকিস্তানি অফিসার তাহার রিভলবার থেকে মস্তান সাহেবকে লক্ষ্য করিয়া পর পর নয়টা গুলি ছুড়িয়া ছিলেন। প্রত্যেকটা গুলির আওয়াজ শুনিয়া তিনি শুধু মুখে বলিতেন ডাইনে যা, বায়ে যা, উপরে যা, নীচে যা এইভাবে উপস্থিত সকল মানুষ এবং পাকিস্তানি অফিসার আশ্বর্য হইয়া দেখিলেন যে, একটা গুলিও তাহাকে আহত করিতে পারে নাই। অতঃপর পাকিস্তানি সেনারা তাহার সম্মানে ফকিরাপুল এলাকা হইতে চলিয়া যায়।
সিং পাড়া পাক দরবার শরীফ
হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার সুরেশ্বরীয়া সিলসিলায় মুরিদের পুত্র এবং রূহানীয়াত নাতি হযরত চাঁন শাহ্ মাস্তান (রাঃ) অত্যন্ত জজ্বাধারি খেয়ালী প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। পাগল হালাতে দেশ-দেশান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইয়ছেন জীবনের অধিকাংশ সময়। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে তিনি সিংপাড়া নামক স্থানে আসিয়া জীবনের শেষ দিনগুলি অতিবাহিত করিয়া ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তাহার অসংখ্য কারামত প্রকাশ পাইয়াছে। হিজরী ৫ই রজব অসংখ্য ভক্তক’ল রাখিয়া ইহধাম ত্যাগ করেন।
হযরত শাহ্ রব্বানী শাহ্ (রাঃ)
হযরত শাহ্ সূফী রবাবানী শাহ্ ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার মুরিদের মুরিদ। তিনি হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার জৈষ্ঠ্য জামাতা শাহ্ সূফী মাওলানা ইসমাইল সাহেবের তৃতীয় পুত্র তাহার সহধর্মিনী সাইয়েদা সম্রাজ বেগম ছিলেন হযরত কালা শাহ্ (রাঃ) এর অত্যন্ত জজ্বাধারী কন্যা রত্ন। তিনি তাহার মুর্শিদের নিকট হইতে খেলাফত লাভ করিবার পর ত্বরিকত প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার অত্যন্ত আশেক ও ভক্ত রব্বানী শাহ্ সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ত্বরিকতের জয় নিশান উড়াইয়াছেন। তিনি ত্বরিকতের পক্ষে বাহাছ করিতে গিয়া অসংখ্যবার কামামতের আশ্রয় লইয়াছেন।
হযরত শাহ্ সূফী করিম শাহ্
হযরত শাহ্ সূফী করিম শাহ্ (রাঃ) ছিলেন হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বা (রাঃ) এর বিশিষ্ট মুরিদ ও খলিফা। তিনি অল্প বয়সেই হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার নিকট বায়াত গ্রহণ করেন। ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানাধীন গোলজার বাগ গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত শাহ্ সূফী করিম শাহ্ (রাঃ) অল্প সময়ের মধ্যেই কামালিয়াত হাসিল করেন। জানা যায়, তাহার বেছাল হক্ব লাভ করিবার পর তাহার বিশিষ্ট মুরিদ চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ, চরভাগল নিবাসী মোঃ ফজল মিয় সাহেবকে স্বশরীরে দর্শন দান করিয়াছেন। আজীবন মুর্শিদের খেদমতে নিয়োজিত থাকিয়া সুেেরশ্বরী ত্বরিকার এই মহান অলি বেছাল হক্ব লাভ করেন।
No comments:
Post a Comment